অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ সবচেয়ে বড় সমস্যা

শামস মাহমুদ

ব্যবস্থাপনা পরিচালক

শাশা ডেনিমস লিমিটেড

দেশের অন্যতম ডেনিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামস মাহমুদ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ার থেকে আইনে স্নাতক শামস মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ফিন্যান্সের সার্টিফিকেশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের একজন ক্যাপস্টোন ফেলো। শাশা ডেনিমস ছাড়াও তিনি শাশা গার্মেন্টসের এমডি ও এনার্জিস পাওয়ার করপোরেশনের চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি ডাচ্-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিবিসিসিআই) ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) একজন পরিচালক। সম্প্রতি তিনি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক ও বাংলাদেশ ফিলিপাইন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিপিসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি ইথিওপিয়ার অনারারি কনসাল জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি বণিক বার্তার সঙ্গে দেশের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান রাহাত


দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাতের বর্তমান অবস্থা কী?

বর্তমানে দেশের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল খাত বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর মধ্যে অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ সবচেয়ে বড় সমস্যা। অনেক উদ্যোক্তা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ট্রেন্ড যাচাই না করেই সম্প্রসারণে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। এছাড়া আগের তুলনায় পণ্যের দাম কিন্তু কমে গেছে। ফলে আমাদের মুনাফা মার্জিনও কমে যাচ্ছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে আগে আমরা একসঙ্গে অনেক বেশি ক্রয়াদেশ পেতাম। কিন্তু তারা বর্তমানে এর পরিবর্তে কয়েক ধাপে তাদের চাহিদামতো ছোট আকারে ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের এখানে অনেক কারখানারই সক্ষমতা অনেক বেশি। তাদের ছোট আকারের কার্যাদেশে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সেভাবে নেই। এটিও একটি সমস্যা। বর্তমানে বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডেড স্টোরগুলোর বিক্রি কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশও কমছে। অন্যদিকে অনলাইনে বিক্রি বাড়ছে। আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগকে (এফডিআই) উৎসাহিত করতে কারখানা স্থাপনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এফডিআইকে আমি অবশ্যই স্বাগত জানাই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকা উচিত বলে মনে করি। যেমন গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল খাতে আমরা যে ধরনের পণ্য তৈরি করছি, একই ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেশে কারখানা স্থাপনের সুযোগ দেয়া উচিত নয়। কারণ এতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। তবে স্যুট, স্পোর্টসওয়্যার ও লঞ্জারির মতো পণ্য উৎপাদনে আমাদের দক্ষতা কম। এ ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আমাদের এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করা উচিত। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু ব্যবসা করে যে টাকা আয় করছে, তা দেশেই থাকছে। অন্যদিকে বিদেশীরা যা আয় করেন, তার বড় একটি অংশ বিদেশে নিয়ে যান। তাই যেসব ক্ষেত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কাজ করলে আমাদের দক্ষতা বাড়বে, আমাদের সেদিকেই ফোকাস করা উচিত।

আমাদের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল খাতের পথচলা অনেক দিনের। এ দীর্ঘ সময়ে উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে ঋদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তার পরও অপরিকল্পিত সম্প্রসারণের কারণ কী?


মূলত সমস্যার শুরু ২০০৮ সালের দিকে। তখন বৈশ্বিক মন্দার কারণে কম দামে পণ্য নেয়ার জন্য বিদেশী ক্রেতারা আমাদের এখানে আসতে শুরু করেন। এ কারণে সে সময় আমাদের ব্যবসা অনেক বেড়ে যায়। ডেনিমের একটি মজার দিক রয়েছে। মন্দার সময়ে ডেনিমের বিক্রি বেড়ে যায়। কারণ অন্যান্য ফ্যাব্রিকের তুলনায় ডেনিমের স্থায়িত্ব বেশি। ফলে ব্যয় কমাতে মানুষের মধ্যে ডেনিম ক্রয়ের প্রবণতা বেড়ে যায়। যা-ই হোক, মন্দার কারণে হঠাৎ করে ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যেই এমন ধারণা জন্মে যে অন্যান্য দেশের সব ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে চলে আসছে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা আরো বাড়বে। এ কারণে তখন অনেকেই তাদের সক্ষমতা বেশি পরিমাণে বাড়িয়েছে। কিন্তু মন্দা কেটে যাওয়ার পর আগের মতো আর ক্রয়াদেশ আসেনি। ফলে যারা সঠিকভাবে পরিস্থিতি অনুধাবন না করে সম্প্রসারণ করেছেন, তারা সমস্যায় পড়েছেন।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী?

দেখুন, আমাদের যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সক্ষমতা রয়েছে। এটাই আমাদের বাঙালিদের বৈশিষ্ট্য। এর আগেও আমরা অনেক বড় বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠেছি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির কারণে আমাদের ব্যবসা কমে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু তার পরও আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যখন আমাদের সুদের হার অনেক বেড়ে গিয়েছিল, তখনো কিন্তু আমাদের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এখনো আমাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আমরা বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি, যারা ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে রয়েছে। আমাদের এখানে পুরনো ও অভিজ্ঞ, মোটামুটি অভিজ্ঞ ও একেবারেই নতুন—এ তিন ধরনের উদ্যোক্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পুরনোদের অনেকেই ব্যবসায় ভালো করছেন। আবার কিছু আছেন, যারা সুবিধা করতে পারেননি। মোটামুটি অভিজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই ভালো করছেন। কিন্তু একেবারেই নতুন যারা, তাদের অধিকাংশই ভালো করতে পারেননি। আরেকটি বিষয়, আমাদের এখানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় হঠাৎ করে এটি করা হলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে ও জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু ধীরে ধীরে করা হলে এর প্রভাব খুব বেশি পড়বে না। আমাদের মুনাফা মার্জিন ক্রমেই কমছে। ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তুরস্ক কিন্তু তাদের মুদ্রা লিরার অবমূল্যায়নের কারণে বর্তমানে সুফল পাচ্ছে। এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই রয়েছে। তবে আমি মনে করি, ইতিবাচক দিকই বেশি।

দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে তো পণ্যে বৈচিত্র্যকরণের বিকল্প নেই...


অবশ্যই। ক্রেতারা সুযোগ পেলে কম দাম দিতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তাহলে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের দরকষাকষির সক্ষমতা বেড়ে যাবে। আমরা সক্ষমতা বাড়ালেও পুনর্বিনিয়োগ না করায় কাঙ্ক্ষিত হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। আমাদের এখন গবেষণা ও উন্নয়নের (আরঅ্যান্ডডি) দিকে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করা উচিত। এ খাতে আমাদের পুনর্বিনিয়োগ করতে হবে। আরঅ্যান্ডডির মাধ্যমে আমরা যদি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে ও ভ্যালু অ্যাড করতে পারি, তবে ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে আগের চেয়ে বেশি দামে আরো বেশি পণ্য নেবেন। আমি মনে করি, সরকারের এ দিকটায় নজর দেয়া প্রয়োজন। যারা আরঅ্যান্ডডিতে বিনিয়োগ করবেন, তাদের করছাড় সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ...


আমি মনে করি, আমাদের দেশের কর্মীরা বিশ্বে শ্রেষ্ঠ। কারণ আমরা যারা উদ্যোক্তা রয়েছি, তাদের কাছে শুধু মূলধন রয়েছে। কিন্তু শুধু মূলধন দিয়ে তো আর ব্যবসা হয় না। এজন্য দক্ষ কর্মী আবশ্যক। আমাদের কর্মীরা যেভাবে কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছেন, সেটি প্রশংসনীয়। কিন্তু আমরা উদ্যোক্তারা তাদের দক্ষতাকে আরো বাড়াতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। আমরা যদি আমাদের কর্মীদের দেশ-বিদেশে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো বেশি দক্ষ করে তুলতে পারতাম, তাহলে আমাদের উৎপাদনশীলতা আরো বেড়ে যেত। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনি। তবে এখন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। দেরিতে হলেও এটি ভালো উদ্যোগ। কর্মীদের পেছনে বিনিয়োগ করলে তাতে প্রতিষ্ঠানেরই লাভ বেশি। আরেকটি বিষয়, বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন নিত্যনতুন যে পরিবর্তন আসছে, সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আমাদের এখানে গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল নিয়ে যেসব টেক্সট রয়েছে, সেগুলোর সবকিছুই যুক্তরাজ্যের কারিকুলাম অনুসারে প্রস্তুতকৃত। এর মাধ্যমে কোন যন্ত্র ব্যবহার করে কতটুকু উৎপাদন করা সম্ভব, সেটা ভালোভাবে জানা যায়। কিন্তু তুরস্ক, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি রাশিয়ার কারিকুলামও অনুসরণ করছে। রাশিয়ার কারিকুলামে তুলার বহুমুখী ব্যবহারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কীভাবে কতটুকু তুলা ব্যবহার করলে কেমন সুতা ও কাপড় হবে, সেটা তারা গবেষণা করে। তারা বিভিন্নভাবে তুলা ব্যবহার করে এমন নমনীয় সুতা তৈরি করছে যে সেটি ডায়িং করতে অনেক কম খরচ হচ্ছে। ফলে তারা এদিক দিয়ে এগিয়ে থাকছে। আমাদেরও এ ধরনের বিষয়গুলোয় নজর দিতে হবে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?


আমরা সবসময়ই আমাদের কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছি। আমাদের এখানে যারা কাজ করেন, তাদের দক্ষতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বছরে তিনটি বোনাস দিই। এছাড়া আমরা প্রতি মাসেই তাদের সঙ্গে মুনাফা শেয়ার করি। এর ওপর বার্ষিক বোনাস তো রয়েছেই। আমাদের কোনো কর্মী অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করি। তাদের সন্তানদের পড়াশোনা দিকেও আমরা গুরুত্ব দিই। এমনকি কর্মীদের হজে পাঠানোর বিষয়ে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি। কর্মীদের আমরা সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। একইভাবে কর্মীরাও শাশাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই মনে করেন।

শাশা ডেনিমসের ব্যবসা কেমন চলছে?

আমরা সম্প্রতি ইওএস টেক্সটাইলকে কিনে নিয়েছি। আমরা ডেনিম উৎপাদন করি। অন্যদিকে ইওএস টুইল কাপড় উৎপাদন করে থাকে। ফলে দুই ধরনের ফ্যাব্রিকের সুবিধা আমরা পাব। আগামী বছর ও এর পরের বছর আমরা ভালো অবস্থানে থাকব। রবার্তো বার্তো আমাদের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টে থাকবেন। তার অভিজ্ঞতাও আমরা কাজে লাগাতে পারব। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, বর্তমানে পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে যে ফ্যাব্রিক ব্যবহার হয়, সেটির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ফ্যাব্রিক দিয়ে তাদের জায়গা দখল করা। আমরা সক্ষমতা সম্প্রসারণ করব। তবে সেটি উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং পণ্যের মান বাড়ানোর জন্য যা প্রয়োজন, আমরা তাই করব। মোট কথা, আমরা ভ্যালু অ্যাড করার জন্য সম্প্রসারণ করব।

ইওএসের বর্তমানে যে সক্ষমতা রয়েছে, সেটিই থাকবে নাকি আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে?

ইওএস বর্তমানে ছয় লাখ গজ ফ্যাব্রিক উৎপাদন করছে। তারা তাদের সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করছে। কিন্তু তারা খুবই উন্নত মানের ফ্যাব্রিক উৎপাদন করে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ইওএসের উৎপাদনক্ষমতা ২০ থেকে ৩০ লাখ গজে উন্নীত করার। সেখানে কিছু ভিন্ন ধরনের লুম রয়েছে। সেগুলোকে সম্প্রসারণ করা যায় কিনা দেখব। ডেনিম ও টুইল ফ্যাব্রিকসে ইনোভেশনের মাধ্যমে নতুন কিছু করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা থাকবে।

বিদ্যুৎ খাতেও শাশা ডেনিমসের বিনিয়োগ রয়েছে। সম্প্রতি আপনাদের ৫৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আপনারা এর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত বিপিডিবি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যদিকে বাগেরহাট ও সান্তাহারে ১১০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিডিং হয়ে গেলেও সেটির আর কোনো অগ্রগতি নেই কেন?

আমাদের কাছে দুটি বিকল্প ছিল—ইওএস টেক্সটাইলের বিষয়টি আগে শেষ করব, নাকি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আমরা শেষ পর্যন্ত ইওএস টেক্সটাইলকে কিনে নেয়ার কাজটি আগে করার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ এ ধরনের একটি ভালো অফার আমরা হারাতে চাইনি। আরো অনেকেই ইওএস টেক্সটাইলকে কিনতে আগ্রহী ছিলেন। ফলে আমাদের সেদিকেই মনোনিবেশ করতে হয়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বড় আকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাই একসঙ্গে ইওএস টেক্সটাইল ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করাটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু এখন ইওএস টেক্সটাইলের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এবার আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে মনোনিবেশ করতে পারব।

বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সক্ষমতা বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে সরকার এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও চাহিদা না থাকলে মেয়াদ না বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে...

দেখুন, দেশের সব অঞ্চলের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে কিন্তু অবস্থা অন্য রকম দাঁড়ায়। উত্তরাঞ্চলে কিন্তু সেভাবে কারখানা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু যদি সেখানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয়, তাহলে অবশ্যই কারখানা গড়ে উঠবে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা এখনো রয়েছে। এছাড়া যখন বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে, তখন এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদেরও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবহার করে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।

শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা?

ইওএস টেক্সটাইল অধিগ্রহণের মধ্যেও আমরা গত বছর সাধ্যমতো ভালো লভ্যাংশ দিতে চেষ্টা করেছি। ইওএস টেক্সটাইল অধিগ্রহণের পর আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে আমাদের রাজস্ব ও মুনাফা বাড়বে বলে আশা করছি। এতে আমরা শেয়ারহোল্ডারদের আরো বেশি লভ্যাংশ দিতে পারব। এছাড়া আমরা আইটি, টেলিকম ও সার্ভিস সলিউশন খাতের ব্যবসায় মনোনিবেশ করছি। ফলে আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদে আমাদের পারফরম্যান্স আরো ভালো হবে। তাই শেয়ারহোল্ডাররা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।

 

আপনাকে ধন্যবাদ

বণিক বার্তাকেও ধন্যবাদ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন