শ্রমিক অসন্তোষ

আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১৫৮ কারখানায় সাধারণ ছুটি

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ৯১টি

নিজস্ব প্রতিবেদক

( ফাইল ছবি)

ঢাকার আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ থামেনি। আন্দোলনের মুখে এ দুই এলাকার অন্তত ১৫৮টি কারখানায় গতকালও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হয় মালিক পক্ষকে। এর মধ্যে আশুলিয়ার কারখানা রয়েছে ১৩৩টি। বাকি ২৫টি গাজীপুরের। এ ১৫৮টি কারখানায় শুধু গতকালের জন্যই ছুটি ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষিত কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১।  

সাভার প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়ায় চলমান অস্থিরতায় সহস্রাধিক পোশাক কারখানার মধ্যে ২১৯টিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আজ (গতকাল) আশুলিয়ায় সাধারণ ছুটি ঘোষিত কারখানার সংখ্যা ১৩৩।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথ বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছি। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

শিল্প পুলিশ জানায়, দুই শতাধিক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কোথাও সড়ক অবরোধ কিংবা কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেনি। কিছু কারখানার অভ্যন্তরে আগে থেকেই কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা গতকাল কাজে ফেরেননি। 

এদিকে আশুলিয়ায় ভাংচুর ও মারধরের অভিযোগে ২০ শ্রমিকের নামে মামলা হয়েছে। আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ এ মামলা করেছে। জামগড়া এলাকার কারখানাটি বুধবার থেকে বন্ধ আছে। কারখানার ফটকে টাঙানো আছে অভিযুক্ত শ্রমিকদের নামের তালিকা। 

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, গতকাল পর্যন্ত কারখানায় হামলা, ভাংচুর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধরের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় ‘অজ্ঞাত বহিরাগতদের’ আসামি করা হয়েছে। আরেক মামলায় আসামি করা হয়েছে ২০ শ্রমিককে। 

বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘শ্রমিকদের নামে মামলা করা অশুভ লক্ষণ। এ সংকটের সময় শ্রমিকদের নামে মামলা করা মানেই হচ্ছে তাদের উসকে দেয়া।’

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, দু-একটি পোশাক কারখানায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জেলাজুড়ে অস্থিরতা কমে এসেছে। উৎপাদনে ফিরেছে প্রায় সব কারখানা। কারখানার নিরাপত্তায় থানা ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শিল্প এলাকায় সেনাবাহিনী টহল দিয়ে যাচ্ছে। 

গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘বুধবার গাজীপুরে যে ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, তার মধ্যে কয়েকটি কারখানা খুলেছে, আবার নতুন করে কয়েকটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে গতকাল ২৫টির মতো পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। আর পাঁচটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। তবে গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও টঙ্গী এলাকায় পোশাক কারখানার সার্বিক পরিস্থিতি ছিল প্রায় স্বাভাবিক।’

গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের সারাবো এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন। তবে গত দুদিনের তুলনায় গতকাল বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেকটাই কম। 

মালিক, শ্রমিক ও শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিক বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাজ করেন। বুধবার রাত পর্যন্ত ৮০ শতাংশ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়। কেবল টেক্সটাইল ইউনিটের শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়নি। এ ইউনিটের শ্রমিকদের বেতন হয় মাসের ১৫ তারিখে। গতকাল টেক্সটাইল ইউনিটের শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে তারা কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখেন। টঙ্গীতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে সকালে কর্মবিরতি করে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বুধবার কাশিমপুর এলাকায় বিগ বস করপোরেশন লিমিটেডের গুদামে আগুন দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার (প্রশাসন) এমএম হাবিবুর রহমান জানান, কারখানার পণ্যাগারে (ওয়্যারহাউজ) আগুন দেয়ার ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। এতে ৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। 

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, জিরানী, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও চট্টগ্রাম এলাকায় মোট কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৪৪টি। এর মধ্যে গতকাল খোলা ছিল এমন কারখানা সংখ্যা ২ হাজার ২৯। সাময়িক বন্ধ বা ছুটিতে থাকা কারখানা সংখ্যা ১১৫। আগস্টের বেতন দেয়া কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৫। বেতন হয়নি ৫৪৯টি কারখানায়। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন