সৈকতে ভাঙন : কক্সবাজারে হুমকির মুখে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি কক্সবাজার

কক্সবাজার সৈকতে ভাঙনের কবলে পড়েছে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পরিচিত ঝাউয়ের বন। ক্রমাগত বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার ঝাউগাছ। এতে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্য। গত এক মাসে সাগর উত্তাল থাকায় তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের অন্তত ১০ হাজার ঝাউগাছ। আর গত সাড়ে চার দশকে ভাঙন ও নিধনের শিকার ঝাউগাছের সংখ্যা আট লাখের বেশি।

এদিকে গত ১৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঝাউবন রক্ষা ও আরো বাগান সৃজনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই সৈকতের ডায়াবেটিক থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটারে জিও টিউব বসিয়ে ঝাউগাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ঢেউয়ের তোড় সামলাতে না পেরে এরই মধ্যে জিও টিউবও বিলীনের পথে।

‘আমরা কক্সবাজারবাসী’র সমন্বয়ক নাজিম উদ্দিন বলেন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবুজ বেষ্টনী ঝাউবাগান হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া দুর্বৃত্তরা প্রতিনিয়ত বাগানের গাছ কেটে নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ঝাউবাগান দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে তাড়াহুড়ো করে জিও টিউব বসিয়ে ঝাউবাগান রক্ষা করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার পরিকল্পিত, টেকসই ও পর্যটকবান্ধব শহর রক্ষা বাঁধ।

তবে জিও টিউব বসানোয় নিম্নমানের কাজের অভিযোগ অস্বীকার করেন পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা। তিনি বলেন, বালিয়াড়ির ভাঙন ও ঝাউবাগান বিলীন হওয়া ঠেকাতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার লম্বা জিও টিউব স্থাপনের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু জোয়ারের ধাক্কায় জিও টিউবের কয়েকটি অংশ ফুটো হয়ে বিলীন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও রিসিভ না করায় মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬১-৬২ সালে কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথম ঝাউবাগান সৃজন করা হয়। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে এ বাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউবাগান সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে এ বাগানের অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়।

এরপর ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার ঝাউ চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় তিন লাখের বেশি ঝাউ চারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক, ১৯৯৮-৯৯ সালে পাঁচ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার, ২০০২-০৩ সালে আট হেক্টরে ২০ হাজার, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার ও ২০১০-১১ সালে পাঁচ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যেখানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে, অবস্থানগত কারণে হয়তো সেখানে নতুন চারা রোপণ করা যাবে না। তবে আগামী তিন বছরে ১৪০ হেক্টর এলাকায় আরো এক লাখ চারা রোপণ করা হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, সৈকতের ঝাউবাগান রক্ষা ও আরো বনায়ন সৃজনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন ঝাউগাছ রক্ষায় পাউবো জিও টিউব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন