করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ

৩ দিনে নিবন্ধন মাত্র ১২ হাজার

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশের মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ থাকলেও এজন্য নিবন্ধনে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। গত তিনদিনে মাত্র ১২ হাজার টিকাপ্রত্যাশী নিবন্ধন করেছেন।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর পরই অ্যাপ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছিল। তবে এখনো চালু হয়নি সুরক্ষা অ্যাপ নিবন্ধনের জন্য শুধু ওয়েবসাইটের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে টিকাপ্রত্যাশীদের। অবস্থায় ওয়েবসাইটের জটিলতায় নিবন্ধন কম হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আরো ৫৪১ জনকে টিকা দেয়া হয়। উদ্বোধনের দিন বিকাল থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে সুরক্ষা অ্যাপ সুরক্ষা ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে ওয়েবসাইট খুলে দেয়া হলেও উন্মুক্ত হয়নি মোবাইল অ্যাপ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুরক্ষা নামে গুগলে অন্য একটি অ্যাপ রয়েছে, তাই সরকারের অ্যাপটি উন্মুক্ত হতে সময় লাগছে। তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের অ্যাপটি দুই-তিনদিনের মধ্যে গুগল প্লে-স্টোরে দেয়া হবে। এরপর গুগলের রিভিউ শেষে উন্মুক্ত হবে। কোনো সমস্যা না হলে সপ্তাহের শেষ সময় নাগাদ অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। শুধু ওয়েবসাইটনির্ভর হওয়ায় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী সুখেন্দু শেখর রায় বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাপের বিষয়টি তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ দেখাশোনা করে। এতে আরো সময় লাগবে। ওয়েবসাইটেও কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১২ হাজার টিকাপ্রত্যাশী নিবন্ধন করেছেন। স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশসহ অন্যান্য সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধারা ছাড়া প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছর বয়স-ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বদের নিবন্ধন শেষ হলে কো-মরবিডিটিতে (দীর্ঘমেয়াদি রোগ) আক্রান্তরা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।

টিকা ব্যবস্থাপনা বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) ডা. সামসুল হক জানান, প্রথম পর্যায়ে রাজধানীতে ৪৯টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৬১৩টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এসব কেন্দ্রে হাজার ৯৯০টি দল কাজ করবে, যাদের মধ্যে দুই টিকাদানকারী এবং চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। পরীক্ষামূলক টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যা দেখা না গেলে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এরই মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে ৩৬ জেলায় টিকা পাঠিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। গতকাল টিকা পাঠানো বন্ধ ছিল। শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি জেলার সিভিল সার্জনের কাছে নির্দিষ্টসংখ্যক টিকা পৌঁছে দেয়ার পর তা উপজেলাসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেয়া হবে। প্রতিদিন সারা দেশে দুই লাখ করে প্রথম মাসেই ৬০ লাখ টিকা প্রয়োগ করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বণিক বার্তাকে বলেন, অ্যাপ খুব দ্রুতই চালু হয়ে যাবে। শুধু ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হচ্ছে যাতে নিবন্ধনের সংখ্যাটা কম। খুব দ্রুতই নিবন্ধন বাড়বে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমাদের প্রস্তুতি শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুতকৃত যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড তিন কোটি ডোজ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর আগে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড বাংলাদেশকে উপহার পাঠায় ভারত সরকার। বাংলাদেশের হাতে এখন শুধু টিকাই রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন