আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে

ছবি : বণিক বার্তা

বর্তমানে দেশের যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সেদিক বিবেচনায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কোন ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছে?

আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে কার্যক্রমগুলো এখনো আমলানির্ভর। এটা বলছি এ কারণে, যখন নতুন একটা কোম্পানি প্রকাশ্যে আসে তখন ১৫০-এর বেশি অনুমোদন নেয়ার জন্য আমাদের প্রায় ২৩-৩০টি এজেন্সির কাছে যেতে হয়। এখন ভেবে দেখুন কেউ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আসার পর তাকে যদি এতগুলো অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হয়, তখন এটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। 

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যায়, লজিস্টিকসের কথা। এটা আমাদের জন্য বড় একটি কাজ। আমাদের এখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার লজিস্টিকস কোনো কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে অ্যানাবলার বা বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সম্প্রতি ন্যাশনাল লজিস্টিকস পলিসিও প্রণয়ন করা হলো, এজন্য আমাদের বহুদূর যেতে হয়েছে। 

তৃতীয়ত, ইনভেস্টের আফটার কেয়ার বা বিনিয়োগ-পরবর্তী সময়ে এর দেখভাল করা। আমার মতে, বিনিয়োগ বা বিনিয়োগকারী এলেই তো হবে না। বিনিয়োগ করার পর এর যত্ন নিতে হবে। অনেক কোম্পানি ১৫০ বছরের পুরনো। আমি যে কোম্পানিতে আছি, সেটা ৬০ বছরে পুরনো। আমরা এ দেশে অনেক বছর ধরে আছি বলে আমরা জানি চ্যালেঞ্জগুলো কী। কিন্তু নতুন কোনো কোম্পানি বা বিনিয়োগকারী এলে তাকে সমর্থন দিতে হবে, তার যত্ন নিতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে তো আপনারা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এগুলো দূর করার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের প্রস্তুতি কেমন বা তারা কীভাবে সাড়া দিয়ে থাকেন?

আমি বলব, তারা এখন অনেক বেশি উন্মুক্ত। শিগগিরই আমরা বিডার সঙ্গে একটা বড় কাজ শুরু করব। এখন আমরা এর পরিকল্পনা করছি। নতুন বিনিয়োগকারীরা এসে কী করে সেটার জন্য আমাদের একটি জার্নি ম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য একটা ভার্চুয়াল সলিউশন বের করতে হবে। যাতে আমরা লোকজনকে বোঝাতে পারি যে নতুন বিনিয়োগ এলে প্রথমে কী দেখতে হবে, কোথায় যেতে হবে, কার কাছে যেতে হবে। আমি যদি জমি কিনতে চাই, তাহলে কোথায় যাব। কেননা যখন কোনো বিনিযোগকারী প্রথম আসে তখন বেপজা, বেজা, ইপিজেড সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। কিন্তু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোও যে সমাধানযোগ্য সেটি তাকে বোঝাতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে, আমাদের এই ইন্টিগ্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। 

আরো একটি বিষয় হচ্ছে আমাদের ট্যাক্স রিফর্ম রেট পলিসি। এর জন্য নতুন বাজেটে এনবিআরের কাছে ফিক্কির একটি প্রস্তাব ছিল। যেখানে আমরা একটি ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের কথা বলেছি। এর প্রথম ধাপ হিসেবে এনবিআরের ইনকাম ট্যাক্স, ভিএটি ও কাস্টমস এ তিনটা ভার্টিকেলকে একীভূত করা গেলে তা সার্বিকভাবে খুবই সহজ হবে। আমরা চাই, বিনিয়োগকারীরা যেন ভার্চুয়ালি বা অনলাইনে এসব কাজ করতে পারবে। এখন আমাদের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার অনেক কিছু অনলাইনে থাকলেও দেখা যাচ্ছে এটা আমরা একটা ফাইল করতে পারি। তবে ফাইল করলেও কিন্তু এটার একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে যেতে হচ্ছে। অর্থাৎ এর একটা ম্যানুয়াল ভার্সন রয়েছে। আমরা এটাকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দিতে চাই। যে কারণে এ তিনটি জিনিসকে কীভাবে সামনে আনা যায় সেটি নিয়ে কাজ করছি। আমরা এনবিআরের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের আশা, বাজেটের পর আমরা এসব কাজ করতে পারব।

আপনি যে অনলাইন ইন্টিগ্রেশনের কথা বলছেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বেশকিছু উদ্যোগের বিষয়ে আমরা জানি। আপনারা বলছেন একটা জার্নি ম্যাপ দরকার। এগুলো কি আপনাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এগোচ্ছে?

প্রথমেই বলতে হয় এসব উদ্যোগের সংস্কার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সবকিছু একত্র করতে হবে। ওএসএস (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) কিন্তু ভালো সংস্কার। কেননা এ পরিষেবার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বিডায় যাওয়ার পর আমি এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। উদাহরণস্বরূপ হয়তো একজন বিনিয়োগকারী এখন সৌদিতে আছেন। তিনি চিন্তা করছেন, আমার কাছে এ টাকা আছে, এটা আমি বিনিয়োগ করব। তিনি প্রথম হয়তো সেখানকার দূতাবাসে যাবেন। অথবা অনলাইনে গবেষণার মাধ্যমে সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন। এখন সবকিছুই একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এগুলো একত্র করে এক জায়গায় নিয়ে আসতে চাই। সেক্ষেত্রে ইনভেস্ট বাংলাদেশ একটা স্লোগানও তৈরি হলো। এখন ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ এ জিনিসটা কী? অনেকে এখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে সেভাবে জানে না। অনেকে জানে এটা একটা হাফ আ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশ, এখানে ১৭ কোটি মানুষ আছে। একটা অংশ আছে যারা অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও ধনী। আপনি যখন এসব প্রেক্ষিত তুলে ধরবেন তখন তারা মনে করবে যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা যায়। এরপর তৈরি পোশাক খাতে আমাদের যে সাফল্য তারা দেখবে, তখন বুঝবে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। তারপর বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু আসার পর যে কাজগুলো করা লাগবে সেগুলো এক জায়গায় নিয়ে আসাই হলো ইন্টিগ্রেশন। 

বিনিয়োগকারীদের ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ দিতে হবে। সেখানে কোনো সমস্যা থাকলে বিনিয়োগকারীরা আসবে না। বিনিয়োগের ব্যাপারটিকে আমরা যত সহজ করব, বিনিয়োগকারী তত বেশি আসবে। 

একটা উদাহরণ দিই। ভারতে আমার কয়েক বছর চাকরি করার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে ইএস ইন্ডিয়া নাম একটা টিম আছে। ওরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ আছে। আপনি সেখানে সচিবালয়ের মতো একটা ভবনে যাবেন, দ্বিতীয় কি তৃতীয় তলায়। দেখবেন সেখানকার অফিসপ্রধান হলেন এমআইটি গ্র্যাজুয়েট। এছাড়া স্ট্যামফোর্ড, প্রিন্সটন ও হার্ভার্ডের গ্র্যাজুয়েটরা বসে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করছেন। মেধাবী তরুণরা দেশে ফিরে এসেছেন। বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস আপনাআপনি বেড়ে যাবে। বিনিয়োগকারীদের একই ধরনের অভিজ্ঞতা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদেরও। 

আঙ্কটাডের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি যদি আপনি পড়েন, ২০২৩ সালে এফডিআই বিনিয়োগ বৈশ্বিকভাবে প্রায় ১৬ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এটা কিন্তু ৯ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এটা বাংলাদেশে আসেনি। ভারত বা এর পার্শ্ববর্তী দুই একটা দেশে গেছে। এটা নিয়ে আসার জন্য আমরা কী করতে পারি? আমাদের সম্ভাবনাময় অনেক খাত আছে এ বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য। 

আপনি যে মেধাবীদের কথা বলছিলেন, বাংলাদেশে কম হলেও তারা আছেন। আমরা তাদের কীভাবে এ খাতে আনতে পারি? 

বাংলাদেশে কিন্তু আমাদের সিনিয়র অনেক ট্যালেন্ট আছেন। আমাদের কিন্তু রিসোর্সের কোনো অভাব নেই। কিন্তু তাদের নিয়ে আসতে হবে। কাজ করার জন্য তাদের কাছে এ খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। অনেকে দেশের টানে আসবেন, অনেকে আসবেন দেশে সেই ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে বলে। আমার মতে, এটা কখনই একটা চ্যালেঞ্জ না। 

আপনি বিদেশী বিনিয়োগের কথা বলছিলেন। আমরা কাঙ্ক্ষিত হারে বিনিয়োগ পাচ্ছি না। বিদ্যমান ক্ষেত্রে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের একটা প্রবণতা দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে কিনা।

বাংলাদেশে ব্যবসা করাটা কখনই খুব সহজ না, আবার অসম্ভবও নয়। এটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। যেকোনো উন্নয়নশীল দেশেও এ ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। এমনকি অনেক উন্নত দেশেও ব্যবসা করা কঠিন। ব্যবসা মানেই সেখানে চ্যালেঞ্জ থাকবে। ব্যবসার জন্য মৌলিকভাবে কিছু জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার একটা মডেল আছে এফডিআইয়ের জন্য। সেটা হলো থ্রি সি। প্রথমটা হচ্ছে ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা। এর অর্থ হলো কোনো বিনিয়োগকারীর মধ্যে এ বিশ্বাস থাকবে যে কোথাও বিনিয়োগ করলে সেখানে তার টাকা বা প্রতিষ্ঠানটি নিরাপদ থাকবে। এর জন্য কিছু আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইপিআর রাইট, ট্রেড মার্ক এগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অলটারনেট ডিসপিউট রেজল্যুশন (এডিআর)। আমাদের কিন্তু এ দুটোতেই অনেক দুর্বলতা আছে। এগুলোর প্রয়োগের সঙ্গে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়তে থাকবে। আমার পেমেন্ট করতে পারছি না। এটা একটা ইউনিক পরিস্থিতি হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। রিপ্যাট্রিয়েশন অব প্রফিট। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসলে তারা পুঁজি বাড়িয়ে নিতে চাইবে। দ্বিতীয় সি হলো কনসিসটেন্সি বা ধারাবাহিকতা। কোনো ব্যবসা সারপ্রাইজ পছন্দ করে না। ব্যবসা মানেই প্রেডিক্টিবিলিটি চায়। আমি আজকে ইনভেস্ট করলাম, কালকে ট্যাক্স বেড়ে গেল, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বেড়ে গেল। তাহলে কিন্তু আমার ব্যবসার মডেলই হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এসব ব্যাপার কীভাবে সমাধান করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। 

আমরা বলি, আমাদের ট্যাক্স রেট কমছে। কিন্তু ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বলতে পারেন, ট্যাক্স রেট ২০ শতাংশ, কিন্তু ইফেকটিভ ট্যাক্স রেট যদি ৪৫ শতাংশ হয়, তাহলে তো আমি আনকম্পিটিটিভ হয়ে যাব। এই ব্যাপারগুলো বুঝতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবশেষ হচ্ছে ক্যাপাসিটি। এন্ড ক্যাপাসিটি প্রথম জিনিস চলে আসছে, বিডার সঙ্গে যে কথাটা বললাম যে আমার ওই ক্যাপাবিলিটি থাকতে হবে। আমি আমার ইন্ডাস্ট্রিকে দেখিয়ে, ওদের ডিল ক্লোজ করে আপনাকে নিয়ে আসতে পারি। 

দ্বিতীয়ত, আমাদের এখানে ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সিমপ্লিফিকেশন করতে হবে। আমাদের ট্যাক্সের একটা বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের ট্যাক্স কিন্তু পরোক্ষ ট্যাক্সের ওপর নির্ভর করে। সুতরাং খুব কাঠামোগতভাবে প্রত্যক্ষ ট্যাক্সে আসতে হবে। আরেকটি জিনিস হলো আমাদের ভিএটি খুব জটিল। আমাদের কিন্তু একটা ভ্যাট ল হয়েছিল। এটা খুব ভালো সংস্কার ছিল। কিন্তু ওটা এটা ছিল যে ভ্যাটটা এখন বিভিন্ন স্টেজে দিই। ফলে অনেকেই রিডিম করতে পারেন না। ইফেকটিভলি এটা কিন্তু কাজে দেয় না। আমাদের এই পুরো জিনিসটা সংস্কার করতে হবে। এর সঙ্গে তৃতীয় যে বিষয়টি যুক্ত ছিল, ইন্টিগ্রেশন। এ জিনিস তিনটি পিলারের কাজ করছে। এগুলো একসঙ্গে কাজ করলে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। এই থ্রি সি যাতে আমার মাথায় থাকে। ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা, কনসিসটেন্সি আর কোনো সারপ্রাইজ যাতে না থাকে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। 

ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের যে সমস্যা আছে, সেটি আমাদের আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা নাকি যোগাযোগের ঘাটতি? এক্ষেত্রে আসলে সমস্যা কোথায়?

এটা বলা কঠিন। শুধু আমলাতন্ত্রের ওপর দোষ চাপালে ঠিক হবে না। আমরা মূলত আলাদা থেকেই সব কাজ করি। ব্যবসায়ী হিসেবে আমি গিয়ে বলি আমার ট্যাক্স কমাতে হবে। কিন্তু দিন শেষে ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স কমানো আমাদের লক্ষ্য না। আমাদের দেশকে প্রতিযোগিতামূলক হিসেবে গড়ে তোলাই আসল উদ্দেশ্য। এছাড়া অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে রাজস্ব বাড়ানো। কারণ আমাদের রাজস্ব আয় যদি না হয় তাহলে হবে না। কেন হবে? কারণ সরকারের যদি আয় না থাকে তাহলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বা ব্যয় করা যাবে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করলেই বাজার বড় হবে। আর এসব কারণে আমাদের কালেকটিভ ইন্টিগ্রেশন দরকার। যেখানে আমাদের আমলাতন্ত্র, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একসঙ্গে কাজ করে দেশকে কীভাবে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটি নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে ইফেকটিভ ট্যাক্স কমিয়ে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে রাজস্ব বাড়াতে হবে। কেননা রাজস্ব না বাড়লে ব্যবসায়ী হিসেবে আমার ক্ষতি হবে। এর জন্য কিন্তু আমরা ফরেইন ইনভেস্টর চেম্বার ভিয়েতনাম ও ভারতের অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে একটা সিমুলেশন করেছি। আমরা বলছি ২০ শতাংশ ট্যাক্স যদি বাড়ানো বা কমানো হয় তাহলে এর প্রভাব কী? আমাদের সিমুলেশন বলছে, আমরা যদি ২০ শতাংশ ট্যাক্স কমাই তাহলে ১৪ শতাংশ এফডিআই বাড়াতে পারব। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে রাজস্ব আয় ছয় গুণ বাড়বে। আপনি যদি ২০ শতাংশ ট্যাক্স বাড়ান, তাহলে রাজস্ব বাড়বে দুই গুণ। শুধু ফান্ডামেন্টাল মডেলিং করতে হবে যে যেখানে আমরা এই অপটিমাইজেশন করতে পারি, সেখানেই এ পরিবর্তন আসবে। 

এবার সম্ভবত সর্বোচ্চ করহার নিয়ে আপনাদের প্রস্তাব আছে। নতুন বাজেটে এটি নিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন কিনা।

করপোরেট করহার কমানো হবে বলে শুনছি। যখন বাজেট আসবে, তখন এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। আমি যতদূর জানি যে সব করহারেই একটা সংস্কার আসছে, পার্সোনাল করহারের সীমা বাড়ছে। করহারের সঙ্গে ইফেকটিভ করহার। আমরা যতই সংস্কার করি, ইফেকটিভলি যদি ৪৫ বা ৫০ শতাংশ দিই, তাহলে তো সেটার আসল পয়েন্টটাই চলে যায়। আর ব্যক্তিগত করহারের বিষয়ে যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তাহলে আমি এটা থেকে উপকৃত হব না।

এবারের বাজেট থেকে আপনার প্রত্যাশা কী? 

আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি কিন্তু খুব বেশি না। চার-পাঁচটা জিনিস। রফতানি, রেমিট্যান্স, গ্রান্টস বা ঋণ, অভ্যন্তরীণ ভোগ ও ব্যবসা। এখন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, রেমিট্যান্স উৎসাহিত করতে হবে। এ কারণে সরকার এক্সচেঞ্জ রেট, ইন্টারেস্ট রেট ও পলিসি রেটে বেশ পরিবর্তন এনেছে। এর সঙ্গে আরো কয়েকটি জিনিস করতে হবে, যেগুলো সরাসরি রেমিট্যান্সের পরিবর্তে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেটা হলো ফিসক্যাল ইমব্যালেন্স ঠিক করা। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে ব্যবসা ও কর পরিবেশ। এগুলো যদি আগের তিনটি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে পারি তাহলে বড় পরিবর্তন আসবে।

অর্থনীতির দুটি মৌলিক দিক এক্সচেঞ্জ রেট ও ইন্টারেস্ট রেট নিয়ে নীতিমালাগত যে চড়াই-উতরাই চলছে, সেটা কি আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক?

স্বল্পমেয়াদে এটা আমাদের সবার জন্যই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। মুদ্রা অতিমূল্যায়িত হওয়ার পর এর সংস্কার বা সমাধান না করা হলে এটি ক্ষতির কারণ হবে। মূল্যস্ফীতির হেউউইন কিন্তু কিছুদিন থাকবেই। কারণ দেশ হিসেবে আমরা আমদানিনির্ভর। কাঁচামালও আমরা আমদানি করি। অন্যদিকে যে সুদহার রয়েছে তা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের (এসএমই) জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হবে। আমাদের দেখতে হবে পরিবেশক যেন ঠিক থাকে। তা না হলে তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে।

কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণায় আমরা যদি এটা বাজারের ওপর ছেড়ে না দিই, তাহলে কি এ সংস্কার বা কারেকশনের জায়গা পাওয়া যাবে?

বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে। আমি অর্থনীতিবিদ না, এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার জন্য আমি ভুল ব্যক্তি। নীতিটা হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবায়নে আপনি যদি দেখেন ক্রলিং পেগ বলে আমরা যেটা করছি সেটা হলো ম্যানেজড। বেশকিছু ফ্রি মার্কেট ম্যানেজড। আপনি যদি দেখেন আমরা প্রায় ১১০ থেকে ১১৭-তে চলে এলাম। আমার কার্ব মার্কেট ১২৫-এ গেল। কিন্তু কার্ব মার্কেট ১২০-এ চলে এসেছে। আপনি যদি ঐতিহাসিকভাবে দেখেন কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ৩-৪ টাকা পার্থক্য থাকলে আপনার কারেন্সি স্থিতিশীল থাকে। এক্সপোর্টের এবং রেমিট্যান্সের টাকাগুলো আসে কিনা, আমার ধারণা আসবে। যে মুহূর্তে রেমিট্যান্সের টাকা আসবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থনীতি ইতিবাচক হয়ে যাবে। এটার স্বল্পমেয়াদে গেইন আছে। আমি যদি ব্যক্তিগত ব্যবসার কথা চিন্তা করি অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটাই সঠিক পদক্ষেপ। আপনি যদি দেখেন যেকোনো ক্ষেত্রেই এটা সঠিক উদ্যোগ। আমি তো বলি যে সেকেন্ড মুভটা যে ফিসক্যাল পলিসি সংস্কার, আরেকটা আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার, আর তৃতীয়ত ট্যাক্স এন্ট্রি পলিসি রিফর্ম। আপনি যদি দেখেন নব্বইয়ের দিকে মনমোহন সিং ভারতে ফিসক্যালের একটা বড় সংস্কার করেছিলেন। তখনই ভারতে এফডিআই অনেক বেড়েছিল। আমাদের কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক সুযোগ আছে। অনেক স্টেট অব এন্টারপ্রাইজ আছে, যেখানে সিগনিফ্যাক্ট ভ্যালু লকড হয়ে আছে। এটাকে যেন আমরা রিলিজ করি। এই যে আপনি বললেন, আমাদের দেশেই এত ট্যালেন্ট আছে, উনাদের কি আমরা দিতে পারি না। উনারা এখন অবসর নিয়েছেন, কিন্তু উনাদের এমপ্লয়বিলিটি তো অনেকদিন আছে। আমাদের প্রথম কাজই হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট তৈরি করা। তাহলে কিন্তু আপনি সিগনিফিক্যান্স ফিসক্যাল বের করতে পারবেন। ফিসক্যাল সংস্কারের এটা একটা অংশ হবে। আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের সংস্কার কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয়। এটা আমাদের করতে হবে। আমি জানি এখানে মার্জার নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এটা তো একটা উপকরণ মাত্র। কিন্তু এখানে একটা পুনর্গঠন দরকার।

এই মুহূর্তে কী পদক্ষেপ নিলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করছেন?

এক্ষেত্রে সিলভার বুলেট বলে কিছু নেই। আমি যেটা বললাম যে আমাদের কিছু রেগুলেটরি সংস্কার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমরা কত সহজে বিনিয়োগকারীদের অন-বোর্ড করতে পারি, আফটার কেয়ার নিতে পারি সেটা মুখ্য। দ্বিতীয়ত ট্যাক্স ও ট্রেড নীতিমালা কতটা সংস্কার করা গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা কতটা সংস্কার করতে পারি। আপনি যদি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রিপ করবে, তাহলে যেকোনো বিনিয়োগকারী কিন্তু চিন্তিত থাকবেন। এগুলোর কোনোটাই কিন্তু রাতারাতি পরিবর্তন করা যাবে না। বরং আমরা যদি লক্ষ্য ঠিক করি, বৈশ্বিক এফডিআইয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। আমাদের চিন্তা করতে হবে, এর অন্তত ১০ বিলিয়ন আমরা নিতে পারি কিনা। আমরা তো জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম দেশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, পরিকল্পিত বিনিয়োগ না হলে গ্যাস-বিদ্যুৎ দিয়ো না। ব্যাংক ঋণ না দেয়ার নির্দেশনাও রয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর ইকোনমিক জোনের বাইরে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তাদের বক্তব্য ছিল আমার বিনিয়োগ সম্প্রসারণ তো বন্ধ হয়ে গেল। পরিকল্পিত বিনিয়োগ নিয়ে আমরা সঠিক পথে আছি কিনা।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিগত কিছু অধারাবাহিকতা দেখি। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আপনি দেখবেন ইপিজেডে তৈরি পোশাকে শিল্পে টাইপ এ, বি, সি ও ডি বলে কোম্পানি আছে। টাইপ সি হচ্ছে ১০০ ভাগ ডোমেস্টিক টাইপ, টাইপ এ হচ্ছে ১০০ ভাগ বিদেশী এবং টাইপ বি হচ্ছে দুটোর মিশেলে। টাইপ সি কোম্পানিগুলোয় আমরা ৪ শতাংশ প্রণোদনা দিই। কিন্তু টাইপ এ, বি-তে দিই না। এটা তো পলিসি ইনকনসিসটেন্টসি বা অধারাবাহিকতা। আমি যদি সবাইকে ইপিজেডে নিয়ে আসে, সবাইকে বলি যে আসার কারণে তুমি কিছু প্রণোদনা পাবে, তাহলে তো ধারাবাহিক হওয়ার৷ কথা। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার মতে এ প্রণোদনা নেশার মতো। এ নেশা বা নির্ভরতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সরকারি পর্যায়েও এ সমস্যা রয়েছে। তাই এগুলো যথাসম্ভব কমিয়ে আনা উচিত। বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে হবে। বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করতে গেলে এসব বিষয় সামনে আসবে। তাই আমাদের আরো বেশি দক্ষ হয়ে ওঠার বিষয়ে কাজ করতে হবে।

 রয়্যালটি ফি নিতে যে সমস্যাগুলো হচ্ছিল, সেগুলো কি এখন সমাধান হয়ে গেছে?

আমি বলি রয়্যালটি ফি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পর্কিত একটি জিনিস। এটা আগের চেয়ে অনেক সহজতর হয়েছে। আগে বিডার মধ্যে অনেক জটিলতা ছিল। এগুলো এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবে এখনো অনেক সুযোগ আছে। শর্ট টার্মে কিছু রয়্যালটি রিপ্যাট্রিয়েশনের জন্য ঝামেলা হচ্ছে। আমাদের দেশে তো কারেন্সি থাকতে হবে!

বাজেটকে ঘিরে বিশেষ কোনো বিষয় আছে, যেটার ওপর গুরুত্বারোপ করতে চান?

আমাদের দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তিগুলোর জন্য আমাদের একটা ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কমিটি করা দরকার। যেখানে বসে ট্যাক্স, পলিসি বা লজিস্টিকস সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলা যাবে। আমরা যদি ১০ বিলিয়নের উচ্চাকাঙ্ক্ষা করি, তাহলে আমাদের জাতীয়ভাবে সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত, এসব জিনিসকে ডিজিটালাইজড করা দরকার। তথাকথিত ডিজিটালাইজেশন নয়, বরং ইন্টিগ্রেটেড ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরি করতে হবে। 

তৃতীয়ত, এসব অবকাঠামোর অনেক কিছু আসলে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর চালানো শুরু করা উচিত। এটা এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমার যদি কোনো বিনিয়োগকারী আনতে হয়, তাদের সঙ্গে কিন্তু একই ভাষায় কথা বলতে হবে। আমি কিন্তু জিজ্ঞেস করব, রিটার্ন-অন ক্যাপিটাল ইমপ্লয়েড, গ্রস মার্জিন কত, ইনক্রিমেন্টারি ইনভেস্টমেন্টের ফলে রিটার্ন কত হবে, পে-ব্যাক কত হবে, আমাকেও কিন্তু ব্যাখ্যা করতে হবে এ ইন্ডাস্ট্রির পে-ব্যাক এত। আমাদের দেশে কিন্তু এখন যথেষ্ট রিসোর্স আছে এটা নিয়ে আসার। সর্বশেষ আমাদের কিন্তু সিগনিফিক্যান্ট ভ্যালু আটকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয়। এগুলোকে বেসরকারীকরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বাজেট-পূর্ব আলোচনাগুলো কার্যকর করার জন্য সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

একেবারেই কোনো সংস্কার হচ্ছে না, সে রকমটা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না। করপোরেট কর নিয়ে কিন্তু বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ইফেকটিভ ট্যাক্স নিয়ে সেটা হয়নি। আবার অনেকদিন আগের দাবি, রেট্রোস্পেক্টিভ, যেটা পেছনে জিনিস টেনে নিয়ে করা হয়। সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। সুতরাং অনেক কিছুতে হয়, অনেক কিছুতে হয় না। এর নিশ্চয়ই কারণ আছে। কারণ আপনি যদি দেখেন এখন এনবিআর কিন্তু অনেক কনসালটেশন করে। বাজেট শুরুর আগে সব চেম্বারের সঙ্গে কনসাল্ট শুরু করেছে। এসব সংস্কার কিন্তু এসেছে। এটা স্বীকার করতই হবে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু জিনিস হয়নি। এনবিআরের কিন্তু একটা বড় লক্ষ্য হলো ইন্টারনাল রেভিনিউ মোবিলাইজেশন। উনারা তো চেষ্টা করছেন ওটা আনতে হবে। আমি কিন্তু আপনাকে বলছি ডিজিটালাইজেশন। আবার একই সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী বলছেন যে না এই ডিজিটালাইজেশন করা যাবে না। আমি এখনো ক্যাশ টাকা দেব। এসব নিয়ে দ্বন্দ্ব আছেই। সুতরাং আমাদের স্বল্পমেয়াদে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আবার দীর্ঘমেয়াদে লাভের জন্যও কাজ করতে হবে। এ কারণেই কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষত্রে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে ইন্টারনাল রেভিনিউ মোবিলাইজেশন না হলে কিন্তু আমি ব্যবসা করতে পারব না। কেননা রেভিনিউ মোবিলাইজেশন না হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতিতে ব্যয় হবে না। একটা পরিসংখ্যান আপনাকে দিই। কয়েক বছর ধরে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কম। ওই যে কনজাম্পশন কমের কথা বললাম, এটা এত কম কেন? এ কারণেই কম। তাই এটা যখন বাড়বে, তখন আমাদের ব্যবসার রেভিনিউও বাড়বে।




এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন