জাপান যাত্রী বঙ্গবন্ধু

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

[জাপান-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হইবে-বঙ্গবন্ধু, দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২]

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বিশ্বের মানচিত্রে নবীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অভ্যুদয় লাভ করে। এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ী সংবিধানের আদেশ অনুযায়ী দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ, তাও আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত। রকম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন। কেননা তখনো (১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পূর্বে) ভারত ভুটান ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশ। উপরন্তু পাকিস্তান তার মিত্রদের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র তখনো বিভ্রান্ত। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য স্বীকৃতি আদায় করাটাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পদক্ষেপ। 

১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইসাকু সাতো এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুকুদা। ভারতের নতুন দিল্লির জাপান রাষ্ট্রদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে টেলিগ্রাম পাঠান।

টেলিগ্রামে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতো সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।

জাপান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি বাণী প্রেরণ করেন। বাণীতে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন, জাপান-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হইবে। বাণীতে বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, জাপানের ন্যায় একটি মহান এশীয় দেশের নিকট হইতে আমার দেশের জন্য স্বীকৃতিলাভে আমি সত্যই আনন্দিত। অগ্রগতি, সমৃদ্ধি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধার জন্য জাপান এশিয়া আফ্রিকার বহু দেশের নিকট প্রেরণার উৎস। জনগণের স্বার্থে ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা ক্রমশ, সম্প্রসারিত হইবে বলিয়া আশা করি। আমার সরকার, জনগণ এবং আমার নিজের পক্ষ হইতে জাপান সরকার জনগণকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাইতেছি।

জাপান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল জাপান পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জাপান সরকারের বিশেষ মৈত্রীদূত হিসেবে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। জাপানি প্রতিনিধি দলের সফরের উদ্দেশ্য ছিল জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর চিঠি হস্তান্তর এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা করা

জাপানের সংসদ (ডায়েট) সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ তাকাশি হায়াকাওয়া বাংলাদেশ সফরে নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন তারো সুগা তাকাশি কাসাওকা। আরো যুক্ত ছিলেন জাপানের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র দৈনিক মাইনিচি শিম্বুনের ব্যাংকক অফিসের প্রধান নাগামোতো।

প্রতিনিধি দলের নেতা হায়াকাওয়া মাহেন্দ্রক্ষণের স্মৃতি তুলে ধরেছেন এভাবে, ১৪ মার্চ [১৯৭২] প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তাকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতোর চিঠি দিতে হবে। সন্ধ্যা ৭টার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি ভবনে পৌঁছে আমাদের অবাক হতে হলো। প্রচুর লোকের ভিড়। তারা নাকি নানা অনুরোধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসেছেন। এমন দৃশ্য জাপানে কখনো দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি মুখভরা হাসি নিয়ে আমাদের স্বাগত জানান

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখে দারুণ বিস্মিত হন জাপানি প্রতিনিধি দলের নেতা তাকাশি হায়াকাওয়া। প্রথম দর্শনের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন হায়াকাওয়া এভাবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের অর্ধেক জীবন কেটেছে জেলবন্দি হয়ে। তবে তিনি যে এত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করে এসেছেন, তার প্রাণবন্ত চেহারা আন্তরিক মনোভাব দেখে সে কথা বোঝার উপায় নেই। তার সঙ্গে সাক্ষাতের আগের দিন প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ চৌধুরী আমাদের জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কেবল জাতির মুক্তি আন্দোলনের নেতা নন, তিনি দেশের প্রতীকও।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জোরদার ভূমিকা পালন করে জাপান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বঙ্গবন্ধু কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য জাপানি সহযোগিতা কামনা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ১৯৭৩ সালে জাপান বাংলাদেশকে কৃষিক্ষেত্রে কারিগরি সহযোগিতার জন্য চুক্তি (এক্সচেঞ্জ অব নোটস কনসার্নিং দ্য ডিসপাচ অব জাপান ওভারসিজ কোঅপারেশন ভলান্টিয়ার্স) স্বাক্ষর করে। এরই আলোকে প্রাথমিক পর্যায়ে জাপান তিনজন ভলান্টিয়ার বাংলাদেশে প্রেরণ করে। তাকেও ওশিমা ছিলেন প্রথম বাংলাদেশে আসা একজন ভলান্টিয়ার। বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার জন্য ১৯৭৩ সালের আগস্টে তিনি বাংলাদেশে আসেন। সে সময়ের স্মৃতি উল্লেখ করে তাকেও ওশিমা বলেন, ইট ওয়াজ নাইনটিন সেভেনটি থ্রি আগস্ট, দ্যাট আই সেট ফুট অন বাংলাদেশ অ্যাজ ওয়ান অব থ্রি জেওসিভিএস (রাইজ ফার্মিং, ভেজিট্যাবল অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিন) অ্যান্ড উই ওয়ার দ্য ফার্স্ট ব্যাচ ডিসপাচড টু বাংলাদেশ।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও জাপান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অতীতেও বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি শাসনামলে জাপানি সাহায্য সহযোগিতায় বাংলাদেশের সিলেট ঘোড়াশালে সার কারখানা, চট্টগ্রামে ইস্পাত কারখানা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে রেয়ন প্রস্তুত কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং জাপান পুনরায় স্বউদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান চালু করতে বিশেষ সহায়তা করে।

যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপান থেকে পাওয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং যমুনা নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণ, পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, বস্ত্র রেয়ন মিল এবং ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ আশু প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এছাড়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে এশিয়ার অন্যতম দেশ হিসেবে জাপানের সহযোগিতা কাম্য ছিল। সমস্ত দিক বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফরের প্রস্তুতি নেন। এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এইসাকু সাতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অক্টোবরে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

অক্টোবর মাস জাপান বেড়ানোর জন্য উপযুক্ত সময় সবার প্রিয়। অক্টোবরে জাপান ভ্রমণকারী বিদেশী অতিথিদেরও আন্তরিকতার সঙ্গে জানানো হয় যে তারা উত্কৃষ্ট সময়ে ভ্রমণ করছেন। একথা বিবেচনা করেই জাপান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ওই মাসে সফরে আসার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান যাত্রার উৎসবে দৈনিক ইত্তেফাক যথার্থই লিখেছিল, আঠারোই অক্টোবর জাপানে জাগবে আর এক চেরি ফুলের উৎসব। উৎসবের বর্ণাঢ্যতায় মোহনীয় হয়ে উঠবে জাপান। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নগ্ন ছোবলে দংশিত বর্তমান নতুন প্রাণ সত্তায় জাগ্রত, সপ্তাহব্যাপী রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন সাম্রাজ্যবাদীদের দোসর এক শক্তির বিষাক্ত দংশনে দংশিত, ক্ষত-বিক্ষত এবং বর্তমানে মুক্ত স্বাধীন এক দেশের মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নাম।

বঙ্গবন্ধু জাপান সফর বাংলাদেশ জাপান দুই দেশেই অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। জাপান বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে গ্রহণ করবে? প্রশ্নের উত্তর ছিল খুবই সোজা। একান্ত আপনজনের অকৃত্রিম অনুভূতি স্বাগত জানাবে বঙ্গবন্ধুকে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্তর্জাতিক প্রশ্নে সব সুসম্পর্ক ছাড়াও এক বিশেষ অনুভূতি চেতনার দিক দিয়ে দুই দেশের মধ্যে অনন্য প্রীতি শুভেচ্ছার সম্পর্ক বিদ্যমান। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে অনন্য মিল এখানেই, দুই দেশের মানুষের হূদয়েই লাখো স্বজন প্রিয়জন হারাবার ব্যথা জন্ম দিয়েছে সমমর্মিতার। দুটি দেশই মানবতা বিরোধী, বর্বরতা মহাধ্বংসযজ্ঞের শিকার।

বঙ্গবন্ধুকে জাপানিরা যে হূদয়ের সবটুকু রঙ প্রাণের সব ঐশ্বর্য দিয়েই স্বাগত জানাবে বিষয়ে কোনোই সন্দেহ ছিল না। কারণে যাত্রার প্রারম্ভে সংবাদপত্রে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ার মতো। ঢাকার জাপানি সংঘ এবং জাপান ওল্ড বয়েজ অ্যাসোসিয়েশন (আজিয়া বুংকা কাইকান দোসোকাই, বাংলাদেশ) তাদের এক বিজ্ঞাপনে বলেছিল, বন ভয়েজ! আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূর্যোদয়ের দেশে ঐতিহাসিক সফর সাফল্যমণ্ডিত হোক।

১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাক জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী অনন্য চেতনায় সমৃদ্ধ শিরোনামে লিখেছিল, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যথার্থই আন্তরিক, চিরস্থায়ী। মৈত্রী, শুভেচ্ছা সহযোগিতার আদর্শেই তা সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই জাপান জানিয়েছিল স্বীকৃতি। শুধু স্বীকৃতিদানই নয়যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনেও সে বাড়িয়ে দিয়েছিল তার সহযোগী হাত।

১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭০৭ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে টোকিওর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সপ্তাহব্যাপী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরে সঙ্গীদের তালিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, ছোট ছেলে শেখ রাসেল ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কামাল হোসেন, মিসেস হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান . নূরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তোফায়েল আহমেদ, প্রধান সচিব জনাব রুহুল কুদ্দুস, পররাস্ট্রসচিব জনাব এনায়েত করিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাইরেক্টর জেনারেল জনাব ডব্লিউ শামসুল আলম, তাহার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ব্যক্তিগত কর্মচারীরা। সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক এহতেশাম হায়দার চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রীয় সফরের সহযাত্রী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তথা বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাপান সরকার জনসাধারণের গভীর সহানুভূতি সবসময় বিদ্যমান। তার প্রমাণ পাওয়া যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান যাত্রার প্রাক্কালে। এদিন ঢাকা বিমানবন্দরে অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী জাপানি নাগরিক উপস্থিত ছিল। এছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দুজন জাপানি বালিকা ফুলের তোড়া উপহার দেয়।

বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক সমঝোতা আরো বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো জোরদার করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সরকারের সঙ্গে নিম্নোক্ত বিষয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। বিষয়গুলো হলো

বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জাপানের অংশগ্রহণ, যমুনা নদীর উপর প্রস্তাবিত সেতু নির্মাণের বিষয়, বাংলাদেশের জাতিসংঘভূক্তি, ত্রিমুখী লোক বিনিময় সংক্রান্ত সাম্প্রতিক দিল্লি চুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, বস্ত্র রেয়ন মিল, ইউরিয়া সার কারখানা, স্টিল মিল পাওয়ার টিলার প্রকল্প স্থাপন, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বিষয় এবং এশিয়ায় একটি শান্তি এলাকা প্রতিষ্ঠার বিষয়ও পর্যালোচনা করা।

(তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ অক্টোবর ১৯৭৩)

ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের নিকট বলেন, তাহার এই সফরের ফলে জাপান বাংলাদেশের মৈত্রী আরো দৃঢ়তর হইবে। আমি জাপানের জনগণের জন্য আমার দেশবাসীর শুভেচ্ছা লইয়া যাইতেছি এবং তথা হইতে বাংলাদেশের জন্যও জাপানিদের শুভেচ্ছা লইয়া আসিব। দৈনিক বাংলার ভাষায়, সময় বঙ্গবন্ধুকে বেশ উত্ফুল্ল দেখাচ্ছিল।... বিমানের সিঁড়িতে উঠার আগে বঙ্গবন্ধু তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা নাতি জয়কে আদর করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুর্যোদয়ের দেশ জাপানযাত্রা অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও এক নতুন যুগের সূচনা বলে সব মহল আশাবাদ ব্যক্ত করে। কোটি বাঙালির হূদয়ের উত্ফুল্লতা প্রকাশ পেয়েছিল পত্র-পত্রিকায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান যাত্রায় অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ভাষায় পত্রিকা লিখেছিল, সেখানে জাগবে আরেক চেরী ফুলের উৎসব। বাস্তবিক অর্থে তাই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান যাত্রায় জাপান বাংলাদেশ নতুনভাবে বন্ধুত্ব সম্পর্কের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়।

 

. মো. আনোয়ারুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন