সহসাই
যেন
পৃথিবীর
সব
আয়োজন
থমকে
গেছে।
হাতে
সময়
নেই
বলে
দিগ্বিদিক
ছুটে
বেড়ানো
মানুষগুলোর
ঘরে
বসে
অলস
সময়
কাটাতে
কাটাতে
প্রাণ
যায়
যায়
অবস্থা।
করোনার
কারণে
আজ
নিজের
হাত,
পরিচিত
সম্পর্ক,
ভালো
লাগার
স্থান—প্রায়
সবকিছুকেই
বিশ্বাস
করা
দায়
হয়ে
গেছে।
মাস
ছয়েক
আগেও
প্রায়
অদৃশ্য
যে
জীবাণুর
নাম
পর্যন্ত
মানুষ
জানত
না,
আজ
তার
আতঙ্কে
তারা
গৃহবন্দি।
সংক্রমণ
ঠেকাতে
পুরো
বিশ্বের
নানা
আয়োজন,
তবুও
বাড়ছে
আক্রান্তের
সংখ্যা
এবং
মৃত্যু।
সবারই
সরল
প্রশ্ন—কবে
এবং
কীভাবে
মুক্তি
পাব
আমরা
এই
মহামারী
থেকে?
কভিড-১৯-এর এই মহামারী প্রকৃতপক্ষে সারা বিশ্বে একযোগে শেষ হতে হবে। আর তা না হলে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখতে পান বিশ্লেষকরা। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, যেকোনো মহামারী শেষ হওয়ার দুটি পন্থা থাকে। একটি হলো সামাজিকভাবে এবং আরেকটি হলো স্বাস্থ্যগতভাবে (চিত্র ১)।
সামাজিকভাবে একটি
মহামারী
শেষ
হতে
পারে
যখন
মানুষ
এ
সংকটকে
মেনে
নেয়
(আর্থিক অথবা
মনস্তাত্ত্বিক
কারণে)
এবং
সংকটটিকে
কেন্দ্র
করে
মানুষের
মধ্যে
ভয়ভীতি
কমে
যায়।
যেমনটা
বলা
যায়,
দীর্ঘদিনের
এই
লকডাউনে
আমরা
মোটামুটি
সবাই
হাঁপিয়ে
উঠেছি।
আর
তাই
কারণে-অকারণে
অনেকেই
বাইরে
যাওয়া-আসা
করছি।
গত
মার্চে
যখন
নভেল
করোনাভাইরাস
সংক্রমণের
প্রথম
দু-একটি
ঘোষণা
এসেছিল,
তখন
আমরা
যতটা
ভীত
ছিলাম,
এখন
প্রতিদিন
হাজার
হাজার
সংক্রমণ
ও
অনেক
বেশি
মৃত্যুর
ঘোষণা
এলেও
আমাদের
মধ্যে
সেই
ভীতিটা
আর
কাজ
করছে
না।
আর
তাই
সংকটটিকে
সম্ভাব্য
নিয়তি
মেনে
নিয়েই
অনেকে
ঈদের
শপিং
করেছেন
বা
প্রিয়জনদের
সঙ্গে
ঈদের
আনন্দ
ভাগাভাগি
করে
নিতে
শহরে
বা
গ্রামে
ছুটে
গেছেন
বা
যাবেন।
শুধু
বাংলাদেশ
নয়,
বিশ্বের
প্রায়
সব
দেশেই
সব
মানুষের
মধ্যে
এ
ধরনের
প্রবৃত্তি
লক্ষ
করা
গেছে।
অর্থাৎ
মানুষের
মধ্যে
কভিড-১৯
মহামারীর
ভয়
কমে
গেছে
এবং
মানুষ
সংকটটি
মেনে
নেয়ার
পথে
একটু
একটু
করে
অগ্রসর
হচ্ছে।
তবে
সামাজিক
কারণে
নভেল
করোনাভাইরাসের
মহামারীটিকে
মেনে
নিলেও
আমাদের
সামাজিক
আচারে
কিছু
পরিবর্তন
ও
বিধিনিষেধ
(মাস্ক, হাত
ধোয়া
ও
দূরত্ব
ইত্যাদি)
মেনে
চলতে
হবে
যতদিন
পর্যন্ত
না
স্বাস্থ্যগতভাবে
মহামারীর
সংকটটি
পুরোপুরি
দূর
হয়।
স্বাস্থ্যগতভাবে একটি
মহামারী
শেষ
হওয়ার
বেশকিছু
ধাপ
রয়েছে,
যেগুলো
নির্ভর
করে
মহামারীটি
সৃষ্টিকারী
মূলকের
ওপর
এবং
সেটিকে
দমনের
সম্ভাব্য
সক্রিয়
পন্থার
লভ্যতা
ও
কার্যকারিতার
ওপর।
কভিড-১৯-এর
ক্ষেত্রে
বিষয়টি
দুটি
ধাপে
হতে
পারে
যেমন—ক.
ভাইরাসটি
দুর্বল
হয়ে
যাবে
এবং
খ.
ভাইরাসটিকে
ঠেকানো
হবে।
ক. ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে
যাবে: এ বাক্যে
এটি
প্রতীয়মান
হয়
যে
ভাইরাসটি
বর্তমানে
বেশ
শক্তিশালী।
আর
তাই
দেশান্তরে
এটির
নির্মম
তাণ্ডব
আমরা
দেখেছি
এবং
দেখছি।
নভেল
করোনাভাইরাসের
শক্তির
মূল
উৎস
প্রকৃতপক্ষে
এর
স্পাইক প্রোটিনের (s) যেটি আমাদের
দেহকোষের
ACE-2
প্রোটিনের
সঙ্গে
অত্যন্ত
শক্তভাবে
যুক্ত
হয়ে
কোষের
ভেতরে
ঢুকে
পরে।
মানবদেহে
রোগ
সৃষ্টিকারী
অন্যান্য
করোনাভাইরাস
(আরো ৬টি
আছে)
ACE-2
প্রোটিনের
সঙ্গে
এতটা
শক্তভাবে
যুক্ত
হতে
পারে
না।
যেহেতু
বিবর্তনের
ধারায়
নভেল
করোনাভাইরাস
(সার্স কভ-২)
টিকে
থাকার
জন্য
তার
স্পাইক
প্রোটিনের
(s)
বর্তমান
গঠনকে
নির্বাচন
করেছে,
সেহেতু
আশা
করা
যায়
সময়ের
সঙ্গে
সঙ্গে
এই
প্রোটিনের
গঠনে
যে
পরিবর্তন
আসবে,
সেটি
ভাইরাসটির
ACE-২ প্রোটিনের সঙ্গে
যুক্ত
হওয়ার
শক্তি
কমিয়ে
দিতে
পারে।
স্পাইক
প্রোটিনের
(s)
পাশাপাশি
অন্যান্য
প্রোটিনের
গঠনেও
নানা
ধরনের
পরিবর্তন
আসবে,
যেসবের
কারণেও
ভাইরাসের
কার্যকারিতা
হ্রাস
পেতে
পারে।
এরই
মধ্যে
নভেল
করোনাভাইরাসের
জিনোম
সিকুয়েন্সের
প্রাপ্ত
তথ্য
অনুযায়ী
আমরা
সেসব
পরিবর্তনের
কিছু
ইঙ্গিত
পাই।
যদিও
এসব
পরিবর্তনের
ফল
গবেষণা
ছাড়া
এ
মুহূর্তে
ব্যাখ্যা
করা
সম্ভব
নয়।
তবে
প্রকৃতিগতভাবে
কোনো
ভাইরাসই
তার
পোষককে
ঠিক
মেরে
ফেলতে
চায়
না।
অন্যভাবে
বলা
যায়,
সময়ের
সঙ্গে
সঙ্গে
একটি
অপেক্ষাকৃত
দুর্বল
রকমের
ভাইরাস
তার
পোষককে
না
মেরেই
প্রকৃতিতে
টিকে
থাকে।
আশা
করা
যেতে
পারে,
নভেল
করোনাভাইরাসের
(সার্স কভ-২)
ক্ষেত্রেও
এমনটি
হবে।
আর
তাই
বিশ্ব
স্বাস্থ্য
সংস্থার
বক্তব্য
অনুযায়ী
আমরা
হয়তো
কোনো
দিনও
নভেল
করোনাভাইরাস
(সার্স কভ-২)
থেকে
মুক্তি
পাব
না।
তবে
এক্ষেত্রে
বলে
রাখা
ভালো,
আমরা
কিন্তু
ডেঙ্গু,
হাম,
চিকুনগুনিয়া,
ইনফ্লুয়েঞ্জা,
হেপাটাইটিস,
রোটা,
রাইনো
ইত্যাদি
ভাইরাসকে
সঙ্গে
নিয়েই
চলছি
এবং
আমরা
অনেক
সময়
ভুলেও
যাই
তাদের
উপস্থিতি।
খ. ভাইরাসটিকে ঠেকানো হবে:
একটি
ভাইরাসকে
অনেকভাবে
ঠেকানো
যেতে
পারে।
নভেল
করোনাভাইরাসের
ক্ষেত্রে
ঠেকানোর
পন্থাগুলো
হতে
পারে—১.
হার্ড
ইমিউনিটি,
২.
অ্যান্টিভাইরাল
ড্রাগ,
৩.
অ্যান্টিবডি
থেরাপি
ও
৪.
ভ্যাকসিন।
১. হার্ড ইমিউনিটি: সমাজের ৫০-৭০ শতাংশ মানুষের দেহে যখন একটি জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, তখন সেটিকে হার্ড ইমিউনিটি বলা হয়। এটি আসতে পারে ভ্যাকসিন অথবা ইনফেকশনের মাধ্যমে। নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৭০ জন অনেকটা উপসর্গহীন থেকে আর প্রায় ২৪ জন সামান্য উপসর্গ প্রকাশ করে সুস্থতা অর্জন করে (চিত্র ২)। অর্থাৎ বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসা ছাড়াই অথবা সামান্য চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যায় এবং নিজেদের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি বহন করতে পারে। এ মানুষগুলোর দ্বিতীয়বার সংক্রমণের সুযোগ অনেক ক্ষেত্রেই নেই এবং কার্যকরী ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে সংকটটি নীরবে বরণ করে নেয়া এ জনগোষ্ঠীই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে ঠিক কত ভাগ মানুষ তাদের রক্তে উপযুক্ত পরিমাণে নভেল করোনাভাইরাসকে দমন উপযোগী অ্যান্টিবডি বহন করে, সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ ব্যাপার।
২. অ্যান্টিভাইরাল
ড্রাগ: আমরা এরই
মধ্যে
বেশকিছু
অ্যান্টিভাইরাল
ড্রাগ,
যেমন
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন,
ফ্যাভিপিরাভির,
রেমডেসিভির,
আইভারমেকটিন,
ডেক্সামেথাসন
ইত্যাদির
নাম
শুনেছি।
প্রকৃতপক্ষে
এসব
ড্রাগের
কোনোটাই
নভেল
করোনাভাইরাসকে
দমনের
জন্য
নতুন
করে
বানানো
হয়নি।
যেহেতু
বিভিন্ন
ভাইরাসের
জীবনচক্রে
কিছু
মিল
রয়েছে,
এসব
ড্রাগ
সাধারণভাবে
অনেক
ভাইরাসসহ
অন্যান্য
জীবাণুর
বিরুদ্ধে
কিছুটা
কাজ
করতে
সক্ষম।
বাংলাদেশসহ
বিশ্বের
কিছু
দেশে
আইভারমেকটিন
নিয়ে
আশার
আলো
দেখানো
হচ্ছে
কিন্তু
চূড়ান্তভাবে
এখনো
কোনো
সিদ্ধান্তে
আসা
যায়নি।
তবে
আমাদের
মাথায়
রাখতে
হবে
আমরা
সংক্রমিত
ব্যক্তিদের
মধ্যে
মাঝারি
ও
ক্রিটিক্যাল
উপসর্গের
রোগীদের
মূলত
সারিয়ে
তুলতে
চাই।
কেননা
এসব
রোগীকে
যথাযথ
চিকিৎসাসেবা
দিতে
পারলেই
মৃত্যুহার
কমে
আসবে।
৩. অ্যান্টিবডি থেরাপি: সারা বিশ্বসহ
বাংলাদেশেও
এখন
নভেল
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ
থেকে
সেরে
ওঠা
মানুষদের
প্লাজমা
থেকে
অ্যান্টিবডি
সংগ্রহ
করে
ক্রিটিক্যাল
রোগীদের
চিকিৎসা
দেয়া
হচ্ছে।
সম্প্রতি
সরেন্টো
থেরাপিউটিকস,
যুক্তরাষ্ট্র ‘STI-1499’ নামে
একটি
বাণিজ্যিক
অ্যান্টিবডির
ঘোষণা
দিয়েছে,
যেটি
প্লাজমা
অ্যান্টিবডির
মতোই
সংক্রমিত
ব্যক্তির
দেহে
ভাইরাস
দমন
করতে
সক্ষম।
ক্রিটিক্যাল
রোগীদের
পাশাপাশি
এ
ধরনের
থেরাপি
অন্য
স্বাস্থ্যকর্মীদের
দেয়া
যেতে
পারে।
তবে
এই
অ্যান্টিবডিগুলো
একটা
নির্দিষ্ট
সময়
পরেই
দেহ
থেকে
বিলুপ্ত
হয়ে
যাবে,
তাই
এটা
একটা
সাময়িক
সমাধান
হতে
পারে;
চিরস্থায়ী
নয়।
তবে
যেহেতু
সংক্রমিত
ব্যক্তিদের
একটা
বড়
অংশ
বিনা
চিকিৎসায়
বা
সামান্য
চিকিৎসায়
সংকটটি
কাটিয়ে
উঠছে,
তারা
তাদের
প্লাজমা
অ্যান্টিবডি
দিয়ে
ক্রিটিক্যাল
রোগীদের
সাহায্য
করতে
পারবে।
৪. ভ্যাকসিন: নভেল
করোনাভাইরাসের
সংক্রমণ
রোধে
ও
বিশ্বব্যাপী
এ
ভাইরাসের
হার্ড
ইমিউনিটি
তৈরিতে
একটি
সফল
ভ্যাকসিন
কার্যকরী
ভূমিকা
রাখতে
পারে।
বিশ্বব্যাপী
অনেক
প্রতিষ্ঠানই
ভ্যাকসিন
বানানোর
প্রতিযোগিতায়
নেমে
পড়েছে।
এদিকে
যুক্তরাজ্যের
অক্সফোর্ড
ইউনিভার্সিটি
ও
যুক্তরাষ্ট্রের
মডের্না
কো.
এরই
মধ্যে
আশাব্যঞ্জক
ভ্যাকসিনের
পরীক্ষামূলক
প্রয়োগ
শুরু
করেছে।
তবে
সবকিছু
যদি
সফলভাবে
সম্পন্ন
হয়ও
পৃথিবীর
সব
মানুষের
হাতে
যেকোনো
সফল
ভ্যাকসিন
পৌঁছতে
দেড়-দুই
বছরের
বেশি
সময়
লেগে
যেতে
পারে।
অর্থাৎ মোটাদাগে
বলা
যায়
প্রথমত,
বিশ্বব্যাপী
সামাজিকভাবে
কভিড-১৯
মহামারীর
সংকটকে
প্রায়
শেষ
করে
দেয়ার
পথে
আমরা।
মনের
ভয়
ঝেড়ে
ফেলে
দিয়ে
যেন
নভেল
করোনাভাইরাসকে
মেনে
নিয়েই
নতুন
স্বাভাবিক
জীবনযাত্রায়
কিছুটা
নিয়ম
আরোপ
করে
আমরা
ধীরে
ধীরে
ফিরে
যেতে
চাইছি।
দ্বিতীয়ত,
স্বাস্থ্যগতভাবে
এ
সংকট
কাটাতে
আমরা
তাকিয়ে
আছি
এক
বা
একধিক
সফল
ভ্যাকসিনের
দিকে,
আর
সেটি
হাতে
পেতে
যতদিন
প্রয়োজন
ততদিন
আমাদের
নির্ভর
করতে
হবে
কিছুটা
সংক্রমণজনিত
হার্ড
ইমিউনিটি,
কিছুটা
প্লাজমা
থেরাপি
ও
কিছু
অ্যান্টিভাইরাল
ড্রাগের
ওপর।
আর
এরই
মধ্যে
যদি
ভাইরাসটির
মিউটেশনের
ফলে
তার
সংক্রমণক্ষমতা
দুর্বল
হয়েই
পড়ে
তাহলে
খুব
সম্ভবত
আমাদের
আর
ভ্যাকসিন
নেয়ার
প্রয়োজন
হবে
না,
সংকটটি
নিজে
থেকেই
কেটে
যাবে।
ড. মো. ফিরোজ
আহমেদ: পিএইচডি ইন
ভাইরোলজি,
কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়,
যুক্তরাজ্য
সহযোগী
অধ্যাপক,
মাইক্রোবায়োলজি
বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়