উচ্চ আদালতের রায়ের পরও পাঠদানে ফিরতে পারছেন
না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ
ফরিদী। শেষ পর্যন্ত সিঁড়িতেই পাঠদান শুরু করেছেন ওই শিক্ষক। আজ রোববার
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে পাঠদান করেন তিনি। তার ক্লাসে
শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে এ
ক্লাসের আয়োজন করা হয় বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ
আখ্যায়িত করে সম্প্রতি রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এরপরও ক্লাসে ফিরতে পারছেন
না ড. রুশাদ ফরিদী।
আজ সিঁড়িতে ক্লাস নেয়া প্রসঙ্গে তিনি
সাংবাদিকদের বলেন,
ক্লাস নেয়ার প্রস্তাব এলে আমার ছাত্রদের পক্ষ থেকে এসেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে ক্লাস নিতে দেয়া হচ্ছে না, তাই
আমাকে সিঁড়িতেই ক্লাস নিতে হলো। শিক্ষার্থীরা যদি চায়, তাহলে এ
ধারা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে
নিজের টাইমলাইনে এক ইভেন্ট পোস্টে সিঁড়িতে ক্লাস নেবেন বলে জানান ড. রুশাদ
ফরিদী। সেখানে তিনি লেখেন,
‘ক্লাসে ফিরতে না পারলেও ক্লাসের বাইরে সিঁড়িতে ফিরতে পেরে
ভালো লাগছে। উদ্যোগী ছাত্রদের অনেক ধন্যবাদ।’
‘এই গল্পটা আগেও বলেছি আবারো বলছি। ফেসবুকে একটা মিম দেখেছিলাম যেখানে হুডি পরা
এক লোক বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার নাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। একজন এসে
তার হুডি তুলে দেখে ভেতরে আসলে লেখাঃ স্ট্যাটিস্টিক্স।’
‘এই যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেটা ঘটছে ডেটা সায়েন্স, মেশিন
লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঘিরে, তার মূলে কিন্তু এই পরিসংখ্যান।
অথচ এই পরিসংখ্যান আমাদের বেশীরভাগের কাছে বেশ বিরক্তিকর একটা বিষয় হিসেবে
উপস্থাপন করা হয়। আমার চেষ্টা থাকবে একটা ভিন্ন এপ্রোচ নেয়ার। দেখা যাক। সকলে
আমন্ত্রিত।’ লেখেন ড. রুশাদ ফরিদী।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন
সিদ্দিক উপাচার্য থাকাকালীন সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে
পাঠানো হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, নিজ বিভাগের ৩১ জন শিক্ষক রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
তুলে বলেছেন, কেউ তার সঙ্গে কাজ করতে চান না। পরে এ শিক্ষক তখনকার উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার
ও বিভাগের সভাপতি বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান। অভিযোগটিকে মিথ্যা দাবি করে উচ্চ আদালতে
রিটও করেন তিনি। সেই মামলার রায়ে গত ২৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ড. রুশাদ
ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া বাধ্যতামূলক ছুটির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন এবং
তাকে অনতিবিলম্বে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন।
আদালত রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না পাওয়ায় রায়ের
সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ আইনজীবীর সনদপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি ২১ নভেম্বর
অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। কিন্তু তাকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসনের অনুমতি না পেলে বিভাগে যোগদান করতে পারবেন না তিনি।
সবশেষ ক্লাসে ফেরার আকুতি জানিয়ে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) তার প্ল্যাকার্ড হাতে বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়া একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’।