বিশ্লেষণ

সাউথ-সাউথ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা ও জাতিসংঘের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

মোহাম্মদ জমির

সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন (এসএসসি) শব্দটি নীতিনির্ধারক ও শিক্ষাবিদদের দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদ, প্রযুক্তি ও জ্ঞানের বিনিময় কথা বর্ণনা করতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এরা নিজেদের মধ্যকার দৃষ্টান্তের বিভিন্ন মাত্রার কারণে গ্লোবাল সাউথ নামেও পরিচিত। এ সহযোগিতার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও উন্নত করা।

দক্ষিণের দেশগুলো আরো উন্নতির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে সে ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও তেলের ক্ষেত্রে যৌথ বিনিয়োগ। এখানে বলে রাখা ভালো, দুটি মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার নিকট বিশ্বের জ্বালানি সম্পদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি রয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে বলিভিয়া, ব্রাজিল, একুয়েডর, ভেনিজুয়েলা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, চাদ, গ্যাবন ও ইকুয়েটোরিয়াল গিনিতেও তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে।

দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিরা প্রতি বছর গ্লোবাল পলিসি ফোরামে (জিপিএফ) মিলিত হন, যা এটিকে উদীয়মান অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে পরিণত করেছে। ফোরামটি জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের কৌশল ও নীতিগুলোকে বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করছে। তাছাড়া ফোরামটি সিনিয়র আর্থিক নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে নিজেদের চিন্তা-ভাবনার বিনিময় এবং পিয়ার টু পিয়ার লার্নিং কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার জন্য এটি অন্যতম একটি প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 

অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশগুলো একে অন্যকে সহযোগিতা করছে। উদাহরণস্বরূপ, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। এ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ২০০১ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ভালো প্রতিবেশিত্ব, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সম্পর্কিত চুক্তি থেকে জন্মেছে। যার বাস্তবায়নের জন্য তারা নিয়মিত চার বছরমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করে। তাদের কয়েক ডজন যৌথ বৃহৎ আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কাজ চলছে। তাদের এখন কাজের জায়গাগুলো হলো চীনে প্রথম সুপার হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, একটি পরীক্ষামূলক দ্রুত নিউট্রন চুল্লি তৈরি, রাশিয়ান ফেডারেশন ও চীনে ভূতাত্ত্বিক পূর্বাভাস করা, অপটিক্স ও ধাতব প্রক্রিয়াকরণ, হাইড্রোলিক্স, বায়ুগতিবিদ্যা এবং কঠিন জ্বালানি কোষগুলোতে যৌথ গবেষণা করাসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া। সহযোগিতার জন্য অন্যান্য অগ্রাধিকার দেয়া ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্প ও চিকিৎসা প্রযুক্তিতে লেজার, কম্পিউটার প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবেশ, রসায়ন, ভূ-রসায়ন এবং নতুন নানা উপাদান। সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন প্রতি মতাদর্শগত অঙ্গীকারের আলোকে খাদ্যনিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বাস্তবসম্মত চাওয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চীন-আফ্রিকায় একনাগাড়ে কৃষি প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোয় একাধিক প্রদর্শনী করেছে। এগুলো চীন ও আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে কৃষি সহযোগিতার দৃশ্যমান উদাহরণ। এ কেন্দ্রগুলোর কাজ হলো চীন থেকে আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কৃষি দক্ষতা ও প্রযুক্তি প্রেরণ, পাশাপাশি কৃষি খাতে চীনা সংস্থাগুলোর জন্য নতুন বাজারের সুযোগ তৈরি করা।

চীনের বিদেশের মাটিতে তৈরি করা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনাদের উদ্যোগে সাব-সাহারান আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে মোট ১১টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়ায় (দুটি), জাম্বিয়া, জিবুতি, কেনিয়া, মরিশাস, মৌরিতানিয়া, মিসর, ওমান ও আলজেরিয়াও রয়েছে। সাধারণত এসবে চীনা সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকে না, অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ এক্ষেত্রে হ্যান্ড-অফ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এ ধরনের অঞ্চল স্থাপন ও তাতে কাজ করার জন্য তারা চীনা উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানের ওপরই দায়িত্ব দেয়। যদিও এটি চীন-আফ্রিকা উন্নয়ন তহবিলের (সিএডিএফ) সহায়তাসহ অনুদান, ঋণ ও ভর্তুকি আকারে সহায়তা সরবরাহ করে যা এ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে ব্যাপকভাবে আর্থিকভাবে সমর্থন করে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডন সি মারফির পর্যবেক্ষণ হলো এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চীনের উন্নয়ন সাফল্যকে অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত করার একটি প্রচেষ্টা। এর পাশাপাশি চীনের উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর জন্য ব্যবসার সুযোগ বাড়ানোর সঙ্গে এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে চীনের ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের ইতিবাচক ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্য রয়েছে।

২০২১ সালের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের জন্য জাতিসংঘ দিবসে অংশীদারদের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন সম্পর্কিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির সামনে (এইচএলসি) ২০তম অধিবেশনে সুনির্দিষ্ট ফলোআপ উপস্থাপন করা হয়, যা ২০২১ সালের ১ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়। আর বুয়েন্স আয়ার্স অ্যাকশন প্ল্যান (বিএপিএ+৪০) বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়। এ উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে বিশ্বের ৭৫টি সদস্যরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীর পাশাপাশি ২৩টি আন্তঃসরকারি সংস্থা, জাতিসংঘের ২৫টি সংস্থা, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি সেক্টরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাইড ইভেন্টগুলোয় প্রায় ৪০০ জনেরও বেশি লোক অংশ নিয়েছিল, যেখানে উচ্চস্তরের কমিটির ব্যুরো সদস্যরা দক্ষিণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উচ্চপর্যায়ের কমিটির অধিবেশনে পূর্ববর্তী অধিবেশন থেকে উদ্ভূত পদক্ষেপগুলোকে নিয়ে বিবেচনা করে ফলোআপ করা হয় আর বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হয় যা ছিল কভিড-১৯ মহামারী এবং অনুরূপ বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় বুয়েন্স আয়ার্স অ্যাকশন প্ল্যানের ফলাফলকে কীভাবে কার্যকর রূপে বাস্তবায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে আরো ত্বরান্বিত করা যায় সেই বিষয়ক।

২০২৩ সালে এসে জাতিসংঘের সহায়তায় এ ধরনের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং সব সফল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনার দরকার রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেসের দেয়া পর্যবেক্ষণের কথাও আমাদের স্মরণ করা প্রয়োজন, তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন অবশ্যই শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের প্রস্তুতির কেন্দ্রীয় লক্ষ্য বানাতে হবে। আরো স্থিতিস্থাপকমূলক অর্থনীতি ও সমাজ গড়ে তোলার জন্য পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আমাদের বৈশ্বিক দক্ষিণের পূর্ণ অবদান ও সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।

২০২১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন উদ্বোধনের আগে বৈশ্বিক দক্ষিণের কভিড-১৯ সংকটকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যত নির্মাণে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে সংহতি নিয়ে আলোচনা করার ক্ষেত্র তৈরি করতেই সেবারের জাতিসংঘ দিবসের আয়োজন করা হয়েছিল।

এক্ষেত্রে সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের জন্য জাতিসংঘের ভূমিকা ও তার প্রভাব বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট পন্থা নিয়ে সম্মত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে এ মুহূর্তে আলোচনা করা প্রয়োজন। আর জাতিসংঘের সহায়তার সমন্বয়কে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে যে মূল পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা দরকার তা কেবল সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের উন্নয়নের জন্যই শুধু নয়, যেকোনো জরুরি অবস্থাতে কার্যকর প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এটি করা দরকার। এটি প্রয়োজন মূলত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো সমর্থন করা। তার সঙ্গে ২০৩০ সালের এজেন্ডা অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের মাধ্যমে বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ডের উদ্যোগ, স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, আরো স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই উন্নয়ন নির্মাণের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এখানে বলা দরকার, গত এক দশকে বিশ্ব সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন পদ্ধতির মাত্রা, সুযোগ ও বৈচিত্র্যের বৃদ্ধি দেখেছে। জাতীয় উন্নয়ন নীতি গ্রহণ, কৌশল অবলম্বন, এজেন্সি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, ডাটা সংগ্রহ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ম্যাপিং, কাজের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য তথ্য ও কর্মক্ষমতা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম বিকাশ করার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো সহযোগিতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে জোরদার করেছে।

সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন জাতীয় সক্ষমতা জোরদার হওয়ার সঙ্গে এখন এটা কত পরিমাণে সহায়তা করছে তার প্রমাণ সংগ্রহ ও বিনিময়ের সুযোগ দিয়েছে। এটি কীভাবে জনগণকে উপকৃত করে এবং কীভাবে দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে জাতীয় ও আঞ্চলিক এজেন্ডার পাশাপাশি সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের সঙ্গে সহায়তা করতে পারে তাও দেখায়।

বিশ্ব যখন কভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আবারো বিল্ড ব্যাক বেটার প্রকল্প উদ্যোগের জন্য প্রচেষ্টা চালাছে, তখন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে অবশ্যই উদ্ভাবনী প্রস্তাব দিতে হবে। আর প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য সময়োপযোগী প্রতিক্রিয়াও প্রয়োজন। এর মধ্যে আরো সুসঙ্গত ও"সমন্বিত সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে সমন্বয়ের নতুন ধরনটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা মাঠ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। কভিড-১৯ মহামারী মারাত্মকভাবে পদ্ধতিগত বৈষম্যকে আমাদের সামনে উন্মোচন করেছে। তার সঙ্গে মহামারী আমাদের কাছে ডিজিটাল বিপ্লবের গুরুত্বও তুলে ধরেছে। মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা, উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে উন্নয়ন সমাধান এবং সর্বোপরি সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই উন্নয়ন সহযোগিতার এসব প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার কার্যকারিতা বাড়ানোর সুযোগকে সহজতর করতে হবে। বহুমাত্রিকতা এবং বহু-অংশীদারদের দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করাই উন্নয়নের প্রভাব বাড়ানোর অন্যতম উপায়।

সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি আর স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল রূপান্তর ও পুনরুদ্ধারের কাজের জন্য অপরিহার্য। ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন একটি নমনীয় প্লাটফর্ম, যেখানে অংশীদাররা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন তহবিলকে একত্রিত করতে পারে। ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের জন্য অনুভূমিকতা এবং সব পক্ষের দ্বারা অনুমোদিত অংশীদারত্বের শাসন প্রয়োজন। এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি সুস্পষ্ট শ্রদ্ধা রেখে ও সবাইকে সমান অংশীদারত্বে পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়।

গতানুগতিকভাবে সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন মূলত দ্বিপক্ষীয় শর্তে সরকারের মধ্যে সংঘটিত হতো। যেহেতু উন্নয়নের প্রকৃতি দিন দিন আরো গতিশীল ও অভূতপূর্ব মাত্রায় বড় হয়ে উঠছে, তাই এখন সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন উদ্ভাবনের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়া সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থায়নে নর্থ-সাউথ কো-অপারেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক হিসেবে ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃত।

জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের অফিস বিশ্বব্যাপী এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের প্রচার, সমন্বয় এবং সমর্থন সামনেও অব্যাহত রাখবে। এটি বিকশিত ও উদীয়মান প্রবণতাগুলোকে গতিশীলতা এবং সুযোগগুলোকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্পষ্ট করার জন্য সরকার ও জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে সমর্থন দেয়াও বজায় রাখবে। বিশ্বব্যাপী ও জাতিসংঘের ব্যবস্থার মধ্যে সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনে কার্যালয়ের ম্যান্ডেট দেয়া আছে। আর জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনবিষয়ক আন্তঃসংস্থা ব্যবস্থা এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের সহায়তায় প্রস্তুতির সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় সম্পৃক্ততা শুরু করার জন্য মহাসচিব জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের অফিসকে অনুরোধ করেছেন।

এ কৌশলটির উদ্দেশ্য হলো নীতিনির্ধারণের জন্য একটি সমন্বিত এবং সুসঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা আর সেজন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে একটি বিস্তৃত সিস্টেম নীতির মধ্যে আনা। সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের ওপর প্রোগ্রামিক ও অংশীদারত্ব সমর্থনের সঙ্গে জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সব স্তরে জাতিসংঘের কার্যক্রমে প্রভাব বাড়ানো হবে এভাবে। আর বাস্তবায়ন প্রতিটি সত্তা দ্বারা স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হবে, যা তাদের নিজস্ব ম্যান্ডেট এবং কাজের প্রোগ্রামের ওপর ভিত্তি করেই হবে। 

জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের অফিস বর্তমানে তার ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাজের কৌশলগত ফ্রেমওয়ার্কগুলোও তৈরি করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপের গতি ও মাত্রা ত্বরান্বিত করতে সাউথ-সাউথ এবং ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের ব্যবহারকে অনুঘটক করা এটি অফিসের জন্য একটি অন্যতম সুযোগ। উদাহরণস্বরূপ, অফিসের লক্ষ্য এমন একটি প্লাটফর্ম সরবরাহ করা যার মাধ্যমে: ক) গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের নিজস্ব উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোকে মেটানোর জন্য নিজেদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় করতে, সক্ষমতা বিকাশ করতে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে যেন পারে। খ) জাতিসংঘের সংস্থা, কর্মসূচি, তহবিল যেন সাউথ-সাউথ ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনের বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় পর্যায়ে তাদের সমর্থন জোরদার করতে পারে।

উন্নয়নের স্বার্থে সাউথ-সাউথ ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশনে অবদান রাখার বেলায় কোনো দেশই খুব দরিদ্র নয় বা কোনো দেশই দক্ষিণ থেকে দূরে সরে যাওয়ার মতো এত ধনী নয়। এখানে সব অংশীদারের অবদান রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। সুতরাং এটি অনুসরণ করে যে ত্রিপক্ষীয় কো-অপারেশন আমাদের নিজেদের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

মোহাম্মদ জমির: সাবেক রাষ্ট্রদূত; পররাষ্ট্র, তথ্য অধিকার ও সুশাসনসংক্রান্ত বিষয়াদির বিশ্লেষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন