মায়ের অপেক্ষা নিয়ে ‘ওমর ফারুকের মা’

ফিচার প্রতিবেদক

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানেই আমরা পেয়েছি আমাদের এ দেশ। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন হাজারো তরুণ। এমনই একজন পিরোজপুরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক। তিনি তৎকালীন পিরোজপুর মহাকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পিরোজপুরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শহীদ এ যোদ্ধার মাকে নিয়ে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওমর ফারুকের মা’। এটি নির্মাণ করেছেন এমএ জাহিদুর রহমান। একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী অভিনেত্রী দিলারা জামান এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। 

নির্মাতা এমএ জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফিল্ম আর্কাইভে ‘ওমর ফারুকের মা’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

এ নিয়ে দিলারা জামান বলেন, ‘আমি যখন জানতে পারলাম ওমর ফারুকের মা বেঁচে আছেন, তখন তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। তিনি কথা বলতে পারেন না, কিন্তু বারবার আমাকে ছুঁয়ে দেখছিলেন। সে স্মৃতি চোখে এখনো বেশ উজ্জ্বল। আর যখন আমি অভিনয় করছিলাম, তখন নিজেরই বারবার কান্না চলে আসছিল। ক্যামেরার সামনে আমি কাঁদছিলাম আর ক্যামেরার পেছনে অন্যরা কাঁদছিল। নির্মাতা অনেক শ্রম দিয়ে সিনেমাটি তৈরি করেছেন। তার জন্য অনেক দোয়া।’

২০১৭-২০১৮ সালের সরকারি অনুদানে ১০ লাখ টাকা পায় এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর মূল গল্প ও কাহিনীসংক্ষেপের কাজ করেছেন পরিচালক জাহিদুর রহমান। চিত্রনাট্য করেছেন মাসুম রেজা।

এর কাহিনী সম্পর্কে জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‌মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একজন মায়ের অপেক্ষা নিয়ে এ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। শুটিং করার আগেই আমি পিরোজপুরে গিয়ে ওমর ফারুকের মা কুলসুম বেগমের সঙ্গে কয়েক বার দেখা করেছি। বয়সের ভারে তার স্মৃতিশক্তি কমে গেলেও ছেলে ফিরে আসবে এ নিয়ে তার অপেক্ষা ছিল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। মাস ছয়েক আগে তিনি মারা গিয়েছেন। ওমর ফারুক যুদ্ধের সময় মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিলেন রাতে ফিরে মায়ের হাতে ভাত খাবেন। কিন্তু তার আর ফেরা হয়নি। সে রাতেই তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। 

হানাদার বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয় ফারুকের। তারপর তার লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় কীর্তনখোলার জলে। কিন্তু এ নির্মমতার কথা এখনো বিশ্বাস করতে পারেননি শহিদ ওমরের মা কুলসুম বেগম। তাই তিনি তিন বেলাই ছেলের জন্য ভাত রান্না করতেন। কখনো ঘরের দরজা বন্ধ করতেন না, যদি তার আদরের ছেলে ফিরে আসে এ আশায়। আমরা মায়ের এ অপেক্ষার সত্য কাহিনীটা এতে তুলে ধরেছি আর এর সঙ্গে গল্পের আবহ তৈরি করতে কিছু বিষয় সংযুক্ত করেছি।’ 

চলচ্চিত্রটিতে শহীদ ফারুকের ভূমিকায় কাজ করছেন সাঈদ বাবু। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন বন্যা মির্জা, সাহেদ শরীফ খান, খাইরুল আলম সবুজ, নাজনীন হাসান চুমকি, সালমা রহমান, আইনুন পুতুল, রিপন চৌধুরী, কাজী রাজু, সৈয়দ শুভ্র, মুকুল সিরাজ, এবিএম মোতাহারুল ইসলাম, প্রণব ঘোষ, রোশেন শরিফ ও তুহিন আহমেদসহ আরো অনেকে।

চলচ্চিত্রটি উৎসর্গ করা হয়েছে সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও ওমর ফারুকের মা"কুলসুম বেগমকে। শহীদ ফারুক ছিলেন পিরোজপুরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা। দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার সময় হানাদার বাহিনীদের হাতে তিনি ধরা পড়েন। হানাদার বাহিনীরা তার মাথায় বাংলাদেশের পতাকা লোহার রডে বেঁধে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে হত্যা করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন