রংপুরে বন্যায় নষ্ট ২৪ হাজার হেক্টরের ফসল, নতুন আপদ কারেন্ট পোকা

এসএম পিয়াল, রংপুর

কয়েক দফা বন্যায় ২৪ হাজার ৮৪৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার পর রংপুরে নতুন আপদ হিসেবে হাজির হয়েছে বাদামি গাছফড়িং (কারেন্ট পোকা) বন্যায় বেঁচে যাওয়া ধানের জমি আক্রান্ত হওয়ায় কৃষকরা উত্কণ্ঠায় পড়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, নিয়ম মেনে কীটনাশক স্প্রে করলে সহজেই কৃষকরা পোকার আক্রমণ থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে পারবেন। যদিও একাধিক কৃষক বলেছেন, কীটনাশকে কোনো কাজ হচ্ছে না।

২০২০-২১ আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় মোট রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা লাখ হাজার ১৪০ হেক্টর এবং চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫০ টন। ধানের আবাদ হয়েছিল লাখ ১২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে হাজার ২৯৫ হেক্টর বেশি।

কিন্তু কয়েক দফা বন্যায় ২৪ হাজার ৮৪৭ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে টিকে আছে লাখ ৮৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর। বন্যায় টিকে যাওয়া এই ধানে আক্রমণ করছে বাদামি গাছফড়িং।

রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের খামারমোহনা গ্রামের কৃষক সামিউল ইসলাম জানান, তার জমিতে কারেন্ট পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। কীটনাশক দিয়েও কোনো উপকার পাচ্ছেন না। তার জমির অনেক স্থানে ধানের গাছ শুকিয়ে পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার নীচপাড়া এলাকার কৃষক মো. জহিরও একই বিপর্যয়ের কথা জানান।

নীলফামারীর সদর উপজেলার চরাই খোলা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম বসূনিয়া বলেন, তার এলাকায় ধানের জমিতে কমবেশি কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছে। তবে অধিকাংশ কৃষক শুরু থেকে কীটনাশক প্রয়োগ করায় পোকার আক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে অনেক কৃষক দিশেহারা হয়ে জমির ধান রক্ষায় ছুটছেন স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছে। এতে ভুল কীটনাশক প্রয়োগের আশঙ্কা থাকছে। রংপুরের লালবাগহাটের রনজু এন্টাপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, কৃষকরা কারেন্ট পোকা দমনে বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ নিতে তার কাছে আসছেন।

রংপুর সদরের ধাপের হাট এলাকার গুড়াতিপাড়ার কৃষক ফুল মিয়া বলেন, কীটনাশক স্প্রে করা শুরু করেছেন। বর্তমানে পোকা নিয়ন্ত্রণে আছে। আরো কীটনাশক প্রয়োগ করবেন তিনি। তবে এর মধ্যে তার এলাকায় কারেন্ট পোকার পাশাপাশি ধানের গোড়া পচা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নূরপুর ব্লক দেখাশোনা করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। কারেন্ট পোকার আক্রমণ সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেখা গেছে আক্রান্ত অধিকাংশ জমি আগের কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে কারেন্ট পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল বা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, শুরু থেকে আক্রান্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করলে তা সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া অনেক কৃষককে তার জমির অল্প পরিমাণ কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত শুকিয়ে যাওয়া ধান গাছ অপসারণ করে কীটনাশক স্প্রের পরামর্শ দেয়া হলেও তা পালন করেন না। ফলে পরে আফসোস করা ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বন্যার পর ধানে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তবে কারেন্ট পোকার আক্রমণ বেশি। অবশ্য এখন পর্যন্ত পোকার আক্রমণ কৃষকের নিয়ন্ত্রণে আছে।

নীলফামারীর সোনারায় উপজেলার বিএডিসির ভিত্তি আলুবীজ খামারের আবাদকৃত ধানেও কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছে বলে জানান মনিরুজ্জামান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন