আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি শুরু

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় অন্তর্বর্তী আদেশ দাবি

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘গণহত্যা’ মামলায় শুনানি বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ মামলায় নিজ দেশের হয়ে আইনি লড়াই করছেন মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চি। আজকের শুনানিতে তিনিও নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আইসিজের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল বুধবার আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে সু চির বক্তব্য উপস্থাপনের কথা রয়েছে। খবর আল জাজিরা।

গাম্বিয়ার প্রস্তাবিত পক্ষে নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের ক্লাউস ক্রেসকে এডহক বিচারপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এডহক বিচারপতিদের শপথের মধ্য দিয়ে শুনানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর আইসিজের রেজিস্ট্রার ফিলিপ গোতিয়ে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গাম্বিয়া আবেদনে যা বলেছে, তা পড়ে শোনান।

গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু কেন মিয়ানমার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার বৈশ্বিক সনদ লঙ্ঘন করেছে কি না, তার বিচারই আইসিজের এই শুনানির উদ্দেশ্য। আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন অ্যাডহক বিচারপতি। ওই দুজন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। আদালতের সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়।

আদালতে মোহাম্মদ জুবায়ের নামে ১৯ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা বলেন, আমরা ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড দেখেছি। আমাদের চোখের সামনে অনেকে খুন হয়েছে। আমাদের সামনে পালানো ছাড়া কোনো পথ ছিল না। এই গণহত্যার দায় অবশ্যই মিয়ানমারকে নিতে হবে। এখন তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করছেন। কী লজ্জার!

নুর আলম নামে ৬৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা জানান, ২০১৭ সারের ওই অভিযানে ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। বলেন, একসময় অং সান সু চি শান্তির প্রতীক ছিলেন। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল যে ক্ষমতায় আসলে অনেক পরিবর্তন আসবে। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করেছি। আর এখন তিনি গণহত্যার প্রতীক। আমাদের রক্ষা না করে তিনি খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি তাদের হয়ে লড়াই করবেন। আমরা তাকে ঘৃণা করি। তার লজ্জা হওয়া উচিত।

নুর আলম আরও বলেন, আমি অনেকদিন ধরেই এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। তাদের শাস্তি দেখতে পারলে আমার জীবনে আর কোনো অপ্রাপ্তি থাকবে না।

গতকাল সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাকারী দেশ গাম্বিয়াকে সহায়তার ঘোষণা দেয় কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। বিবৃতিতে দুই দেশ সাম্প্রতিক ইতিহাসের নৃশংসতম এ গণহত্যা নিয়ে সরব হওয়া এবং আইসিজে-তে বিষয়টি উত্থাপনের জন্য গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী সব দেশের প্রতি এ মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থনের আহ্বান জানান এই দুই দেশ।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামো গত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়েছিল। মিয়ানমার তীব্রভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের হামলার জবাবেই তারা অভিযান চালিয়েছিল। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন