অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও সানেমের ওয়েবিনারে আলোচকরা

জনমিতি লভ্যাংশের সুবিধা নিতে গুণগত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের জনমিতি লভ্যাংশের সুবিধা নিতে হলে আরো গুণগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এজন্য যথাযথ কার্যকর প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। তার জন্য বাজেট বরাদ্দ যেমন দিতে হবে, তেমনি বরাদ্দকৃত বাজেট বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গতকাল ইয়ুথ বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক: অ্যান অ্যাপ্রাইজাল শীর্ষক ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।

নীতিনির্ধারক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের কাছে ইয়ুথ বাজেট ফ্রেমওয়ার্ক বা তরুণ-যুবকেন্দ্রিক বাজেট কাঠামোর ধারণা পরিচিত করার লক্ষ্যে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন ইয়াং বাংলার আহ্বায়ক নাহিম রাজ্জাক।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ইশরাত শারমীন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক . সেলিম রায়হানের পরিচালনায় ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ প্যানেলে প্রবন্ধটির ওপর আলোচনা করেন মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন তালুকদার, প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাজীবুল ইসলাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক . ফাহমিদা খাতুন, কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব . মোহাম্মদ ওমর ফারুক, মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোসাম্মত ফেরদৌসী বেগম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা নাজনীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক . আবু ইউসুফ।

সূচনা বক্তব্যে . সেলিম রায়হান ওয়েবিনারটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং তরুণ-যুবদের উন্নয়নের গুরুত্বের ওপর আলোচনা করেন। তিনি জনমিতির লভ্যাংশের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং তরুণ-যুবকেন্দ্রিক বাজেট কাঠামোর মৌলিক কিছু ধারণার ব্যাখ্যা করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ফারাহ কবির তরুণ-যুবদের উন্নয়নে তার এবং তার সংগঠনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ধারণাপত্র যুব জনগোষ্ঠীর সার্বিক জীবন মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সহায়ক হবে। ইয়ুথ বাজেট ফ্রেমওয়ার্ককে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, যুবদের সামাজিক অবস্থা মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ইশরাত শারমীন তরুণ-যুবকেন্দ্রিক বাজেট কাঠামোর ধারণাটি তুলে ধরেন। তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে, সে সম্পর্কে তার মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, বাজেটে নতুন দরিদ্রদের জন্য, বেকারদের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বাজেটে তরুণ-যুবকেন্দ্রিক প্রজেক্টগুলোকে যথেষ্ট সম্প্রসারণ করা হয়নি, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গও উঠে আসেনি। অনানুষ্ঠানিক খাতের বেকার, তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত দরিদ্রদের নিয়ে বাজেটে কোনো আলোচনা হয়নি। এছাড়া শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ যথেষ্ট নয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতটা তরুণ-যুববান্ধব, সেটির একটি মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ২২টি মন্ত্রণালয় বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এগুলোর বাজেটের অর্ধেকের বেশি যুবকেন্দ্রিক নয়। বরাদ্দের মাত্র শতাংশ তরুণ-যুবকেন্দ্রিক বলা যায়।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে . ফাহমিদা খাতুন বলেন, তরুণদের সৃজনশীলতা নেতৃত্ব গুণকে উৎসাহিত করতে হবে। তরুণ-যুব, বেকার তরুণ এবং যে তরুণরা শিক্ষা, চাকরি বা ট্রেনিং কোনো কিছুতেই জড়িত নন, তাদের তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ স্থাপনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষা বাজেটের পুরো বরাদ্দ কার্যত যুবদের জন্যই ব্যয় হয়। তবে দক্ষ যুব গঠনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সময় তিনি এই ধারণাপত্রকে একটি দরকারি সময়োপযোগী উদ্যোগ বলে মত দেন।

অতিরিক্ত সচিব মো. নাজীবুল ইসলাম বলেন, জনমিতি লভ্যাংশের সুবিধা নিতে আরো গুণগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তবে সুবিধা আদায়ে আমরা যেন নাইজেরিয়ার মতো হারিয়ে না যাই, বরং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করতে পারি, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। 

. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, তরুণদের জন্য কারিগরি শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। -সংক্রান্ত বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।

মোসাম্মত ফেরদৌসী বেগম, মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তরুণ-যুবকেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলোর ওপর আলোকপাত করে উপস্থাপিত বাজেট কাঠামোর গুরুত্ব স্বীকার করেন এবং বলেন, শুধু বাজেটই নয়, একটি কর্মপরিকল্পনাও দরকার।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় খুবই জরুরি উল্লেখ করে সমন্বয় সেল গঠনের প্রস্তাব দেন নাহিম রাজ্জাক। তিনি বলেন, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এখনো সে রকম কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি। এজন্য তিনি ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান ইয়ুথ কাউন্সিলের প্রস্তাব করেন।

ধরনের বাজেট কাঠামোর প্রস্তাব পেশ করার জন্য সানেম অ্যাকশনএইডকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আগের চেয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ে উন্নতি হয়েছে। আমরা একযোগে কাজ করতে চাই। আশা করছি, আমাদের সামগ্রিক কাজে ফ্রেমওয়ার্কের একটি প্রতিফলন অবশ্যই আমরা দেখতে পাব।

বাংলাদেশের যুবশক্তিকে উৎসাহিত প্রশংসা করে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় বডি বা তদারকি সেলের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। একই সঙ্গে এটা যেন আবার কোনো আমলাতান্ত্রিক বডি না হয়ে পড়ে, সেই সতর্কতার কথাও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন