বিশ্লেষণ

ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে

মোহাম্মদ জমির

বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের অধিক এবং বৈশ্বিক জিডিপির ২৫ শতাংশেরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো। এটিকে কেউ কেউ জি৭-এর (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) বিপরীত বলয়ের জোট হিসেবে দেখেন। ব্রিকসের সদস্যদেশগুলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক শুরু করে এবং ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করার পর ব্রিকসে পরিণত হয়। জোটটির এখন ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

দুঃখজনকভাবে কিছু বাংলাদেশী সমালোচক ব্রিকসে ছয় নতুন সদস্যের একটি হিসেবে বাংলাদেশের যুক্ত হতে না পারার ব্যাপারে অযাচিত মন্তব্য করেছেন। যদিও তারা মুদ্রার অন্য পিঠকে উপেক্ষা করেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা দেখতে পাচ্ছেন না যে এটা পুরোপুরি নিরাশাবাচক নয়, বরং এখানে আশাও রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে ব্রিকস বৈঠকে আমাদের অংশগ্রহণের কিছু আদর্শিক দিক ছিল যা আমাদের উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে যে সাম্প্রতিক কভিড মহামারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাতের কারণে সৃষ্ট আর্থসামাজিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আমরা কীভাবে আন্তর্জাতিক প্যারাডাইমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। 

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্মেলনটির বিভিন্ন মাত্রা বাস্তবসম্মতভাবে ব্যবহার করেছে। আমরা আমাদের দেশকে তুলে ধরতে পেরেছি বহুমাত্রিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া দেশ হিসেবে এবং বিনিয়োগ ও যৌথ আর্থসামাজিক উদ্যোগের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে। এটি আমাদের জন্য পরবর্তীকালে ব্রিকসের সঙ্গে আরো কার্যকরীভাবে যুক্ত হওয়ার দরজা খুলে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হিসেবে ব্রিকস বৈঠকে অংশগ্রহণের সময় জোর দিয়ে বলেন, বহু মেরুর বিশ্বে ব্রিকসকে বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে এবং বিবর্তিত দিকগুলোয় সাড়া দেয়ার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে তিনি আরো লক্ষ করেছেন যে আমাদের উচিত আমাদের দিকে ছুড়ে দেয়া কৃত্রিম পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে হাতিয়ার বানানোর প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘উদীয়মান বিশ্বে আমাদের জন্য...আমাদের ভাগ্য ও একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে...আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’ ৫০ বছর আগে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে বার্তা দিয়েছিলেন তা সত্য প্রতিভাত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে জানান যে টেকসই উন্নয়নের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আমরা ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ দারিদ্র্যকে কমিয়ে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নিয়ে এসেছি। আমরা একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি, সে আলোকপাত করেন। ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের তিনি আরো বলেন যে তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছে, এর সঙ্গে তারা আশ্রয়ণ নামক বিনামূল্যে সামাজিক আবাসন প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে চলেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন যে ‘আমাদের সরকার সারা দেশে ডিজিটাল গণ-অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০৮ শতাংশ সেলুলার মোবাইল সংযোগের আওতায় এসেছে, যা বৈশ্বিক গড় থেকে বেশি এবং এটি গ্রামীণ জনসংখ্যাকে সাহায্য করছে’। 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোহানেসবার্গে থাকাকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে জোটবদ্ধ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় পরিসরে সহযোগিতা জোরদারে আমাদের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার বছর আগে চীনে আনুষ্ঠানিক সফরের পর এটি ছিল প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই নেতার বৈঠকের পর ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত পর্যবেক্ষণ করেছেন যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিনা হস্তক্ষেপের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন স্তরের “সহযোগিতামূলক কৌশলগত অংশীদারত্বকে জোর দিয়ে দুটি দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আলোকে যৌথ অর্জনে সন্তুষ্ট দুই নেতা উন্নয়ন কৌশলগুলোর সমন্বয়ের ওপর জোর দেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতাকে আরো গভীর করার এবং সর্বাত্মক আদান-প্রদান বাড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন, যাতে দুটি দেশের জনগণের মাঝে আরো সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। চীনের নেতা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ পরিবেশন করতে বহুপক্ষীয় বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস আউটরিচ মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকার সুযোগটি ব্যবহার করে লিঙ্গসমতা বৃদ্ধির গুরুত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত শুধু পাঁচটি প্রস্তাবই রাখেননি, পাশাপাশি নারী ও মেয়েদের দিনবদলের প্রতিনিধি করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ গত দশকে সক্রিয়ভাবে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তার ওপরও জোর দিয়েছেন। এর ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পঞ্চম লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নারী ক্ষমতায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়।

তার প্রথম প্রস্তাবটি আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর চলমান খাদ্য, শক্তি এবং আর্থিক সংকটের প্রতিকূল প্রভাব প্রশমিত করার প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করেছে। দ্বিতীয়ত, তিনি মেয়েদের স্কুলে রাখতে, সাইবার অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষিত রাখতে এবং তাদের অনেকের মুখোমুখি ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর প্রয়াসের আহ্বান জানান। তৃতীয়ত, তিনি মহিলাদের লাভজনক কর্মসংস্থান, সম্মানজনক কাজ, মজুরি সমতা এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার পক্ষে কথা বলেন। তার চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবগুলো একটি সক্রিয় এবং টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ক্ষেত্র প্রচারের পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা এবং সহনশীলতার জন্য নারীদের প্রয়োজনীয়তার দিকে গভীরভাবে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন।

পরবর্তীকালে তার হস্তক্ষেপ আমাদের সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদ কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যেটিতে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের পুরুষদের সমান অধিকার থাকবে। এটি সমর্থন করার জন্য তিনি কিছু তথ্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন—(ক) আমাদের জাতীয় সংসদে আমাদের স্পিকার, সংসদের নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদের উপনেতা সবাই নারী, (খ) মহিলাদের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপদ, সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করা হয়েছে, (গ) দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা শুধু বিনামূল্যেই করা হয়নি বরং প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে তালিকাভুক্তি ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বরং প্রায় ২৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন উপবৃত্তি ও বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং যে উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মা বা বৈধ অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে যায়, (ঘ) ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে এবং নারী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান হার বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে এবং (ঙ) মহিলারাও আমাদের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড তৈরি করে, যেখানে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মহিলা সরাসরি এ খাতে কাজ করে।

বিশ্লেষকরা তখন থেকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ ধরনের তথ্য উন্মোচনের মাধ্যমে ব্রিকসের প্রয়োজনীয়তার দিকে গুরুত্বসহকারে এগিয়ে যাওয়ার এবং বাংলাদেশের মতো দেশকে মাথায় রেখে এর বিদ্যমান মাত্রা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্রিকস বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের, বিশেষ করে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশ থেকে কিছু দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। 

ব্রিকস প্লাস সংলাপের সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপপ্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন।

যে চার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশকে ব্রিকসের সদস্যপদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তারা তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং ব্রিকসের মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্তির অর্থগত ও সাংকেতিক দিকগুলো যত্নসহকারে পরীক্ষা করছে। বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্রিকসে যোগদানের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইরান ও মিসরও সম্ভাব্য আর্থিক স্বার্থের কারণে তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ইরান কিছু পশ্চিমা দেশের সঙ্গে তার এরই মধ্যে কঠিন সম্পর্কের কারণে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে প্রমাণ করার জন্য ব্রিকস আমন্ত্রণের সুযোগ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইরানের আরবি ভাষার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল আলম ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে। ব্রিকসের প্রস্তাবিত সম্প্রসারণ প্রমাণ করে যে একপক্ষীয় পদ্ধতি বিলুপ্তির পথে। তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে শুধু মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা থেকে সরে আসার সময় এসেছে। এর কারণ হলো, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় মার্কিন আধিপত্য ইরানের জন্য বিশেষভাবে সমস্যাজনক, কেননা এর অর্থনীতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এদিকে সৌদি আরব এখনো প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করছে, তবে সম্ভবত এটি যুক্ত হওয়ায় সম্মত হবে। কারণ এটি চীনের মতো উদীয়মান শক্তির পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদিরাজের অটুট সম্পর্ক এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্রন্টে শিথিল হয়েছে এবং ব্রিকসে দেশটির প্রবেশ হবে আরেকটি নতুন উন্মোচন। কৌশলগত বিশ্লেষক সামি হামদি এবং মিশেল গ্রিস পর্যবেক্ষণ করেছেন যে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতা হিসেবে সৌদি আরব বিশ্বাস করে যে এটি বিশ্বে একটি বড় শক্তিতে পরিণত হতে পারে এবং চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কের জন্য তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় সেটা প্রতিফলিত হয়।

আর্জেন্টিনা ও ইথিওপিয়াসহ ব্রিকসের ছয়টি নতুন প্রস্তাবিত সদস্য বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের ভৌগোলিক কারণে বেছে নেয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যা-ই হোক, একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্রিকসকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশ বা ইন্দোনেশিয়াকে নেয়া তাদের আর্থসামাজিক সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে চীন একটি সৃজনশীল সদস্য সংখ্যা সম্প্রসারণের ধারণাকে সমর্থন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা যিনি জোহানেসবার্গে এ সর্বশেষ ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তিনিও অতিরিক্ত সদস্যদের সম্ভাবনাকে সমর্থন করেছেন বলে মনে হয়।

এ আদর্শিক বোঝাপড়া ব্রিকসের সংক্ষিপ্ত রূপ থেকে একটি আর্থসামাজিক পাওয়ার হাউজের বিবর্তনেও সাহায্য করবে। এটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একটি আরো ন্যায়সংগত ও সমতাবিধায়ক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য উদীয়মান অর্থনীতির ব্রিকস গ্রুপিং সম্প্রসারণের আহ্বানের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যাতে জোর দিয়ে বলা হয় যে আধিপত্যবাদ চীনের ডিএনএতে নেই। এর সঙ্গে এটি বৈচিত্র্যময় বৈশ্বিক দক্ষিণ আরো বেশি প্রতিফলিত করবে।


মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত

পররাষ্ট্র, তথ্যের অধিকার এবং সুশাসনবিষয়ক লেখক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন