নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় বাদ পড়েছে অনেক নদীর নাম

মাহবুব সিদ্দিকী নদী ও প্রকৃতি গবেষক। তিন দশকের বেশি সময় ধরে নদ-নদী ও জলাশয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার। রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘‌হেরিটেজ রাজশাহী’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের নদ-নদী ও নগরায়ণের গোড়াপত্তন নিয়ে লিখেছেন ২০টিরও বেশি গ্রন্থ। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) নদ-নদীর তালিকা, সীমান্তবর্তী নদী ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আল ফাতাহ মামুন

সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ১ হাজার ৮টি নদীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে নদী গবেষক-পরিবেশকর্মীরা বিভিন্ন আপত্তি তুলছেন। একজন নদী গবেষক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কী?

নদী কমিশনের নিজস্ব যে জনবল আছে, তার ওপর ভিত্তি করেই তারা কাজ করে। সব সংস্থাও এভাবেই কাজ করে থাকে। কিন্তু নদীর তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে তা করা যথেষ্ট বলে মনে করি না। শুধু নদী কেন যেকোনো তথ্য, যেকোনো পরিসংখ্যান দাঁড় করাতে গেলে সে বিষয়ে এক্সপার্ট লোকজনদের সম্পৃক্ত করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম হলে কখনই ওই পরিসংখ্যান বা তথ্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। গত অক্টোবরে নদী রক্ষা কমিশন যে তালিকা প্রণয়ন করেছে, সে বইটা আমি আদ্যোপান্ত পড়েছি। আমার মূল্যায়ন হলো এনআরসিসি খুব তড়িঘড়ি করে বইটা প্রকাশ করেছে। যে কারণে অনেক ভুল-ভ্রান্তি ও অসংগতি রয়ে গেছে। এটি কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। নদী রক্ষা কমিশন হলো হাইকোর্ট ঘোষিত দেশের নদ-নদীর অভিভাবক। সংস্থাটিকে তাই অভিভাবকসুলভ কাজই করতে হবে। তড়িঘড়ি করে যদি একটা তালিকা হয়, আর সেটা যদি মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি আরো বাড়িয়ে দেয় তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী, দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী, তৃতীয় দীর্ঘতম নদী ইত্যাদি অনেক তথ্য সেখানে দেয়া হয়েছে। কোন বিভাগে সবচেয়ে বেশি নদী প্রবাহিত এসব তথ্যও দেয়া হয়েছে। এর সবই ভুল।

তালিকাটির ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট আপত্তিগুলো কী?

সুনির্দিষ্ট আপত্তি নদীর সংখ্যা নিয়ে। আমি ৩০ বছর ধরে নদী নিয়ে কাজ করছি। আমার প্রায় কাজই সরজমিন। আমার অনুসন্ধান অনুযায়ী দেশে নদ-নদীর সংখ্যা আমরা ১ হাজার ৯০৮টি পেয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি জেলা আছে। এ জেলাগুলোর নদীর সংখ্যা নিয়ে এখনো সঠিকভাবে জরিপ হয়নি। এ তিন জেলার নদীর তালিকা পেলে নদ-নদীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এগুলোর সবই অস্তিত্ব বিদ্যমান। নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় দেশের নদ-নদীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮টি। তার মানে আরো প্রায় এক হাজার নদ-নদীর নাম তাদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। আমার দ্বিতীয় আপত্তি তাদের তালিকায় থাকা নদ-নদীর বিষয়ে। তাদের তালিকায় ১ হাজার ৮টি নদ-নদীর তালিকা দেয়া আছে। তার মধ্যে ৫৮১টি নদীর উৎসমুখ-পতিতমুখ-মোহনার উল্লেখ নেই। একটা নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হলো, কোন জায়গায় তার পতন হলো বা পতিত হলো এটাই তো বেসিক তথ্য। এনআরসিসি এ বেসিক ভুলটা করে বসেছে। এমনিতেই প্রায় ১ হাজার নদ-নদীর নাম বাদ দিয়েছে। যা দিয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকেরই বেসিক ইনফরমেশন নেই। এ ভুল কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। তৃতীয় আপত্তি হলো বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে গঙ্গার যে অংশ প্রবাহিত হয়েছে, তার পুরোটাকে তালিকায় পদ্মা বলা হয়েছে। এনআরসিসির এটা করার অধিকার নেই। এখন অবধি যারা মানচিত্র প্রকাশ করেন, মানচিত্র তৈরি করেন কিংবা যারা নদী বিশেষজ্ঞ এবং ভূতত্ত্ববিদরা তো এ কথা বলেন না। তারা গোয়ালন্দ পর্যন্ত যে প্রবাহ সেটাকে গঙ্গা বলেন, গোয়ালন্দ এসে উত্তর থেকে যমুনা এল, যমুনা থেকে মিলিত হয়ে যে ধারাটা প্রবাহিত হয়েছে সেটাই পদ্মা নামকরণ হয়ে চাঁদপুরে গিয়ে মেঘনায় মিলিত হলো। মেঘনার নামকরণ করে সে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হলো। যেকোনো ভূগোলবিদই এ কথা বলবেন। কিন্তু এনআরসিসি বাংলাদেশের ভেতরে গঙ্গার যে অংশটুকু ঢুকেছে, সেই মনাকসা থেকে শুরু করে চাঁদপুরের সম্পূর্ণটাকেই পদ্মা বলছে। এটা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। ইছামতীকে বলছে দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। এটাও ভুল কথা। ইছামতীকে তারা একেবারে রায়মঙ্গল মোহনা পর্যন্ত ইছামতী বানিয়েছেন। কিন্তু ইছামতী তো মোট তিনটি পৃথক সত্তা নিয়ে প্রবাহিত। ইছামতীর উৎপত্তি হলো মাথাভাঙ্গা থেকে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাঝদিয়া নামক জায়গা আছে। এখানে এসে মাথাভাঙ্গা দুই ভাগে বিভক্ত হলো। একটা চুরনি নামে ভারতে ঢুকে গেল। আরেকটা ইছামতী নামে বাংলাদেশে প্রবাহিত হলো। এনআরসিসি বলতে চাচ্ছে, ইছমাতী ওই মাঝদিয়া থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ-শ্যামনগরের পাশ দিয়ে একেবারে সোজা সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গে মিলে বে অব বেঙ্গলে গিয়ে মিলিত হয়েছে। না, এ কথা সঠিক নয়। ইছামতী হলো সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ পর্যন্ত। কালিগঞ্জের পর সেটা কালন্দি নাম ধারণ করেছে। তারপর সে চলে গেছে শ্যামনগর উপজেলার ভেতর দিয়ে। ভারতের চব্বিশ পরগনা থেকে একটা নদী এসেছে—রায়মঙ্গল। সে নদীটা কালন্দির সঙ্গে মিশে বঙ্গোপসাগরে গিয়েছে। রায়মঙ্গল একটা মোহনা। এ বিষয়ে চলতি মাসেই আমার একটা বই বেরিয়েছে—‘‌সুন্দরবন ও গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের নদীর মোহনা’। ১৮টি মোহনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি বইটিতে। সাতক্ষীরার দেভাটায় যমুনা নামে একটা নদী আছে। সে নদীর প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে গেছে। তার পানিও ইছামতীতে মেশে। স্থানীয়রা একে ইছামতী বা যমুনা ইছামতী বলে। এনআরসিসি এ নামগুলো চেপে গেছে। নদী সম্পর্কীয় জ্ঞান খুব সীমিত ব্যাপার নয়, এটা অনেক বড় ব্যাপার। এনআরসিসি বলছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নদী প্রবাহিত হয়েছে—১২২টি নদী। এটাও সঠিক তথ্য নয়। এক সুন্দরবনেই ২২৭টি নদী রয়েছে। সুন্দরবন হলো খুলনা বিভাগের অন্তর্গত। খুলনা জেলায় নদী আছে। যশোর, কুষ্টিয়া এসব জেলা মিলেই তো খুলনা বিভাগ। এসবেও আরো নদী আছে। সুন্দরবনের ২২৭টির সঙ্গে আরো অন্তত ৭০টি নদী যোগ হবে খুলনা বিভাগে। তাহলে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি নদী হয় কীভাবে? এছাড়া কিছু কিছু নদীকে তারা একরের হিসাবে দেখিয়েছেন। সেটা কীভাবে সম্ভব? তার মানে কি সে নদীর কোনো স্রোত নেই? সেটা কি বদ্ধ জলাভূমি? এসবের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এ রকম প্রায় ৩৩টি নদীকে তারা একরের হিসাবে দেখিয়েছেন। 

এনআরসিসি যে পদ্ধতিতে নদীর তালিকা প্রণয়ন করেছে তা যথার্থ ছিল বলে মনে করেন কি?

অবশ্যই তা যথার্থ ছিল না। নদীর তালিকা প্রণয়ন করতে হলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এখানে সে রকম কেউ ছিল বলে আমার চোখে পড়েনি। নদীর তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে এনআরসিসি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের থেকে তালিকা চেয়েছে, সে তালিকার ওপর ভিত্তি করেই নদ-নদীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে জেলা প্রশাসকদের কাজ আর তার পরবর্তী সময়ের জেলা প্রশাসকদের কাজের গুণগত মানে বিস্তর পার্থক্য দেখতে পাই আমরা। ব্রিটিশ আমলের পর থেকে জেলা প্রশাসকদের কাজকর্মে অনেক অসংগতি হতে থাকে। এটাই বাস্তবতা। প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। একটা পর্যায়ে সরকারি উদ্যোগে নদী খনন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এগুলো তো আসলে নদী। সিএস রেকর্ডে এগুলো নদীই আছে। ব্রিটিশ-পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসকরা তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে এমন নদী আস্তে আস্তে ভূমি অফিস থেকে ব্যক্তির নামে লিজ দেয়া শুরু করে। পরবর্তী সময়ে এগুলো লিজ যারা পায় তাদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। প্রচুর নদী এ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। এটা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও ভুল। তাই আমরা বলছি, নদ-নদীর তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে তারা যে এককভাবে জেলা প্রশাসকদের থেকে তালিকা নিয়েছেন এ প্রক্রিয়াটি সঠিক নয়। কারণ জেলা প্রশাসকদের কারণেই প্রচুর নদী মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। সে নদীর নামগুলো তো জেলা প্রশাসকরা দেননি।

কিন্তু কোনো একটা তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ডিসি ও ভূমি অফিসের তালিকাই তো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে।

আপনার কথা অন্য সব ক্ষেত্রে ঠিক আছে। কিন্তু নদীর তালিকার ক্ষেত্রে একমাত্র ডিসিদের তালিকাই যথেষ্ট ও নির্ভুল হবে না। তাদের সহযোগিতা নিতে হবে, তারাই মুখ্য ভূমিকায় থাকবেন এমনটা হলে চলবে না। কারণ তারা তো সব নদীর তালিকা দেবেন না। তারা অনেক নদী মানুষের নামে দিয়ে দিয়েছেন। যেসব নদ-নদী ভরাট হয়ে নদীর চরিত্র হারিয়েছে সেগুলো পুনঃখনন করলেই তো হয়ে গেল। সেগুলো লিজ দিয়ে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করার কী প্রয়োজন পড়ল? এ কারণে ডিসি বা ভূমি অফিসের তালিকা এককভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরজমিন নদীতে যেতে হবে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর এটা নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে দল গঠন করতে হবে। নদী নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এ টিমে রাখতে হবে। তাহলেই গ্রহণযোগ্য নদীর তালিকা প্রণয়ন সম্ভব হবে।

নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

নদীর সংজ্ঞা প্রায় ঠিকই আছে। এখানে একটা বিষয় বাদ পড়ে গেছে। তারা বলছেন অন্য কোনো জলাশয় থেকে নির্গত হলেও সেটা নদী হতে পারে। হ্যাঁ! নদী হৃদ থেকে উৎপন্ন হতে পারে, নিম্ন জলাশয় থেকে উৎপন্ন হতে পারে। কিংবা নদী থেকে নদী উৎপন্ন হয়, নদীর শাখা হয়। সেটা সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায় উল্লেখ করা উচিত ছিল। সংজ্ঞায় আরেকটা বিষয় দেয়া উচিত ছিল—ভূ-অভ্যন্তরস্থ ফল্গুধারা। একেবারে নিচ থেকে পানি ওঠে। উঠতেই থাকে। সে ধারা থেকে আস্তে আস্তে নদীর সৃষ্টি হয়। এ রকম নদী প্রচুর আছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে অনেক নদী ভূ-অভ্যন্তরস্থ ফল্গুধারা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন পঞ্চগড়ের পাম নদী, বহিতা, পাইকানি, পাথরাজ ইত্যাদি নদী এভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ফল্গুধারাটা উল্লেখ করা উচিত ছিল।

সীমান্তবর্তী নদীর সংখ্যা নিয়েও অনেক বিতর্ক শোনা যায়। এ বিষয়ে কী বলবেন?

সরকারি হিসাবে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী নদীর সংখ্যা ৫৪টি। কিন্তু এর মধ্যে হবিগঞ্জের সুতাং ও পঞ্চগড়ের ঘোড়ামারা নদী দুটি বাংলাদেশের। তার মানে ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্তবর্তী নদীর সংখ্যা হবে ৫২টি। আশ্চর্যের কথা হলো সরকারি হিসাবে কর্ণফুলীর নাম নেই। কর্ণফুলী হলো অভিন্ন নদী। তাহলে সরকারি হিসাবে যে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী নদীর সংখ্যা ৫৪ বলা হচ্ছে, সেটাও কি ভুল নয়? সীমান্তবর্তী নদী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গত ২০ বছরে আমি সরজমিন আরো ৭৭টি নদীর সন্ধান পেয়েছি। এ নদীগুলোর উৎপত্তি কোথায়, পতিত হয়েছে কোথায়, কোনদিক দিয়ে গিয়েছে সে তালিকা আছে আমার কাছে। এটা হলো ভারতের সঙ্গে। আর মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তবর্তী নদীর কথা বলা হচ্ছে তিনটি—নাফ, শংখ ও মাতামুহুরী নদী। এর মধ্যে নাফ বাদে বাকি দুটি নদী আমাদের দেশেই উৎপন্ন হয়েছে। আমি মনে করি, অভিন্ন নদী কমিটির সদস্যদের অবহেলায় সীমান্তবর্তী নদীর সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এ বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন