বিশ্ব নগর দিবস ২০২০

নগর পরিকল্পনায় থাকতে হবে মানুষের প্রাধান্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

বর্তমান নগর পরিকল্পনায় মানুষকে অগ্রাহ্য করে বাণিজ্যিক চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহার উপযোগী হয় না এবং মানুষ সেটি ব্যবহারও করেন না। এতে করে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জলাধার নষ্ট করে ভবন, ফসলি জমির মধ্য দিয়ে রাস্তাঘাট এবং নদী-খাল বিল ভরাট, দখল ও দূষণ করে যে শহর তৈরি করছি তা বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।  দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক পন্থায় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব নগর দিবস পালিত হয়। এ বছর দিবসটির  দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘যত্নে থাকুক নগরবাসী ও শহর’। 

আজ শনিবার বেলা ১১টায় মেয়র অ্যালায়েন্স ফর হেলদি সিটি, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশ, কারফ্রি সিটিস অ্যালায়েন্স এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত আমার শহর, আমার অধিকার শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 

আলোচনা সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও মেয়র অ্যালায়েন্স ফর হেলদি সিটির সদস্য সচিব গাজী কামরুল হুদা সেলিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর পরিকল্পনাবীদ ও স্থপতি খোন্দকার এম আনসার হোসেন। 

সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান।

দেবরা ইফরইমসন বলেন, একটি বসবাসযোগ্য শহর তৈরি করতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয় না। এজন্য প্রয়োজন চিন্তার জায়গা প্রসারিত করা। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই পুরনো সব কিছুকে বাদ দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করি। পুরনো ছোট রাস্তাগুলোকে ভেঙে নতুন করে বড় করছি। নগরকে আধুনিকায়ন করতে গিয়ে আমরা গণপরিসরকে উপেক্ষা করে শপিংমল এবং গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। যার ফলে আমরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর বিনোদনের জায়গা হারিয়ে পেয়েছি যানজট আর দূষণ। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ যান্ত্রিক বাহনকে নিয়ন্ত্রণ করে হাঁটা ও সাইকেলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। হাঁটা এবং সাইক্লিং হলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা কিন্তু আমরা এখনও তা উপেক্ষা করছি।শহরে আশেপাশে যে নদী বা খালগুলো আছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করে গণপরিসরে রূপ দেয়া প্রয়োজন। 

খোন্দকার এম আনসার হোসেন, এক সময় আমরা সাইকেলে এবং হেঁটে যাতায়াত করতাম। সেই মাধ্যমগুলোকে উপেক্ষা করে আমরা গাড়ি নির্ভর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। যার ফলে আমরা শহরকে দূষণের শহর, যানজটের শহর আর অনিরাপদ শহরে রূপান্তর করেছি। উন্নয়নকে আমরা জিডিপি দিয়ে মূল্যায়ন করছি। যেখানে মানুষের মূল্যায়ন নেই। ঢাকা শহরে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ লোকের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে। শুধু এই সংখ্যক মানুষের জন্য নগর উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা সাধারন মানুষের অধিকারকে ক্ষুন্ন করছি। আমাদের এলাকা ভিত্তিক উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। 

গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, জীবনের মান বাড়াতে গিয়ে আমরা আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করে শহরগুলোকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলছি। নগর পরিকল্পনায় যান্ত্রিক বাহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব বাহন সাইকেলকে আমরা উপেক্ষা করছি। এর ফলে নগরে যেমন যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশাপাশি শহর দূষিত হচ্ছে। নগরীর মানুষকে মূল্যায়ন করে প্রাণ-প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে  আমাদের নগর পরিকল্পনা করতে হবে তবেই নগর হবে বসবাস উপযোগী। এজন্য কর্পোরেশন বা পৌরসভার স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

গাউস পিয়ারী বলেন, সামাজিকীকরণ এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের নগর পরিকল্পনায় কাজ করতে হবে। মানুষের চাহিদা এবং মানুষ কিভাবে ভালো থাকবে মানুষের অধিকার কিভাবে নিশ্চিত হবে সেই বিষয়গুলোকে পরিকল্পনায় প্রাধান্য দিতে হবে। যান্ত্রিক যানবাহনের চেয়ে সাইকেল এবং হাঁটার ওপরে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনে ছুটলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত  হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন