চীনের প্রযুক্তি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ বন্ধে নতুন আদেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

সেমিকন্ডাক্টর, মাইক্রোইলেকট্রনিকস, কোয়ান্টাম ইনফরমেশন টেকনোলজিস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সিস্টেমে বিনিয়োগ বন্ধ হবে ছবি: রয়টার্স

প্রযুক্তিবাজারে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ চলছেই, যা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতিকে অস্থির করে তুলছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ নিষিদ্ধ হবে। খবর রয়টার্স।

নতুন নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারিকে চীনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বন্ধের বা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা দেবে। এগুলো হলো সেমিকন্ডাক্টরস, মাইক্রোইলেকট্রনিকস, কোয়ান্টাম ইনফরমেশন টেকনোলজিস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সিস্টেম।

চীনকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জনে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সামরিক খাতে শক্তিশালী হওয়ার পথ রোধে এ নির্বাহী আদেশ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার থেকে চীনকে বিরত রাখাই মূল লক্ষ্য। কেননা চীন অগ্রসর হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রাইভেট ইকুইটি, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, জয়েন্ট ভেঞ্চার ও গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগ এর অন্তর্গত।

ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য বাইডেন কংগ্রেসকে পাঠানো এক চিঠিতে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। যেখানে সংবেদনশীল প্রযুক্তি, সামরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, নজরদারিসহ সব ক্ষেত্রে চীনের মতো দেশগুলোর অগ্রগতির বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের বিষয়ে চীন অবগত বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি আদেশের বিপরীতে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুযায়ী, মার্কিন সরকারের আদেশটি এন্টারপ্রাইজগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলবে।

মন্ত্রণালয়ের আশা, যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির আইন ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে সম্মান করবে। এছাড়া কৃত্রিমভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি, বাণিজ্য বিনিময় এবং সহযোগিতাকে বাধা দেয়া বা বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন থেকে বিরত থাকবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিনিয়োগ বন্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, চীন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হওয়ার বা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা দেয়ার বিষয়ে বাইডেনের অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। যেসব চীনা কোম্পানি কম্পিউটার চিপ ও এটি তৈরিতে ব্যবহৃত টুলের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে সেসব জায়গায় মার্কিন বিনিয়োগ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এসব খাতের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও নেদারল্যান্ডস। চীন এসব দেশের বিকল্প হয়ে ওঠার জন্য অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়েছে।

হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার আগে বাইডেন মিত্রদের সঙ্গে আলাপ করেছেন এবং গ্রুপ অব সেভেন নেশনসের মতও নিয়েছেন। সিনেটের ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে চীনের সামরিক বাহিনীর অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বড় অবদান রেখেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশী রাষ্ট্রের সামরিক ঊত্থানে নিজস্ব বিনিয়োগ বন্ধ করার মাধ্যমে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ আদেশ ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে। বর্তমানে যেসব বিনিয়োগ চলমান সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। কিন্তু যেকোনো ধরনের লেনদেনের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন জানতে চাইতে পারে বলেও জানানো হয়। নতুন আদেশের ফলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনমন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়াশিংটনে থাকা চীনা দূতাবাস এ উদ্যোগকে খুবই হতাশাজনক বলে আখ্যা দিয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন