বিডিবিএল ভবনে অগ্নিকাণ্ড

বিকল্প সার্ভার দিয়ে সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করেছে সিডিবিএল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ভবনে গতকাল সকাল পৌনে ৭টার দিকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ভবনটির ১৮ তলায় অবস্থিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) প্রধান সার্ভারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারে থাকা বিকল্প সার্ভারের মাধ্যমে সমস্যা ছাড়াই পুঁজিবাজারের সেটেলমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পেরেছে সিডিবিএল।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা) দেবাশীষ বর্ধন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। আর যে সময়ে আগুন লেগেছিল, সে সময় ভবনটির অন্যান্য অফিস বন্ধ থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

জানা গেছে, সকালে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পর ভবনটির পেছনের দিকে ঝুলতে থাকা বিভিন্ন ইন্টারনেট ডিশ লাইনের তারের সঙ্গে আগুন নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তবে কারো মতে, আগুন নিচ থেকে সূত্রপাত হয়ে ওপরের দিকে চলে গেছে।

সিডিবিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডে বাহ্যিকভাবে প্রধান সার্ভারের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ধোঁয়ার কারণে সার্ভারে কার্বন জমে গেছে। তাছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ছিটানো পানি সার্ভার রুমেও প্রবেশে করেছে। কারণে প্রধান সার্ভারটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিকল্প সার্ভারের মাধ্যমে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই সেটেলমেন্টের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভ্র কান্তি চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আগুনে সরাসরি প্রধান সার্ভারের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ধোঁয়া তাপের কারণে সার্ভারের ওপর কী প্রভাব পড়েছে, সেটি আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। আমাদের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) নেতৃত্বে একটি টিম ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছে। তবে ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারে থাকা বিকল্প সার্ভারের মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। আমাদের সার্ভারে থাকা সব তথ্যই নিরাপদ রয়েছে। যেকোনো দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির প্রস্তুতি হিসেবে আমরা মাঝেমধ্যেই প্রধান সার্ভার বন্ধ রেখে বিকল্প সার্ভারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে দেখতাম যে সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। ফলে পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মোকাবেলায় আমাদের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে।

কম্পিউটারাইজড বুক এন্ট্রি সিস্টেমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ইউনিটের সেটেলমেন্ট স্থানান্তর করে থাকে সিডিবিএল। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব এতে থাকা শেয়ার ইউনিট সিডিবিএলের কাছে গচ্ছিত থাকে। বিনিয়োগকারীরা যেসব শেয়ার ইউনিট কেনা-বেচা করেন, সেগুলো সংশ্লিষ্ট বিও হিসাবে স্থানান্তরের দায়িত্ব সিডিবিএলের ওপর। কারওয়ান বাজারের বিডিবিএল ভবনের কার্যালয়ে থাকা সিডিবিএলের প্রধান ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে রাজধানীর তোপখানার বিজিআইসি টাওয়ারে সিডিবিএলের একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার রয়েছে। এটি প্রধান সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত এবং যুগপত্ভাবে প্রধান সার্ভারের সব তথ্য এখানে আপডেট হয়ে থাকে।

দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ২০০০ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিদেশী ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বীমা কোম্পানি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) অর্থায়নে সিডিবিএল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। দেশের পুঁজিবাজারে কাগুজে শেয়ারের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক শেয়ারের প্রচলন হয় সিডিবিএলের হাত ধরে, ২০০৪ সালে। প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কের সঙ্গে ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্টস (ডিপি), ইস্যুয়ার, ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংযুক্তি রয়েছে। ডিপোজিটরিজ আইন, ডিপোজিটরিজ বিধিমালা, ডিপোজিটরিজ (ব্যবহারকারী) বিধিমালা নিজস্ব বাই লজের মাধ্যমে সিডিবিএলের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন