চলতি বছর চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা ভাবের প্রভাবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। এতে দেশটিতে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদায়ও ভাটা পড়েছে। দেশটির রাষ্ট্রচালিত সিনোপ্যাক গ্যাস কোম্পানির একজন কর্মকর্তা সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্স।
চলতি বছর চীনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৩০ হাজার ৭০০ কোটি ঘনমিটার, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে জ্বালানিটির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ।
চীন জাপানের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিকারক। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে দেশটি গত বছর মোট ১৬ হাজার ২০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উত্তোলন করেছিল এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করেছিল ১২ হাজার ৪৮০ কোটি ঘনমিটার। এর মধ্যে এলএনজির পরিমাণ ছিল মোট ৭ হাজার ৪৩০ কোটি ঘনমিটার। দেশটির যেকোনো ধরনের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সুপার চিলড হিসেবে পরিচিত এলএনজি আমদানির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিবেশ দূষণ রোধে চীন সরকার কয়লা ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর অধিক জোরারোপ করার পরও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরি কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না জ্বালানিটির ব্যবহার।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চীন সরকার সম্প্রতি পরিবেশ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। এ কারণে দেশটি গৃহস্থ, বিদ্যুৎ ও শিল্প-কারখানাগুলোয় জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহারে বাধ্য করছে। কারণ গ্যাসের তুলনায় কয়লা বেশি বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন করে। ফলে দেশটি অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার জ্বালানি যেমন—প্রাকৃতিক গ্যাস ও নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকছে।
কোম্পানিটি জানায়, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটিতে গ্যাসের চাহিদা ৫১ হাজার কোটি ঘনমিটাবে উন্নীত হতে পারে, যার প্রধান চালিকা হতে পারে নাগরিক গৃহস্থ কাজ, শিল্প-কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত।
এর মধ্যে ২০১৮ সালে নাগরিক গৃহস্থ কাজে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৯ হাজার ২৫০ কোটি ঘনমিটার, যা জ্বালানিটির মোট চাহিদার ৩৩ শতাংশ। তবে সামনের বছরগুলোয় এ খাতে জ্বালানিটির চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়তে পারে। এ সময় দেশটির শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৬০ কোটি ঘনমিটার, যা মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। দেশটি পরিবেশ ইস্যুতে যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এ খাতে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে। গত বছর চীনের বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪ হাজার ৪৪০ কোটি ঘনমিটার, যা মোট চাহিদার ১৭ শতাংশ। তবে কয়লার তুলনায় অধিক ব্যয়বহুল ও সরকারি ভর্তুকি হ্রাসের কারণে আগামীতে এ খাতে চাহিদা বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।
দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি বছর চীন মোট ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করতে পারে। এর মধ্যে শেল গ্যাস (পাথুরে ভূমি থেকে উত্তোলিত গ্যাস) উত্তোলন বেড়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটারে উন্নীত হতে পারে। আগামী বছরগুলোয় চীনে শেল গ্যাসের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
