চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরসহ ১৬ শিক্ষকের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে প্রক্টরসহ ১৬ জন শিক্ষক একসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গতকাল তারা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নূর আহমদের কাছে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন। ১৭টি পদ থেকে ১৬ শিক্ষকের পদত্যাগের ঘটনা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একটি সূত্র বলছে, পদত্যাগ করা শিক্ষকদের প্রায় সবাই বর্তমান উপাচার্য . শিরিণ আখতারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দুই মেয়াদে ভিসির নানা কাজের সাক্ষী ছিলেন তারা, ছিলেন অনেক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এখন উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগে নিজেদের দায় এড়াতেই তারা পদত্যাগ করলেন কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে।

পদত্যাগ করা শিক্ষকরা হলেন প্রক্টর চবির শহীদ আব্দুর রব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক . রবিউল হাসান ভূঁইয়া, সহকারী প্রক্টর এসএম জিয়াউল ইসলাম, . শহীদুল ইসলাম, . রামেন্দু পারিয়াল, মো. শাহরিয়ার বুলবুল গোলাম কুদ্দুস লাভলু। এছাড়া আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক . মো. ওমর ফারুক, শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষক মো. শাহরিয়ার বুলবুল, এএফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক আনাবিল ইহসান, প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষক ফারজানা আফরিন রূপা, শহীদ আব্দুর রব হলের আবাসিক শিক্ষক . এইচএম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, রমিজ আহমেদ সুলতান, শামসুন নাহার হলের আবাসিক শিক্ষক শাকিলা তাসমিন, খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক . মো. শাহ আলম, নাসরিন আক্তার উম্মে হাবিবা এবং আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষক ঝুলন ধর।

এদিকে . রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পদত্যাগের পর পরই নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক . মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া সহকারী প্রক্টর হিসেবে মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের প্রভাষক সৌরভ সাহা জয় এবং ওশানোগ্রাফি বিভাগের মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল থেকেই তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।

পদত্যাগ প্রসঙ্গে . রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। বিভিন্ন সময় গবেষণার কাজ একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে দায়িত্ব থেকে আমি আরো আগেই সরে যেতে চেয়েছিলাম। সেজন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলছে সেটাই বুঝতে পারছি না। ভিসি ম্যাডামের কাজের কোনো শৃঙ্খলা নেই। দুজন সিন্ডিকেট সদস্য যেভাবে চাচ্ছে, সেভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে। তার দায়ভার আমাদের ওপর আসছে। এজন্যই পদত্যাগ করেছি।

পদত্যাগ করা কয়েকজন শিক্ষক বণিক বার্তাকে বলেছেন, উপাচার্যের খুব কাছের এবং বিশ্বাসযোগ্য হওয়ায় তাদের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, কাজের সমন্বয় না করা, ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, দায়িত্ব দেয়া হলেও যথাযথ ক্ষমতা না দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়ানোর প্রস্তাবে গুরুত্ব না দেয়াসহ নানা কারণে উপাচার্যের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। উল্টো আর্থিক অনিয়মসহ নানা বিষয়ের দায় এসে পড়ছিল তাদের ঘাড়ে। যারই জের ধরে একযোগে পদত্যাগ করেন তারা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক পক্ষের শিক্ষকরা বলছেন, যে ১৬ শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচনের গ্রুপিং ইত্যাদি। এছাড়া ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপ বারবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেও সেগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠে প্রক্টরিয়াল বডির বিরুদ্ধে। এসবের বিরুদ্ধে উপাচার্য ব্যবস্থা নেয়ার আগে নিজেরাই সরে গেলেন তারা।

বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য . শিরিণ আখতার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। সদ্য সাবেক প্রক্টর বিষয়গুলো নিজেও জানতেন। তাকে আমি সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রক্টরসহ অন্যরা যে এভাবে একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন সেটা আমি ভাবতে পারিনি। যারা পদত্যাগ করেছেন তারা দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য নতুন প্রক্টরসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ দেয়া হবে।

পদত্যাগকারীদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সবারই কাজের প্রতি অন্তত দায়বদ্ধতা থাকা উচিত। তবে ঢালাওভাবে এসব অভিযোগ ঠিক নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন