কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ সম্পাদন করতে দিতেন

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের নাম প্রথম শুনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি। সিএসপি হয়ে পাকিস্তানে চলে গেলেন। প্রত্যক্ষ পরিচয় আরো পরে। সিভিল সার্ভিস ও পিএইচডি শেষ করে দেশে আসি ১৯৭৮ সালে। তিনিও বোস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করে এলেন। সরকারি চাকরিতে যোগ দিলাম দুজনই। তখন থেকেই মূলত পরিচয়। উনি আমার বয়োজ্যেষ্ঠ এবং চাকরিসূত্রেও সিনিয়র। প্রথমত, তাকে জানি একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে। অত্যন্ত সৎ, দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। অর্থনীতি সম্পর্কে তার জ্ঞান গভীর। শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক সম্পর্ক না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিচরণ করেছেন। ব্যাংককে এসক্যাপের হয়ে কাজ করেছেন। নিউইয়র্কেও ছিলেন। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাও তার আছে। সেই হিসেবে তাকে একজন দক্ষ, বিচক্ষণ ও সৎ মানুষ হিসেবে চিনি। 

যখন আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, তখন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। সে হিসেবে তিনি আমার বসই ছিলেন। তখন দেখেছি তিনি কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ সম্পাদন করতে দিতেন। কোনো বাধা সৃষ্টি না করে বিচক্ষণতার সঙ্গে সহায়তা করতেন। সে হিসেবে তার জ্ঞানলব্ধ বিবেচনা ও পেশাদারিত্ব অত্যন্ত উঁচু মানের। অবসর গ্রহণের পর দুজনেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দিই। উনি আমার আগে জয়েন করেন। শিক্ষক হিসেবে প্রায়ই আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়। তার লেখা বইপত্র প্রচুর আছে। কেবল বাংলাদেশের অর্থনীতিই নয়, সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর তার জ্ঞান ব্যাপক। মানুষ হিসেবে বন্ধুবৎসল, সদালাপী ও খাঁটি মানুষ।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ উভয়ভাবেই কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরোক্ষভাবে কাজ বলতে গেলে উনি একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা। আর আমি কনিষ্ঠ কর্মকর্তা। প্রত্যক্ষভাবে কাজ দেখেছি, আমি লেখালেখি করেছি। উনি মাঝখানে সিপিডিতে ছিলেন। আমি কিছু আর্টিকেল লিখেছিলাম। তখন ওনার কাজের সঙ্গে আমার পরিচয়। আর প্রত্যক্ষ কাজের অভিজ্ঞতা হয় যখন আমি গভর্নর ও তিনি অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ উপদেষ্টা মানে অর্থমন্ত্রী। আর গভর্নরকে মন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতেই হবে। বিভিন্ন সভা এবং বিভিন্ন নীতিমালা ও নির্দেশনা দেয়ার ব্যাপারে সরাসরি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যভিত্তিক ও বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত দিতেন। কোনো রকম মনগড়া বা ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত দিতেন না। দুই বছর তিনি উপদেষ্টা বা মন্ত্রী ছিলেন। সেদিক থেকে বলতে পারি, তিনি প্রকৃষ্ট একজন অর্থনীতিবিদ। ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্দেশনার ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান গভীর। তার অনেক পাবলিকেশন আছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও ইন্টারভিউতে কথা বলেন। সেগুলোর সঙ্গে আমার সম্যক পরিচিতি আছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতেও তার সঙ্গে দেখা হয় ক্লাস নেয়ার আগে ও পরে। আমি তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কাজ করেছি। পরোক্ষভাবেও যোগাযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবেই আমার অভিজ্ঞতায় তিনি বিচক্ষণ, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তি।

আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে বণিক বার্তা যথার্থ মানুষকে সম্মাননা দিচ্ছে। উনি এমন সম্মাননার পুরোপুরি যোগ্য ব্যক্তি। এমন যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া বাংলাদেশের মধ্যে খুবই কঠিন। মির্জ্জা আজিজুল ইসলামকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। বণিক বার্তার জন্যও আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন