বাংলা একাডেমির সুপারিশে
বাংলাদেশের পঞ্জিকায় গত ১৭ অক্টোবর ১ কার্তিক হয়েছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো আশ্বিন
মাস ৩১ দিন পূর্ণ হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত আশ্বিন ছিল ৩০ দিনের। আমরা দীর্ঘকাল ধরে
বাংলাদেশে বাংলা পঞ্জিকার এ সংস্কার চেয়েছি। বাংলা একাডেমি প্রস্তাবিত এ সংস্কারের
ফলে নাক্ষত্রিক পঞ্জিকা বাংলা সন এখন থেকে সৌর পঞ্জিকা হয়ে গেছে। কারণ আগে এর
বর্ষশুরু নক্ষত্রের অবস্থানের ওপর নির্ভর ছিল, এখন তা সৌর পঞ্জিকা
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিন তথা ১৪ এপ্রিল শুরু হবে। বৈশাখ,
জ্যৈষ্ঠ,
আষাঢ়,
শ্রাবণ,
ভাদ্র,
আশ্বিন ৩১ দিনের
হবে। কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ ও চৈত্র ৩০ দিনের হবে।
ফাল্গুন হবে ২৯ দিনের। আগে আশ্বিন ও ফাল্গুন ছিল ৩০ দিনের। দুই ভাবেই মোট ৩৬৫ দিন।
এখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে বছর অধিবর্ষ হবে অর্থাৎ ৩৬৬ দিনে বছর হবে, সে বছর ফাল্গুন মাস ৩০ দিনের হয়ে বাংলা বছরও ৩৬৬
দিনের হবে। এর ফল আমরা পাব ফাল্গুন মাসে। এবার আর ২১ ফেব্রুয়ারি ৯ ফাল্গুন হবে না,
৮ ফাল্গুনই হবে।
এবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ১ ফাল্গুনেই ‘ভালোবাসা দিবস’ হয়েছে। এবার সারা বাংলায়
নববর্ষও একই দিন ১৪ এপ্রিল হবে।
ব্রিটিশ রাজত্ব
অবসানের পর সারা দেশের জন্য একটি একই রকম পঞ্জিকা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভারত সরকার
১৯৫২ সালের নভেম্বরে ড. মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে।
মেঘনাদ সাহা কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করে যে, (১) প্রচলিত নাক্ষত্রিক
পঞ্জিকার (sidereal calendar) পরিবর্তে ক্রান্তীয় পঞ্জিকা
(tropical calendar) চালু করা,
২) বছরের শুরু
বৈশাখের পরিবর্তে চৈত্র থেকে শুরু করা, ৩) চৈত্র মাস ছয়-সাতদিন দেরিতে শুরু করা এবং
৪) শকাব্দকে জাতীয় পঞ্জিকা ঘোষণা করা হোক। ভারত সরকার ২২ মার্চ ১৯৫৭ সাহা কমিটির
রিপোর্ট গ্রহণ করে শকাব্দ ভিত্তিতে জাতীয় পঞ্জিকা চালু করে। এ পঞ্জিকার মাসগুলো হয়
চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ,
ভাদ্র,
আশ্বিন,
কার্তিক,
অগ্রহায়ণ,
পৌষ,
মাঘ ও ফাল্গুন।
বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাসগুলো ৩১ দিনের এবং অন্যগুলো ৩০ দিনের হয়। খ্রিস্টীয় পঞ্জিকার
অধিবর্ষের বছরে চৈত্র মাস ৩১ দিনের হয়। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি
মাসে ড. শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা সংশোধনের জন্য অনুরূপ একটি কমিটি গঠন করা
হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে বাংলা পঞ্জিকার ক্ষেত্রে শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ
গ্রহণ করে। ১৪ এপ্রিল বছর শুরুর দিন ধার্য করা হয় এবং মাসগুলো সাহা কমিটির মতো
বৈশাখ থেকে ভাদ্র ৩১ দিনের এবং অন্যগুলো ৩০ দিনের হয়।
ভারত ও বাংলাদেশে
পঞ্জিকা সংস্কারের নামে যা ঘটেছে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বাংলার সুপণ্ডিত ও
নীতিনির্ধারকরা জনগণের ঐতিহ্য তথা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করে গাণিতিক হিসাব
কষেছেন এবং জনগণের ওপর তা চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। বিশ্বের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে তাল
রাখা এবং দেশে ঋতুভিত্তিক বছর চালু রাখতে বাংলা নাক্ষত্রিক পঞ্জিকা সৌর পঞ্জিকায়
রূপান্তর করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঐতিহ্যবাহী নতুন বছর
উদযাপনের দিন পাল্টে দিয়ে সাহা কমিটি প্রদত্ত পঞ্জিকাটি জনপ্রিয় করতে পারেনি।
ভারতের এ জাতীয় পঞ্জিকা ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশে
মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিসীম। ওই
দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮। বাংলাদেশে ১৯৮৭ সালে প্রবর্তিত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে
২১ ফেব্রুয়ারি ৯ ফাল্গুন হয়েছিল। শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ বিবেচনার সময় এই যে
মারাত্মক পরিবর্তন হয়ে যায়, তা আমাদের নীতিনির্ধারকরা কেন হিসাবে আনেননি?
বর্তমান বাংলা
পঞ্জিকা দক্ষিণ এশিয়ায় হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা একটি ফসলি পঞ্জিকা ও
নাক্ষত্রিক পঞ্জিকা। এর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সময়ে রয়েছে বাংলার তিনটি
ফসল মৌসুম, যথা আউশ, আমন ও রবি। বাংলা পঞ্জিকার বছরকে চার মাস ধরে
ভাগ করে সহজেই এ ফসল মৌসুমগুলো চিহ্নিত করা যায়। ব্যবসায়ীরা এ পঞ্জিকার প্রথম দিন
পহেলা বৈশাখে হালখাতা করে নববর্ষ হিসেবে এবং শেষ দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব
বন্ধ করে ও চৈত্রসংক্রান্তি হিসেবে সারা বাংলায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পালিত হওয়ায়
এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। লক্ষণীয়, ফসলি পঞ্জিকার প্রথম দিনে
নববর্ষ পালনের ঐতিহ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কম্বোডিয়া,
লাওস,
থাইল্যান্ড,
ইউনান,
মিয়ানমার,
মালয়,
সুমাত্রা,
শ্রীলংকা,
তামিলনাড়ু,
অন্ধ্র,
কেরালা,
ওড়িশা,
বিহার,
আসামসহ সমগ্র উত্তর
ও উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, পাঞ্জাব ও কাশ্মীর প্রভৃতি
দেশেও পালিত হয়। এ বিশাল অঞ্চলটি মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত বিধায় ধারণা করা যায়,
সুদূর অতীত থেকেই এ
অঞ্চলে ফসলি পঞ্জিকা বিরাজ করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগণ মূলত
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। রাজা অশোকের সময় থেকে শুরু করে খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে এসব
দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। বাংলায়ও ওই সময়ে বৌদ্ধ ধর্ম ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে সাল
প্রচলিত রয়েছে (বুদ্ধাব্দ), তার বয়স বর্তমানে ২৫৬২ বছর। এটি ৫৪৩
খ্রিস্টপূর্বাব্দে গৌতম বুদ্ধের যুবরাজপদে রাজ্যাভিষেকের বছর ধরে গণনা করা হয়।
রাজা অশোকের সিংহাসন আরোহণের সময় ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ধরেও একটি সাল গণনা ছিল। এ
উভয় সালই সৌর পঞ্জিকা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৌর পঞ্জিকার
ভিত্তিতে আরো যেসব সাল প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়, সেগুলোর মধ্যে নেপালি ৫৬
খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে (নেপালি বিক্রমাব্দ),
শকাব্দ ৭৮
খ্রিস্টাব্দ থেকে, গুপ্তাব্দ ৩১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে,
বিক্রমাব্দ ৩৮৫
খ্রিস্টাব্দ থেকে, হর্ষাব্দ ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে,
ত্রিপুরাব্দ ৫৯০
খ্রিস্টাব্দ থেকে, মাঘী ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে, বিষ্ণুপুরী মলাব্দ ৬৯৬
খ্রিস্টাব্দ থেকে, পালাব্দ ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে,
লক্ষ্মণাব্দ ১১৭৮
খ্রিস্টাব্দ থেকে, চৈতন্যাব্দ ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে গণনা শুরু হয়। ওইসব
সালগুলো ১২ মাসের হলেও সবগুলো সালের নতুন বছর শুরুর দিন পহেলা বৈশাখ থেকে হতো না।
যেমন শকাব্দ শুরু হতো পহেলা চৈত্র থেকে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলার
সৌর পঞ্জিকাটি একটি অতিপ্রাচীন ঐতিহ্য। অন্যান্য সব রাজার মতোই যাঁরা সিংহাসনে
বসেছেন, তাঁরা বছরের যে দিনেই সিংহাসনে বসুন না কেন, ওই বছর থেকে চলতি পঞ্জিকার
ভিত্তিতে নতুন করে সাল গণনা শুরু করেছেন। তবে বাংলার বর্তমান সাল গণনার গোড়ায় আজ
থেকে ১৪২৫ বছর পূর্বে পৌঁছালে আমরা যে রাজার অভিষেকের বছর পাই,
তাঁর নাম শশাঙ্ক।
তাঁর নামে কোনো সাল প্রচলনের নিদর্শন নেই। বাংলা পঞ্জিকা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক
আছে: কারা এ পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেছেন, দুই বাংলায় দুই দিনে নববর্ষ
পালন হয় কেন, বাংলা পঞ্জিকার সংস্কার সঠিক হয়েছে কিনা?
ইত্যাদি। বাংলা
পঞ্জিকার বয়স এখন ১৪২৬ বছর চলছে। এ পঞ্জিকা সম্পর্কে অনেক ঐতিহাসিক বলেন,
ইংরেজি ১৫৮৪ সালে
মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ আমির ফতেউল্লা সিরাজী এর উদ্ভাবন করেন। তাঁরা বলেন,
হিজরি সাল অনুযায়ী
খাজনা আদায়ের অসুবিধা দূর করতে চান্দ্র হিজরি পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত
করে তিনি বাংলা পঞ্জিকার জন্ম দেন। কথাটি অসত্য, কারণ এর সপক্ষে প্রকৃতই
কোনো ইতিহাস নেই। আইন-ই-আকবরি থেকে যে ইতিহাস উল্লেখ করা হয়,
তা মোটেই বাংলা
পঞ্জিকার জন্ম নিয়ে নয়, তা হলো আকবর কর্তৃক
‘ইলাহি সন’-এর জন্ম নিয়ে। প্রকৃত সত্য
হলো, বাংলা পঞ্জিকা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে
হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত সৌর পঞ্জিকাগুলোরই একটি। মোগল সম্রাট আকবরের সভাসদ
ফতেউল্লা সিরাজী বাংলা পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেননি, বরং তিনি বাংলার সমতলে
প্রচলিত বাংলা পঞ্জিকাকে খাজনা আদায়ের বছর হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
এ বিষয়ে তথ্য পেতে
হলে মূল ফারসি থেকে এইচ ব্লকমান কর্তৃক
অনূদিত ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থটি ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে পড়ে দেখতে হবে। বাংলা
একাডেমি থেকে আহমদ ফজলুর রহমান কর্তৃক এ ইংরেজি গ্রন্থের বিশেষ অংশগুলোর একটি
অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে (এপ্রিল ২০০৩)। এ ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থের মূল লেখক আবুল
ফজল আল্লামী তাঁর পুস্তকের দ্বিতীয় খণ্ডে আকবরের সময় প্রচলিত হিন্দু ও হিজরিসহ
২০টি পঞ্জিকার বর্ণনা দিয়েছেন। ওই সময় জনগণের মধ্যে ফসলি সাল গণনারও প্রচলন ছিল
বলে জানা যায়। বইটির ১২৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, আকবর তাঁর রাজত্বের ২৯
বছরের প্রারম্ভে ইলাহী সম্বৎসরের প্রবর্তন করেন
হি. ৯৯২ সালের ৮ রবিউল আওয়াল অর্থাৎ ১০ মার্চ ১৫৮৪
খ্রিস্টাব্দ। মূল ফারসি থেকে এইচ বেভারিজ ‘অনূদিত
‘আকবরনামা’ গ্রন্থটির ইরেজি অনুবাদ
ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। আবুল ফজল আল্লামী রচিত এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের তৃতীয়
অধ্যায়ে ইলাহী সাল প্রবর্তনের ভূমিকা ও চতুর্থ অধ্যায়ে আকবরের ফরমানের বিবরণ আছে।
ওই বিবরণ পড়ে জানা যায়, ১৫৮৪ খ্রি. বাংলায় লক্ষ্মণ সেনের
সিংহাসনে আরোহণের ৪৬৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে (৪৬৬ লক্ষ্মণাব্দ),
দাক্ষিণাত্য ও
গুজরাটে শালীবাহনের ১৫০৬ শকাব্দ এবং দিল্লি ও মালওয়াতে ১৬৪১ বিক্রমাব্দ চলছে। ওই
অধ্যায়ে বলা হয়, যেহেতু ভারতের সালগুলো সৌর, কিন্তু মাসগুলো চান্দ্র তাই
যে পবিত্র ‘ইলাহী সন’ চালু করা হলো, তার মাসগুলোও হবে সৌর। আকবর
প্রবর্তিত এ সালের শুরু হয় আকবরের সিংহাসনে আরোহণের বছর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে এবং
মাসগুলো হয় পারস্যিক মাসের নাম থেকে, যথা ফারওয়ারদিন,
আর্দিবিহিশত,
খুরদাদ,
তীর,
আমুরদাদ,
শাহরেয়ার,
মিহর,
আবান,
আজার,
দাই,
বাহমান ও ইসফানদারমাজ।
আকবরনামা পড়ে
স্পষ্টতই জানা যায়, ওই সময় বাংলার মানুষের নিজস্ব পঞ্জিকা ছিল। তবে ওই পঞ্জিকায়
বছর কবে শুরু হতো, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কারণ
‘আইন-ই আকবরি’ গ্রন্থে শকাব্দের বছর
চৈত্র মাস থেকে শুরু দেখা যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ১৯৮০ সালে এম আকবর আলী রচিত
‘আল বেরুণী’ নামের একটি পুস্তক প্রকাশ
হয়। ওই পুস্তকের ১০১ পৃষ্ঠায় আল বেরুণীর লেখা ‘কিতাবুত তাফহিম’ গ্রন্থ থেকে বলা হয়েছে
চৈত্র মাস থেকে শুরু হিন্দু মাসগুলো ৩০ দিন করে। সৌর বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার
জন্য যে মাসকে দুবার গণনা করা হয়, তার নাম অধিমাস। পারস্যিক বছরটিও সৌর এবং এর বছর
শুরুর দিন যেদিন সূর্য পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দিকে যাত্রাপথে বিষুবরেখার উপরে
এসে পড়ে (মহাবিষুব)। শকাব্দ একটি ক্রান্তীয় পঞ্জিকা
(Tropical calendar) যার বছর শুরুর দিন
মহাবিষুবের (Vernal Equinox) দিন থেকে। এটি সাধারণত ২১
বা ২২ মার্চ নাগাদ ঘটে। কিন্তু বাংলা পঞ্জিকার শুরুর দিন হচ্ছে,
সূর্য তার যাত্রাপথে
যেদিন নাক্ষত্রিক মেষরাশিতে (Sidereal Aries) প্রবেশ করে,
সেদিন থেকে। এটি
সাধারণত ১৪ বা ১৫ এপ্রিল নাগাদ ঘটে। বাংলা চলতি পঞ্জিকা তাই একটি নাক্ষত্রিক
পঞ্জিকা (Sidereal calendar)। নাক্ষত্রিক পঞ্জিকার বছর
সৌর পঞ্জিকা বছরের চেয়ে সামান্য দীর্ঘতর। বাংলা পঞ্জিকায় ১৫৮৪ সালে পহেলা বৈশাখ
ছিল ১১ এপ্রিল। গত ৫০০ বছরে গ্রেগরিয়ান সৌর পঞ্জিকার
(Solar calendar) তুলনায় নাক্ষত্রিক বাংলা
পঞ্জিকার বর্ষশুরু তিনদিন পিছিয়েছে। কিন্তু এখন থেকে বাংলা পঞ্জিকা সৌর পঞ্জিকা
হওয়ায় সূর্যের অবস্থান ধরে আর পেছাবে না।
ম. ইনামুল
হক: সাবেক মহাপরিচালক, পানি সম্পদ
পরিকল্পনা সংস্থা; চেয়ারম্যান, জল পরিবেশ ইনস্টিটিউট