কেজিতে ৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রির ঘোষণা খামারিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে গরুর মাংস বর্তমানে যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কেজিতে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে গো-খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় রোববার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মাংসের মূল্য হ্রাস করে ভোক্তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে আনয়নের লক্ষে অংশীজনের অংশগ্রহণে’ শীর্ষক কর্মশালায় বিষয়টি জানানো হয়।

এ সময় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব দিলে জবাবে বর্তমান মূল্যের চেয়ে ৫০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা গরুর মাংসের দাম কমাতে চাই। এর অংশ হিসেবে খামারিরা যে দামে গরুর মাংস বিক্রি করছে তার চেয়ে ৫০ টাকা কমে বিক্রি করবে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি গরু জবাই হয়। বছরে মাংসের চাহিদা রয়েছে ৮৯ লাখ টন। এর মধ্যে গরুর মাংসের চাহিদা রয়েছে ৪৫ লাখ টন।

যথাযথ পরিকল্পনা নিলে গরুর মাংস ৫০০-৫৫০ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাত উন্নয়নের মাধ্যমে ২০-২৫ শতাংশ দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। দুই বছর বয়সী একটা দেশি গরু থেকে সর্বোচ্চ ১২০-১৫০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। কিন্তু উন্নত জাতের দ্বারা সংকরায়িত করা হলে একই সময়ে ২৫০-৩০০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া সম্ভব। এছাড়া বছরে জবাই হওয়া ১ কোটি গরুর রক্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। গরুর রক্ত মৎস্য ও পোল্ট্রিখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেক দাম দিয়ে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি করে থাকে। অথচ এ রক্ত সংগ্রহ করা গেলে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আমদানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে স্থানীয়ভাবে উন্নতজাতের ঘাস চাষ ও সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে বিকল্প খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব।

তিনি বলেন, ফসলের উচ্ছৃষ্টাংশ যেমন ধানের খড়, ভুট্টা গাছের কাণ্ড, বিভিন্ন ডালের গাছ, কলা গাছসহ অন্যান্য সকল প্রকার ফসলের বাইপ্রোডাক্ট প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে উচ্চমানের গো-খাদ্য তৈরি সম্ভব। দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে চাষিরা কিভাবে এই খাবার কম খরচে প্রস্তুত করা যায় সে বিষয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে কম দামে বিকল্প খাদ্য পাওয়া সম্ভব যা মাংসের দামে প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ১ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন পিস চামড়া উৎপাদন হয়, যেখানে আমরা ১ মিলিয়ন ব্যবহার করতে পারি। বাকিটা নিয়ম মেনে রপ্তানি করতে পারলে দাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। আমরা দুধ উৎপাদনকে বেশি প্রায়োরিটি প্রদান করছি, মাংস রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে। কিন্তু আমাদের উচিৎ দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ানো সমানতালে নিয়ে যাওয়া।

তিনি বলেন, গরু বা গবাদি পশুর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। সবগুলো অঙ্গই আলাদা-আলাদাভাবে দামি। রক্ত, হাঁড় ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রফতানি করতে পারলে উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন