পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীও চাইছেন এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর পর্ষদ তালিকাভুক্ত হতে চায় না। পরিচালনায় গতি আনতে সরকারি কোম্পানিগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’
শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের (সিএমএসএফ) বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. জাহিদ হাসান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. আবু আহমেদ ও ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনূসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) কাউন্সিল সদস্য গোপাল চন্দ্র ঘোষ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও এবং অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) চেয়ারম্যান ড. হাসান তাহের ইমাম। সিএমজেএফের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অনেক কিছু বইয়ে লেখা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। বিশ্লেষকরা উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের তুলনা করেন। উন্নত দেশগুলোতে সুদের হার ১ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে। সেখানে মানুষ ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় পুঁজিবাজারে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র বিপরীত। এখানে আমানত ও ঋণের সুদের হার ৭-৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতিও ৭ শতাংশের বেশি। ফলে মানুষ পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। আমি অনেক কিছুই করতে চাই। কিন্তু অনেক কিছু প্রস্তুত না থাকার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা নতুন পণ্য চালু করতে চাই। কিন্তু দক্ষ লোকের খুবই অভাব। ডিএসই প্রস্তুত থাকলে এ মাসেই সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে। এতে বাজার মূলধন জিডিপির ২৫ শতাংশে চলে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর যেভাবে সহযোগিতা করছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট দেখতে পারব। কারসাজির ঘটনায় তদন্ত ও তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই করে শাস্তি দিতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যায়। ততক্ষণে বিনিয়োগকারী ও বাজারের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে যায়। গত দুই বছরে ৩৬টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে ভালো কিছু কোম্পানি আসবে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বলেন, দেশের পুঁজিবাজার ভালোভাবে কাজ করছে না। কারণ শিল্পায়নে ৯০ শতাংশ পুঁজি আসে ব্যাংক থেকে। ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করছে। এরপর ঋণখেলাপি বাড়ছে। সেই ঋণ আবার অবলোপন হচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজারের বিকাশে ব্যাংকে সুশাসন জরুরি। আরেকটি সমস্যা হলো এখানে ভালো কোম্পানি কম। এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে অনেকে প্রণোদনা বাড়ানোর কথা বলছেন। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানো অন্যতম। কিন্তু ব্যবধান বাড়ালেও কোম্পানি আসবে না। মূল কথা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে আইন বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম। এই সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো আচরণ করে। এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের আরো সুবিধা দেয়া যেতে পারে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. আবু আহমেদ বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য করতে হবে। ইউনিলিভার ও নেসলের মতো কোম্পানির পণ্য আমরা ব্যবহার করছি। তারা আমাদের এখানে ব্যবসা করে মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দেশের জনগণকে কোম্পানির মালিকানা দিচ্ছে না। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ইউনিলিভার ও নেসলে থাকে। তাহলে আমাদের এখানে নেই কেন? জাঙ্ক শেয়ার দিয়ে দেশের পুঁজিবাজার চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
