ভাটারা থানার কাজ চলছে গুলশানে, যাত্রাবাড়ীর ডেমরায়

সারা দেশে ১৫ থানার কার্যক্রম চলছে বিকল্প স্থাপনায়

নিহাল হাসনাইন

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। ব্যাপক জনরোষে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশকিছু থানার ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো। বর্তমানে সবক’টি থানারই কার্যক্রম চলছে। তবে এর মধ্যে ১৫টির কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে থানার মূল কার্যালয়ের বাইরে অন্যত্র। এর মধ্যে রাজধানীর ভাটারা থানার কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে গুলশান থানার ভবনে। আর যাত্রাবাড়ী থানার কাজ চলছে ডেমরায়। 

ঢাকার বাইরে তিনটি থানার কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে। এর মধ্যে গাজীপুরে দুটি ও সিরাজগঞ্জে একটি থানার কাজ চলছে ভাড়া করা ভবনে। আর ১২টি থানার কার্যক্রম চলছে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টারসহ সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায়।

তবে ভাটারার মতো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) থানা দুটিতেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে সবচেয়ে বেশি। যেকোনো অভিযোগের প্রতিকারমূলক কার্যক্রমে সময় লাগছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। আবার দূরত্বের কারণে থানামুখী হচ্ছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। বিঘ্ন ঘটছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কার্যক্রমেও।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি করেন মনির হোসেন। অফিসের কাগজ হারানো-সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন ভাটারা থানায়। কিন্তু থানায় গিয়ে জানতে পারলেন, এখন ভাটারা থানার কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে চলছে গুলশান থানায়। দূরত্ব দুই কিলোমিটার। যদিও যানজটের কারণে যেতে-আসতে সময় লাগবে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা। দ্রুত অফিসে ফেরার তাড়া থাকায় জিডি না করেই ফিরে গেলেন মনির হোসেন। 

সরজমিনে ভাটারা থানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ফটকের বাইরে সারি সারি আগুনে পোড়া গাড়ি। থানা ভবনের ভেতরেও পোড়া মোটরসাইকেলের সারি। মূল থানা ফটকের সামনে বেঞ্চ নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন পুলিশ ও আনসার সদস্য। তার পাশেই পড়ে রয়েছে থানার মোস্ট ওয়ান্টেড বক্স। সেখানে কিছু জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখা গেছে। এর সঙ্গে কিছু ছবিও রয়েছে। ছবিগুলো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রগুলো অক্ষত রয়েছে। তিনতলা থানা ভবনের নিচতলায় ১১টি কক্ষেই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের চিহ্ন বিদ্যমান। থানার গারদখানার গেটেও হামলার চিহ্ন স্পষ্ট। বর্তমানে গারদখানায় কোনো আসামি নেই। প্রথম তলার মতোই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়ও ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ক্ষত দৃশ্যমান। মিস্ত্রিরা কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামতের মধ্য দিয়ে থানা ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছেন তারা।

ভাটারা থানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ভাটারা থানায় ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত থানা ভবনটি মেরামতের কাজ চলছে। আর থানার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে গুলশান থানার জন্য নবনির্মিত ভবন থেকে।’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল যাত্রাবাড়ী এলাকা। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে মূল থানা ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে যাত্রাবাড়ী থানা ভবনের মেরামত চলছে। পাশাপশি থানার কার্যক্রম চলছে ডেমরা থানা থেকে। কিন্তু স্বল্প দূরত্বের রাস্তা হলেও তীব্র যানজটের কারণে যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা থানা এলাকায় গিয়ে সেবা নিতে চাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. ওবায়দুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার পতনের পর ডিএমপির সব থানাই কম-বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভাটারা থানার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে গুলশান থেকে। আর যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ডেমরা থানা থেকে। মেরামতকাজ শেষ হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাটারা ও যাত্রাবাড়ী থানা আগের ঠিকানায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ডিএমপির দুটি থানার বাইরে সারা দেশে আরো ১৩টি থানা নিজ স্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এর মধ্যে নোয়াখালীর চাটখিল থানা, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পতেঙ্গা থানা ও ইপিজেড থানা, রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট থানা, হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানা, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা, শেরপুর সদর থানা ও বগুড়া সদর থানা নিজেদের স্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। ব্যাপক মাত্রায় জনরোষের শিকার থানা স্থাপনাগুলো ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়েছে। ফলে স্কুল, কমিউনিটি সেন্টারের মতো সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় এসব থানার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

আর ভাড়া করা ভবনে চলছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানা ও জেলা পুলিশের অধীন জয়দেবপুর থানা এবং সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার কার্যক্রম। নিজস্ব থানা স্থাপনার মেরামত শেষে এগুলো আবার আগের ঠিকানায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘থানার নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিজস্ব স্থাপনা সবসময়ই শ্রেয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৫টি থানার কার্যক্রম বিকল্প স্থাপনা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। মূলত দ্রুত সেবা কার্যক্রম চালু করার জন্যই বিকল্প স্থাপনা থেকে থানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামতকাজ শেষে থানাগুলো নিজস্ব স্থাপনায় ফিরে যাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন