সিঙ্গাপুরে আরো দুজন বাংলাদেশীর শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল এটি নিশ্চিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর আগে সিঙ্গাপুরে আরো দুই প্রবাসী বাংলাদেশীর শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এ নিয়ে মোট চারজন বাংলাদেশী কভিড-১৯-এ আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা বর্তমানে দেশটির বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চার বাংলাদেশীই সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটসে কাজ করতেন।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া আরো আটজনকে গতকাল শনাক্ত করা হয়েছে। ফলে দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮। নতুন শনাক্ত আটজনের মধ্যে পাঁচজন গড চার্চের গ্রেস অ্যাসেম্বলির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের মধ্যে একজন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক। অসুস্থবোধ করার পর তিনি সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে আসেননি। এ এলাকাটিতে এখন পর্যন্ত সাতজন আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে বুধবার আরো দুজন আক্রান্ত হয়েছিলেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, আটজনের মধ্যে দুজন বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন, যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন। তাদের বয়স যথাক্রমে ৩০ ও ৩৭। এ দুজন সেলেটার অ্যারোস্পেস হাইটস এলাকায় কাজ করতেন। পরিচয় প্রকাশ না করে তাদের কেস ৫২ ও ৫৬ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ওই এলাকায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। কেস ৫২ হিসেবে আখ্যায়িত বাংলাদেশী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন। বৃহস্পতিবার তার শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ৩৭ বছরের এ ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়া আগের দুই বাংলাদেশীর সংস্পর্শে ছিলেন।
এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর নভেল করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় বাংলাদেশী আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়। ৬ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে লক্ষণ ধরা পড়ে। পরের দিন তিনি স্থানীয় জিপি হাসপাতালে যান। সোমবার তাকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিসেসে পাঠানো হয়। হাসপাতালে ভর্তির আগে তিনি ভেরাসামি রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। প্রথম আক্রান্ত হওয়া বাংলাদেশীও একই এলাকায় কাজ করেতেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে প্রথম আক্রান্ত বাংলাদেশী লিটল ইন্ডিয়ার মুস্তফা সেন্টারে গিয়েছিলেন ও কাকি বুকিত এলাকার দ্য লিও ডরমিটরিতে অবস্থান করেছেন।
সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের ইমিগ্রেশনে আলাদা ব্যবস্থা
নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিঙ্গাপুরের যাত্রীদের জন্য পৃথকভাবে ইমিগ্রেশন ও স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনিতে সব ফ্লাইটের যাত্রীর স্বাস্থ্য স্ক্যানিং করা হলেও সিঙ্গাপুরফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে পৃথক লাইনে দাঁড় করিয়ে ইমিগ্রেশন ও স্ক্যান করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী নাগরিক ভাইরাসটিতে আক্রান্তের পর থেকে সতর্কতামূলক এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ এ প্রসঙ্গে জানান, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী নাগরিক নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিমানবন্দরে চীনফেরত যাত্রীদের মতো সিঙ্গাপুরের যাত্রীদেরও পৃথক লাইনে দাঁড় করিয়ে ইমিগ্রেশন ও স্ক্যান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আকাশ, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে স্ক্যানিং হয়েছে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৩ যাত্রীর। বিদেশফেরত এসব যাত্রীর মধ্যে ৪৯ হাজার ১১০ জনই শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছেন।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট আসছে। এসব ফ্লাইটের যাত্রীদের পৃথক লাইনে দাঁড় করিয়ে ইমিগ্রেশন ও স্ক্যান করা হচ্ছে।