সোনালি প্রজন্মের শূন্যতা পূরণের চ্যালেঞ্জ

ম্যানচেস্টার সিটিরসোনালি প্রজন্মের শূন্যতা পূরণ যে কঠিনতম কাজ, তা ভালো করেই জানেন পেপ গার্দিওলা। তবে ক্লাবটিকে আবারো ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেয়ার কাজটি তিনি সম্পন্ন করতে মরিয়া। ক্লাবের তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী গার্দিওলা, যদিও ম্যানসিটিরক্ল্যাস অব ৯২ ফেরানোর নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না।

রক্ষণে ক্লাবটির দীর্ঘদিনের অতন্দ্রপ্রহরী ভিনসেন্ট কম্পানি এরই মধ্যে ইতিহাদ ছেড়ে গেছেন। চলতি মৌসুম শেষে বিদায় নেবেন মিডফিল্ড জেনারেল ডেভিড সিলভা। ২০২১ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বিদায় নেবেন ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা সার্জিও আগুয়েরোও।

ইংলিশ ফুটবলে সিটির উত্থানে এত্রিশূল রেখেছেন অনন্যসাধারণ ভূমিকা। ২০১২ সালের পর সিটিজেনরা যে চারটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছে (২০১১-১২, ২০১৩-১৪, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯), তারও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তারা। কম্পানি চলে গেছেন, সিলভার চলতি মৌসুমই শেষ আর আগুয়েরো আগামী মৌসুম খেলে বিদায় নেবেন। অর্থাৎ টানা তিন মৌসুমে তিনজন কিংবদন্তিকে হারাবে সিটিজেনরা।

এদের মতো কিংবদন্তি চলে যাওয়ার পর যে বিরাট শূন্যতা তৈরি হবে, তা পূরণের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে গার্দিওলা। এখন দেখার বিষয়, তিনি নিজেদের ভাণ্ডার থেকেই নতুন কম্পানি কিংবা সিলভাকে তৈরি করেন নাকি বাইরে থেকে কাউকে আনেন। গত অর্ধ দশকের অর্জন ও সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইলে এসব মহাতারকার শূন্যতা দ্রুতই পূরণ করতে হবে গার্দিওলার ক্লাবকে।

ক্লাব গ্রেটদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমে গার্দিওলা বলেন, ‘ক্লাবের জন্য এসব নাম যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। ভিনি (ভিনসেন্ট কম্পানি) তো অনন্য, সার্জিও (আগুয়েরো) অনন্য এবং ডেভিডও (সিলভা) এসব খেলোয়াড় অবিশ্বাস্য। তবে দ্রুতই তাদের শূন্যতা পূরণে কাজ করে যাওয়া এখন ক্লাবটির দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। এর গুরুত্বও সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। এটি ঘটবেই এবং আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সর্বোপরি ক্লাবের পেছনে এসব খেলোয়াড়ের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে, তারাই আমাদের আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

ইতিহাদে গার্দিওলার আগমনের পর প্রিমিয়ার লিগে তারকা হয়ে জ্বলছেন রহিম স্টার্লিং ও কেভিন ডি ব্রুইন। তবে ক্লাবকে মজবুত এক ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন কম্পানি, সিলভা ও আগুয়েরোর মতো খেলোয়াড়, যারা এ ক্লাবে মোট তিন কোচের অধীনে খেলেছেন। এ নিয়ে গার্দিওলা, ‘এসব ছেলের সঙ্গে গত চারটি বছর ছিলাম এবং তারা অতীতে ও আমার সময় এ ক্লাবের জন্য যা করেছে, তাতে আমি এদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। তারা রবার্তো (মানচিনি) ও ম্যানুয়েলের (পেলেগ্রিনি) সঙ্গে কাজ করেছে এবং অনেক অনেক বছর অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক ছিল।

এটা খুবই আশাব্যঞ্জক যে, নিয়মিতই সিটির মূল দলকে খেলোয়াড় সরবরাহ করতে যাচ্ছে ক্লাবটির একাডেমি এবং ফিল ফডেন একাডেমির সেরা উৎপাদন। এ গ্রীষ্মে যখন সিলভা চলে যাবেন তখন তার জায়গা পূরণের সব যোগ্যতাই ১৯ বছর বয়সী ফডেনের মধ্যে রয়েছে বলে গার্দিওলা আবিষ্কার করেছেন। চলতি মৌসুমে এই ইংলিশ মিডফিল্ডার সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ২১ ম্যাচ খেলেছেন।

ফডেনকে নিয়ে গার্দিওলার সনদ, ‘ফিল (ফডেন) বিস্ময়কর এক খেলোয়াড়, কিন্তু তাকে এখনো কিছু জায়গায় উন্নতি আনতে হবে। কখনো কখনো আপনাকে ধৈর্যশীল ও শান্ত হতে হয়। আমি বহুবার বলেছি, গ্রীষ্মে যখন ডেভিড চলে যাবে তখন তার জায়গায় আমরা কাউকে কিনছি না, কারণ আমাদের তো ফিল রয়েছে। সে এমনই এক খেলোয়াড় যে অনেক সুযোগ পেতে চলেছে কিংবা তাকে হয়তো গুন্দোয়ান, সিলভা (বের্নার্দো) ও ডি ব্রুইনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে, যারা সবাই এ পজিশনে খেলে।

ম্যানচেস্টার সিটিরক্ল্যাস অব ৯২ ফেরানোর স্বপ্ন গার্দিওলার। তবে গ্রেটদের সঙ্গে বর্তমান তরুণদের তুলনার সাহস এখনই দেখাতে চান না তিনি। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে সার্জিও বুসকেটস, জেরার্ড পিকে ও পেদ্রোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন গার্দিওলা। তিনি জানেন বাইরে থেকে আনা তারকাদের সঙ্গে কীভাবে স্থানীয় মেধাবী খেলোয়াড়দের সমন্বয় ঘটাতে হয়। কোনো সন্দেহ নেই, এমন মেধাবী তরুণ সিটিতেও আছে। তবে সিটিকে নির্ভর করতে হবে একাডেমির ওপর।

৪ জানুয়ারি এফএ কাপের তৃতীয় রাউন্ডে পোর্ট ভেইলের বিপক্ষেরুটিন ম্যাচের শেষ ১৩ মিনিট তরুণ খেলোয়াড়দের ঝলক বুঝিয়ে দিয়েছে আকাশি-নীলদের ভবিষ্যৎ সুসংহত। ফডেন ছাড়াও ১৭ বছর বয়সী টেইলর হারউড-বেলিস সিটির ৪-১ গোলের জয়ে লক্ষ্যভেদ করেন। বদলি হিসেবে নেমে গোল করেন ১৮ বছর বয়সী টমি ডয়েলও, যে গোলে স্পর্শ ছিল ফডেন ও টেইলরের। এ তিন টিনএজ হূদয় থেকেই আকাশি-নীলের পাঁড় ভক্ত। ম্যানইউর মাঠে কারাবাও কাপ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জয়ের পথে স্বাগতিক দর্শকদের সামনে তাদের উদযাপনের ভঙ্গিই তা বলে দেয়। এ আবেগ দেখে ডাগআউটে দাঁড়িয়ে নিশ্চিতভাবেই হাসছিলেন গার্দিওলা। যদিও ইউরোপের অন্যতম সেরা এ কোচ এটাও জানেন যে, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ থেকে সত্যিকার অর্থেই বড় মাপের খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পথটি কঠিন। এ কোচের কথায়, ‘আমি বলতে চাই হ্যাঁ (‘ক্ল্যাস অব ৯২ ফিরিয়ে আনা), তবে আমি জানি না, কী ঘটতে যাচ্ছে। আসলে এটা নির্ভর করছে ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠতে তারা কতটা উন্নতি করতে পারে তার ওপর। বার্সেলোনার মতোই এখানেও আমি তরুণদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করব, কিন্তু এ ক্লাবটির চাহিদা অনেক বেশি। এমনকি আমরা যখন গত মৌসুমে চারটি শিরোপা জিতেছি, তখনো যথেষ্ট ছিল না। কারণ আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিনি।

১২৫ বছরের পুরনো ম্যানসিটিকে বদলে দিয়েছেন আমিরাতি ধনকুবের শেখ মনসুর আল নাহিয়ান। ২০০৮ সালে তার আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ ২১ কোটি পাউন্ডে ম্যানসিটি কিনে নেয়ার পর আরো কোটি কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করে এখানে তারকার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তাদেরই হাত ধরে নতুন মালিকের অধীনে চারটি লিগ শিরোপাসহ মোট ১৩টি শিরোপা জয় করে সিটিজেনরা। বিশাল বিনিয়োগের পর ম্যানসিটি এখন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাব, ইউরোপেরও। যদিও আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাই জেতা হয়নি তাদের। ইউরোপের মুকুট ছিনিয়ে আনতে ভবিষ্যতে তরুণদের নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনবে ক্লাবটি। টেলিগ্রাফ ও এএফপি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন