জেএমআই হাসপাতাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী (মেডিকেল টিম) মো. মতিউর রহমানকে ৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনুসন্ধান দলের অন্য তিন সদস্য হলেন কমিশনের উপপরিচালক নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও আতাউর রহমান।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেএমআই হাসপাতাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমেটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, কী কথাবার্তা হয়েছে সেই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তারা (দুদক) আমার বক্তব্য নিয়েছেন। আমি যা বলার তাদের কাছেই বলেছি।
আর তমা কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারী মতিউর রহমান বলেন, আমাদের দায়িত্ব ছিল তিন লাখ মাস্ক সরবরাহ করার। এগুলো করা হয়েছে। সেখানে ৬০টির মতো মাস্ক কম হয়েছে। এটা কোনো কারচুপি বা অনিয়ম নয়।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে মাস্ক, পিপিইসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সরকারের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে যে চুক্তি ছিল, সেখানে দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। কারা কারা এসব দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত তাদেরকে বের করার জন্যই এ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
একই অভিযোগে গতকাল এলান করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তিনি দুদকে হাজির হননি। ১ জুলাই ওই তিনজনসহ পাঁচজনকে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রসহ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আসতে নোটিস দিয়েছিল দুদকের এ অনুসন্ধান দল। এদের মধ্যে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে আজ জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে।
অভিযুক্তদের দুদকের পাঠানো নোটিসে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কভিড-১৯-এর চিকিৎসার নিমিত্তে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত্পূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে নিম্নমানের সুরক্ষা সরঞ্জাম দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন চিকিৎসকরা। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সাধারণ ও নিম্নমানের মাস্ক দেয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে ২১ এপ্রিল একটি কমিটি করার কথা জানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে সেই প্রতিবেদনের আলোকে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানায়নি মন্ত্রণালয়। এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক।