গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রসরকারের সম্মাননা পাচ্ছেন বাংলাদেশী জাহিদ হাসান

বণিক বার্তা অনলাইন

পদার্থবিদ্যায় অনন্য গবেষণার জন্য বাংলাদেশী বিজ্ঞানীকে সম্মানিত করছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয় (ডিওই)।  বিখ্যাত প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইউজিন হিগিনস প্রোফেসর অব ফিজিক্স এম জাহিদ হাসানকে দেয়া হচ্ছে আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্স অ্যাওয়ার্ড।

গতকাল বুধবার (১৩ জানুয়ারি) প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয় সাধারণত তাদেরকেই এই সম্মাননাটি দেয় যেসব মার্কিন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের অনন্য গবেষণা দেশের অর্থনীতি ও জ্বালানি নিরাপত্তার উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখে।  এবছর ১২ জনকে এই সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অধ্যাপক জাহিদ হাসান একজন।  গত ১২ জানুয়ারি জ্বালানিমন্ত্রী ড্যান ব্রিলেট তাদের নাম ঘোষণা করেন।

১৯৫৯ সাল থেকে এই সম্মাননাটি দেয়া হচ্ছে।  নোবেলজয়ী মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী আর্নেস্ট অরল্যান্ডো লরেন্সের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে।  লরেন্স সাইক্লোট্রন আবিষ্কার করেন, যা মূলত অতিপারমাণবিক কণার এক ধরনের ত্বরক (অ্যাক্সিলারেটর)। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৩৯ সালে তাকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল দেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা তৈরিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।  তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গবেষণাগার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে এই সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জাহিদ হাসান বলেন, আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। লরেন্স ছিলেন আমার অন্যতম নায়ক। লরেন্সের সাইক্লোট্রন আবিষ্কার আধুনিক উচ্চ শক্তির অ্যাক্সিলারেটর প্রযুক্তির পথ দেখিয়েছে।  কোয়ান্টাম কণার দশা বুঝতে আমি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করি।  আমি সেই সঙ্গে লরেন্স বারকেলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরির প্রতি কৃতজ্ঞ।  এই দুই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় যে গবেষণা করতে পেরেছি তারই কল্যাণে আজ এই সম্মাননা পেলাম।

জাহিদ হাসানের গবেষণা পদ্ধতি বস্তু ও নতুন ফার্মিওনিক কোয়াসিপার্টিক্যালের দশা বুঝতে দারুণভাবে কাজে লাগে।  এই অবদানের জন্যই তাকে সম্মানিত করছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

যে ১২ জন এবার লরেন্স অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন তারা প্রত্যেকে জ্বালানি মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত একটি সনদ, লরেন্সের মুখাবয়ব খচিত একটি স্বর্ণের মেডেল এবং নগদ ২০ হাজার ডলার পাবেন।

বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী এম জাহিদ হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ইউজিন হিগিনস অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

অ্যাডভোকেট রহমত আলী ও গৃহিণী নাদিরা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জাহিদ সবার বড়। ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে এসএসসিতে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৮৮ সালে এইচএসসিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন জাহিদ।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইনভার্গের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ নিতে জাহিদ ভর্তি হন অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পদার্থবিজ্ঞান থেকে স্নাতক হয়ে পরে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। পিএইচডি করার সময় জাহিদ বের করেন কঠিন বস্তুর মধ্যে ইলেকট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যা বের করার কৌশল। এই সময় তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর আমন্ত্রণ পান।

সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে একসময় জাহিদ হাসান বলেছিলেন, আমি একটা বক্তৃতা দিতে গিয়েছি প্রিন্সটনে। বক্তৃতা শেষেই তারা আমাকে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। কোনো জীবনবৃত্তান্তও তৈরি ছিল না। পিএইচডিও শেষ হয়নি। 

এরই মধ্যে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন