বেশি দামের আশায় রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে অপরিপক্ব লিচু

ফয়সাল আহমেদ, রাজশাহী

ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

পরিপক্ব হয়নি লিচু। তবুও রাজশাহীর বাজারে উঠেছে রসালো এ ফল। বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব এসব লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে নতুন ও অল্প পরিমাণে হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিপক্ব লিচু আসতে এখনো অনেক সময় লাগবে। সাধারণত এসব লিচু পেতে মে মাসের শেষ বা জুনের শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে লিচু বাগান রয়েছে ৫৩০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ হেক্টর বেশি। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টন। 

লিচুচাষীরা জানান, তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় বেশির ভাগ গাছের লিচু ঝরে পড়েছে। অবশিষ্ট লিচুর কিছু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে ফলটির দাম বেশিই থাকবে। মৌসুমে গাছে গাছে লিচুর প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু ২০ ও ২১ মার্চ বৃষ্টির পর অধিকাংশ মুকুল ঝরে যায়। অবশিষ্ট মুকুল থেকে গুটি হলেও বৃষ্টির কোনো দেখা মেলেনি বরং প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও খরায় ৬০ শতাংশ লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

মহানগরীর ছোট বনগ্রাম, রায়পাড়া, পুঠিয়া, মোহনপুর উপজেলার কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ী, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু বেশি চাষ হয়েছে। তবে ঝরে পড়ায় ফলন খুব কম রয়েছে। যেগুলো রয়েছে তার ৫০-৬০ শতাংশ খরতাপে ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে।

নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকায় লিচুর বাগান কিনেছেন ব্যবসায়ী হাসমত আলী। তিনি বলেন, ‘আগামজাতের কিছু লিচু এরই মধ্যে গাছ থেকে নামানো শুরু হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ায় শুরু থেকেই ফলন কম ছিল। পরে তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে একদিকে লিচুর সংখ্যা কমে গেছে, অন্যদিকে লিচু বাছাই করতে করতেই দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে শ্রমিক বেশি লাগায় খরচও বেড়ে যাচ্ছে। যে টাকায় বাগান কিনেছিলাম, ১০০ লিচু ৩০০ টাকা করে বিক্রি করলেও লাভ হবে না। কিন্তু আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি হাজার লিচু ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তারা বেশি দামে বিক্রি করবে।’

নগরীর সাহেববাজার, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষ্মীপুর, রেলস্টেশন, শালবাগান, বিন্দুরমোড়সহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব জায়গায় বাহারি এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা। ঝুড়ির মধ্যে চটের ভেজা বস্তা। তার ওপর সবুজ পাতায় মোড়ানো লাল আভার লিচুগুলো এখন থোকায়-থোকায় শোভা ছড়াচ্ছে। এছাড়া নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালসংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশেও লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে দাম চড়া। ১০০ পিস লিচুর দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা। বেশি দাম হলেও বছরের প্রথম ফল হিসেবে শখ করে কিনছেন অনেকেই।

রাজশাহীর পবা উপজেলার লিচুচাষী শাহরিয়ার হোসেন জানান, তার ৭০টি লিচু গাছ রয়েছে। সব গাছে মুকুল এলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঝরে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলো এখনো পরিপক্ব হয়নি। কিন্তু রোদের প্রখরতায় প্রায় ৬০ শতাংশ লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। আগাম জাতের কিছু লিচু পাকতে শুরু করায় বাজারে বিক্রি করেছেন। ভালো দামও পেয়েছেন। বাজারে নতুন ফল দেখে অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নগরীর সাহেব বাজারে লিচু কিনতে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বাজারে প্রথম লিচু এসেছে। সন্তানদের জন্য কিনতে চাইলাম। কিন্তু ১০০ লিচু ৩০০ টাকার নিচে দেবে না। তাই ৫০ পিস লিচু কিনলাম।’

রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌জ্যৈষ্ঠ মাস শুরুর আগে দেশী জাতের কিছু লিচু পাওয়া যায়। তবে মূল লিচু আসতে এখনো অনেক সময় লাগবে। সাধারণত এসব লিচু পেতে আমাদের মে মাসের শেষ দিকে বা জুনের শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।’

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, ‘চলতি মৌসুমে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক লিচু ঝরে গেছে। এছাড়া গত মাসের শুরু থেকে তাপপ্রবাহে লিচু ফেটে নষ্ট হওয়ার কথা শুনেছি। তবে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে গাছ ও মুকুলের যত্ন নেয়ায় অনেক বাগানে পর্যাপ্ত লিচু আছে। ফলে লিচুর সংকট হবে না। এছাড়া লিচুর মূল মৌসুম শুরু হলে দামও কমে আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন