তর্কে শুরু বিপিএল শেষ কি তবে বিতর্কে?

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে চলতি বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে দর্শকদের একাংশ ছবি: কাজী সালাহউদ্দীন রাজু

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসরের পর্দা উঠল। এরই মধ্যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্র ও শনিবার চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। খেলা হবে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের তিনটি ভেন্যুতে। আগামী ১ মার্চ ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আসর। মাঝের এ সময়টুকুতে খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনাই যে বেশি আলোচনায় থাকবে, আর বিতর্ক নিয়ে শেষ হবে সেটি অতীতের আসরগুলো থেকেই বুঝে নেয়া যায়।

প্রথম আসর থেকেই বাংলাদেশের শীর্ষ এই টি২০ ক্রিকেট লিগটির সঙ্গী নানা বিতর্ক, সমালোচনা, অসন্তোষ, ক্ষোভ। এবারো ব্যতিক্রম হলো না। বিশ্বের কয়েকটি টি২০ লিগ একই সঙ্গে চলায় তারকা ক্রিকেটারদের কম উপস্থিতি, টিকিটের উচ্চ মূল্য, টুর্নামেন্টের সাদামাটা উদ্বোধন, আরেকটি নতুন নামে ঢাকার দল, শেষ মুহূর্তে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অধিনায়কের নাম ঘোষণা ছাড়াও রাজস্ব ভাগাভাগি না হলে ভবিষ্যতে বিপিএল থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বোর্ড-ফ্র্যাঞ্চাইজি তর্কেই শুরু হলো দশম বিপিএল আসর।

বিশ্বের আরো পাঁচটি টি২০ লিগের সঙ্গে সূচিতে সাংঘর্ষিক হচ্ছে বিপিএল। আরব আমিরাতের আইএলটি২০ ১৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ ১০ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ ৭ ডিসেম্বর থেকে ২৪ জানুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশ ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৮ জানুয়ারি ও পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত চলবে। তবে বিপিএলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে পিএসএল, কেননা বিশ্বব্যাপী তারকাদের কাছে বিপিএলের চেয়ে পিএসএল অগ্রাধিকার পায়। তাছাড়া পাকিস্তানের বহু ক্রিকেটার বিপিএলে খেলে থাকেন। কিন্তু এবার বিপিএলের শেষ পর্বে তারা খেলতে পারবেন না।

প্রায় প্রতিবারই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ে বিপিএল আয়োজকরা এবং এটি এই লিগটির সফলতার পথে বাধা। কারণ শুরুর দিক থেকেই দুবাই ও শারজায় খেলা হয়েছে বলে বিশ্বের তারকারা বিপিএলের চেয়ে পিএসএলকে বেছে নিয়েছেন। এমনও ঘটেছে, অন্য লিগের কারণে হক-আই কিংবা ডিআরএস সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও লোকবলও পাওয়া কঠিন হয়।

বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল টুর্নামেন্ট শুরুর দুদিন আগে বলেছেন, রাজস্ব ভাগাভাগি না হলে বিপিএলের আগামী আসর থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন তারা। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বর্তমানে যে কাঠামো মেনে চলছে, তাতে টুর্নামেন্টে তাদের পক্ষে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি ২০১৯ সালেও বলেছিলেন, রাজস্ব ভাগাভাগির একটা মডেল বিপিএলে থাকা উচিত। কিন্তু চার বছরেও সেটা আলোচনার মুখ দেখেনি। ২০২২ সালে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়ে দেয়, রাজস্ব ভাগাভাগির কোনো মডেলে আগ্রহী নন তারা। গত ১৭ জানুয়ারি সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। একই দিন নাফিসা কামাল তার নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, এটা শতভাগ সত্য। রাজস্ব ভাগাভাগি না হলে আমরা আগামী বিপিএলে থাকব না। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স টিকিট রাইটস, গ্রাউন্ড রাইটস ও মিডিয়া রাইটসের একটা অংশ চায়।’

নাফিসা কামালের অভিযোগ অনেক। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘কাগজে-কলমে যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চলা উচিত সেটা আমাদের বিপিএলে প্রযোজ্য নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের যেসব রাইটস পাওয়া উচিত, আমাদের সেটা পাওয়া হয় না। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের যথেষ্ট সম্মানও দেয়া হয় না। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা টুর্নামেন্টের বড় স্টেকহোল্ডার। অথচ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে আয়োজকরা বৈঠকের উদ্যোগ নেননি কখনো। আমি আসলে ভুলে গেছি তারা আমাদের সঙ্গে সর্বশেষ কবে বৈঠক করেছে।’

নাফিসা কামালের এসব অভিযোগের জবাব দিয়ে বিসিবির সিইও ১৭ জানুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা একটি টেকসই বিপিএল করতে চাচ্ছি। সেটা শুধু ক্রিকেট বোর্ডের জন্য নয়, এটা সব ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্যও। যেসব লভ্যাংশ ভাগের মডেলকে উদাহরণ হিসেবে আনা হচ্ছে, সেই লিগগুলোতে কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিস বলেন বা অন্যান্য আর্থিক কাঠামো অনেক ওপরে। তারা যে মডেলে করছে আমরা সেই মডেলে যাচ্ছি না। সেটা আমাদের জন্য টেকসই হবে না ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিসসহ আর্থিক দিক বিবেচনায়। সেক্ষেত্রে এটা তুলনাযোগ্য নয়। আমরা আমাদের বাজার ও সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী এটা করি। এ বিষয়ে লভ্যাংশ ভাগে বোর্ডের আগে যে অবস্থান ছিল এখনো সেটাই।’

অন্যান্য লিগে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো লভ্যাংশ পেলেও বিসিবি সেই মডেলের পথে হাঁটতে নারাজ। সুজন সেটাই জানিয়ে দিলেন, ‘এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ভাগের যে মডেল, আমরা ওভাবে যাচ্ছি না, চিন্তাও করতে পারছি না বর্তমান প্রেক্ষাপটে। এর বাইরে গেলে আমাদের জন্য বিষয়টা সামলানো কঠিন হবে। আমার মনে হয়, আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বসলে তাদের বোঝাতে সক্ষম হব যে আমরা কী মডেল করছি আর অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো কী মডেলে হচ্ছে। এটা হলে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারবে।’

এদিকে আয়োজকদের মতোই এলোমেলো কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র একদিন আগে জানা যায় দশম আসরের সাত দলের অধিনায়কের নাম! এ নিয়ে দায়টা মোটেই নিজেদের কাঁধে নিতে চান না সুজন। তিনি জানান, এটা একান্তই ফ্র্যাঞ্চাইজির ব্যাপার।  

প্রথমে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জানানো হলো, সিলেটের অধিনায়ক থাকছেন মাশরাফি বিন মর্তুজাই। ফরচুন বরিশাল তামিম ইকবালের কাঁধেই দিয়েছে নেতৃত্ব। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা নিয়মিত অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে সরিয়ে অধিনায়ক বানিয়েছে লিটন দাসকে। 

কে কোন দলের অধিনায়ক থাকছেন, সেটি আইপিএল ও বিগব্যাশের মতো টি২০ লিগে বেশ আগেই জানিয়ে দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। যদিও বিপিএলে সেই সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। সেটি আরেকবার প্রমাণিত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন