১৫ দফা দাবিতে ধর্মঘটে পণ্যবাহী নৌ-শ্রমিকরা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নৌযান শ্রমিক কর্মচারীদের খাদ্যভাতা নির্ধারণ, নিয়োগপত্র প্রদান, সার্ভিসবুক, বিনা কারণে চাকরিচ্যুতি বন্ধ, নদী পথে চাঁদাবাজি বন্ধ, ডাকাতি রোধসহ ১৫ দফা দাবিতে পণ্যবাহী জাহাজে কর্মরত শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও লাগাতার ধর্মঘটে নেমেছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে লাগাতার ধর্মঘট চলার কারণে নদী পথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সরকারি-বেসরকারি শিল্পকারখানায় পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর, মংলা, চট্রগ্রাম, খুলনা, যশোরসহ সব নদী বন্দরে একযোগে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের অর্ন্তভুক্ত বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নসহ নৌ শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের এ ধর্মঘট পালন করছে।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাহাজী ফেডারেশনের শ্রমিকরা। এছাড়া নদীবন্দরে সামনে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী জাহাজ। লোড-আনলোড বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে বসে আছেন লোড-আনলোড শ্রমিকরা।  শুয়ে-বসে সময় পার করছেন তারা, আবার কেউ কেউ মেতে উঠেছেন গল্পগুজব আর লুডু খেলায়।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি, ২০১৯ সালের এই দিনে খাদ্যভাতা নির্ধারণসহ বেশ কয়েটি দফার বাস্তবায়নের দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা আন্দোলন করে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সে সময় সরকার, বিআইডব্লিউটিএ এবং মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধন্ত নেয় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে নৌযান শ্রমিকদের খাদ্যভাতা প্রদান করা হবে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা করোনাসহ নানা অজুহাত তুলে খাদ্যভাতা নির্ধারণ বা প্রদান করেনি। যে কারণে বাধ্য হয়ে লাগাতার ধর্মঘটের আন্দোলনে যেতে হয়েছে, বলছেন শ্রমিক নেতারা। 

তাদের দাবি, জাহাজে একজন শ্রমিক ২৪ ঘন্টা কাজ করেন। কিন্তু যে বেতন দেয়া হয় তা দিয়ে একজন শ্রমিকের সংসার চলে না। তার উপর সেই বেতনও মালিকপক্ষ সঠিক সময়ে পরিশোধ করেন না। 

বাংলাদেশ জাহাজী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, খাদ্য ভাতা একটি মিমাংসিত দাবি হলেও সেই দাবি মানা হচ্ছে না। শ্রমিক নামধারী কিছু দুষ্কৃতিকারীর সঙ্গে মালিকপক্ষ আঁতাত করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। সকল সেক্টরে মালিকরা সুবিধা পেলেও শ্রমিকরা কোন সুবিধা পায় না। নৌপথের শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অবিলম্বে আমাদের ১৫ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে আমাদের ধর্মঘট চলবে।  

নৌযান শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবিগুলো হলো-

 • নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারীদের খাদ্য ভাতা নির্ধারণ করে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে কার্যকর করতে হবে।

• নৌ আইন মেনে ডব্লিউটিসি সিরিয়াল অনুযায়ী সকল চট্টগ্রাম সমুদ্রগামী সকল লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করতে হবে।

• মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, সার্ভিসবুক দিতে হবে

• কথায় কথায় কোন শ্রমিকের চাকরিচ্যুত করা চলবে না 

• দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে তার দায় মাস্টারদেরকে দেওয়া যাবে না। 

• জাহাজে সকল শ্রমিকদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

• নৌযানে কাগজপত্র দেখার নামে নৌ প্রশাসনের সকল হয়রানী জুলুম, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে। 

• ইনল্যান্ড মাস্টার ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় ও ডিপিডিসি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সকল প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং কোর্স চলাকালীন সময়ে নৌযান থেকে শ্রমিকদের ছুটি বাধ্যতামূলক দিতে হবে। 

• নৌযান শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে হবে। 

• কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নৌযান শ্রমিক কর্মচারীদে ১২ লাখ টাকা মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকার কর্তৃক কল্যাণ তহবিল অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি সহজপ্রাপ্য ব্যবস্থা করতে হবে। 

• ভারতগামী নৌযান শ্রমিকদের লোকাল এজেন্টের মাধ্যমে ল্যান্ডিং পাস, সার্ভিস ভিসা ও জাহাজে ফ্রিজিং ব্যবস্থা না থাকায় শ্রমিকদের সুবিধামতো স্থানে দৈনন্দিন বাজারঘাট করার জন্য পারাপারের নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে। 

• বিভিন্ন পয়েন্টে নদীপথে ডাকাতি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। 

• নৌপথে ড্রেজিং ও পর্যাপ্ত বয়াবাতি স্থাপন করতে হবে।

• ৮ ঘণ্টার অধিক কাজের জন্য ওভারটাইম হিসাব করে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।

• ঈদের আগে ও ১ মে শ্রমিক দিবসে নৌযান শ্রমিকদের ছুটি দিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন