নবগঠিত কমিটির মতবিনিময় সভা

জ্বালানি সরবরাহ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি বিটিএমএর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

টেক্সটাইল শিল্প এখন পরিত্যক্ত খাতে পরিণত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধানতম এ খাতকে বাঁচাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারের প্রতি বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। 

গতকাল রাজধানীর ইউটিসি ভবনে বিটিএমএ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবগঠিত কমিটির মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত টেক্সটাইল মিল মালিকরা এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত সহসভাপতি ও যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম ও নবনির্বাচিত সহসভাপতি আবুল কালাম।   

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘টেক্সটাইল খাত নিয়ে কেউই চিন্তা-ভাবনা করে না, মনোযোগ নেই। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রধানতম খাত হলেও সরকারের সব প্রণোদনা, ভর্তুকি দেয়া হয়েছে জ্বালানি খাতে। বিদ্যুৎ খাতের যৎসামান্য প্রণোদনা টেক্সটাইল খাতে দেয়া হলে এ খাত সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করতে পারে। টেক্সটাইল খাত ২২ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। এ খাতের ৪৫ শতাংশই মূল্য সংযোজন হয়। তারপরও এ খাতে কারো নজর নেই। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এ মুহূর্তে টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাত ছাড়া উপায় নেই। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ এবং ব্যাংক ঋণ ও এলসি খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডলার দরকার। পাশাপাশি শ্রম অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ খাতের সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সংলাপ দরকার। অন্যথায় ভয়াবহ ভবিষ্যৎ দেখছি। বিদেশে অলরেডি ভাবমূর্তির অবস্থা খারাপ। শিগগিরই এটা পুনরুদ্ধার করা না গেলে অর্ডার ছুটে যাবে। এখন পর্যন্ত বায়ারদের কনফিডেন্সে রাখতে পেরেছি। কিন্তু আজও ৬০টি কারখানা বন্ধ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে।’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্থানীয় শিল্পকে প্রণোদনা দেয় উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘প্রণোদনা শব্দটা শুনতে খারাপ লাগে, মনে হয় খয়রাত চাচ্ছি। ব্যাপারটা এমন না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেয়। এটা কিন্তু তারা শখ করে দেয় না, নিশ্চয়ই বেনিফিট আছে। টেক্সটাইল খাতে প্রণোদনা দিলে কর্মসংস্থান হয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। আওয়ামী সরকারের আমলে যে পরিমাণ লুটপাট হয়েছে, তার ১০ শতাংশ টেক্সটাইল খাতে প্রণোদনা হিসেবে দিলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। তাই এটাকে খারাপভাবে দেখার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংকট মোকাবেলায় সঠিক পরিকল্পনা করা হয়নি। পুরো শিল্প খাত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এলএনজির কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই গ্যাস পেয়েছি ১৮ মাস পর। কিন্তু আমরা এ ১৮ মাস বাড়তি দাম দিয়ে আসছি। এ টাকাগুলো কোথায় গেল।’

চলমান শ্রমিক অসন্তোষ প্রসঙ্গে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা শান্তিপ্রিয়। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক অতুলনীয়। এখন বহিরাগত একটি চক্র গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। গত সরকারকে বাঁচাতে প্রশাসন যেই ভূমিকা নিয়েছিল, সেই ভূমিকা এখন নেয়া উচিত দেশ গড়ার জন্য। তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রণোদনা বাতিল করা হয়েছে অভিযোগ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘উৎপাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশের নিচে কারখানাগুলো চালানো হচ্ছে। অথচ ১২-১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এগুলো একেবারেই মিথ্যা কথা। রাজনৈতিক বাহ্বা পেতে এসব মিথ্যা পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। আমরা নেতিবাচক ধারায় আছি। এলডিসি উত্তরণে রফতানির পুরো তথ্যই মিথ্যা। ৪৮ বিলিয়ন ডলার রফতানি দেখানো হয়েছে। সরাসরি রফতানিকেও রফতানি দেখানো হয়েছে, আবার প্রচ্ছন্ন রফতানিকে রফতানির হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে।’ 

যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিটিএমএর নবনির্বাচিত সহসভাপতি শামীম ইসলাম বলেন, ‘জিডিপিতে টেক্সটাইল খাতের অবদান ১৩ শতাংশ, টাকার অংকে যা ৬ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্সের পরই এ খাতের অবদান। কিন্তু টেক্সটাইল খাত এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এটি উত্তরণে সরকারের সহায়তা দরকার। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে কিছু নীতি পরিবর্তন করতে হবে।’  

চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিটিএমএর নবনির্বাচিত সহসভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সফট ঋণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক শ্রমিকদের এক মাসের বেতন দিতে সম্মত হয়েছে। ৯০ শতাংশ কারখানা মালিকই সেই ঋণ পায়নি। কিন্তু শ্রমিকদের মধ্যে এ তথ্য পৌঁছে গেছে যে সরকার এ টাকা তাদের দিয়েছে অনুদান হিসেবে। এটাও শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে প্রোপাগান্ডা হিসেবে কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে সওয়ার হয়েছে। সেখান থেকে সড়কপথের পরিবর্তে শুধু সমুদ্রপথে সুতা আনার বিধান করতে হবে।’

মতবিনিময় সভা আরো বক্তব্য রাখেন বিটিএমএর পরিচালক মোশাররফ হোসেন, খোরশেদ আলম, সালেহুজ্জামান জিকু ও রাজিব হায়দার মুন্না। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন