বগুড়ায় বাম্পার ফলনেও কাঁচামরিচের দাম চড়া

এইচ আলিম, বগুড়া

বগুড়ার একটি আড়তে মরিচ বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে কাঁচামরিচের ঝালে দিশেহারা ক্রেতারা। দুই সপ্তাহ আগেই কাঁচামরিচ ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে কৃষিপণ্যটির কেজি ৩০০ টাকা ছুঁইছুঁই।  এমনকি দেশের যেসব জেলায় কাঁচামরিচের উৎপাদন তুলনামূলক বেশি হয়, সেখানেও খুচরা বাজারে দাম চড়া।

বগুড়ায় এবার কাঁচামরিচের বাম্পার ফলন হলেও দাম কমছে না। চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে মরিচ চাষ হলেও খোলাবাজারে বিক্রেতারা ভিন্ন কথা বলে দাম বাড়িয়েছেন। আর বাজারে দাম থাকায় মরিচচাষীরাও এবার লাভবান হচ্ছেন। জেলায় চলতি খরিপ মৌসুমেই কাঁচামরিচ উৎপাদন হবে প্রায় হাজার টন।

ভালো ফলন হলেও কাঁচামরিচের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আড়তদারের দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া ডলারের দাম বাড়ায় ভারতীয় মরিচ আমদানিতে খরচ বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের যুক্তি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বাজারে মনিটরিং না থাকায় অন্য নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সুযোগে কারসাজি করে অতিপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বগুড়া জেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ সদর উপজেলায়। তবে কাহালু, দুপচাঁচিয়া আদমদীঘি উপজেলায়ও কমবেশি কাঁচামরিচ চাষ হয়েছে। জেলায় উৎপাদিত কাঁচামরিচের ঝাল বেশি থাকে বলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ চাহিদা রয়েছে। জেলায় মূলত তিন সময়ে মরিচ চাষ হয়ে থাকে। রবি মৌসুমে বগুড়া জেলায় প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। ১৬ মার্চ-১৫ জুলাই খরিপ মৌসুম- ১৬ জুলাই-১৫ অক্টোবর পর্যন্ত খরিপ- এবং বছরের বাকি সময়টা রবি মৌসুম ধরা হয়। জেলায় রবি মৌসুমে ১২ উপজেলায় সমানভাবে মরিচ চাষ হয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে সোনাতলা সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরাচঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়ে থাকে। রবি মৌসুমের চাষকৃত মরিচ কাঁচা শুকনা আকারে ফলন হয়ে থাকে। এছাড়া খরিপ- খরিপ- মৌসুমের কাঁচামরিচ হিসেবেই চাষ বাজারে বিপণন হয়ে থাকে। চলতি খরিপ- মৌসুমে প্রাথমিকভাবে ৬৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সেখানে চাষ হয়েছে অতিরিক্ত জমিতে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীতে বন্যার পর স্থানীয় চাষীরা এবার বেশকিছু জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। জমি থেকে পাওয়া কাঁচামরিচই অতিরিক্ত হিসেবে ধরা হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার প্রতি হেক্টরে ফলন ধরা হয়েছে গড়ে ১৪ টন। জেলায় এবার বেশকিছু জমিতে উচ্চফলন জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। সে কারণে গড়ে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৪ টন করে ফলন পাওয়া যাবে। হেক্টরপ্রতি ১৪ টন করে ফলন ধরলে বগুড়ায় শুধু খরিপ-- মরিচ উৎপাদন হবে হাজার ১০০ টন। তার পরও জেলায় দেশের বাজারে মরিচের দাম নিয়ে ভোক্তারা হতাশ।

এদিকে বর্তমানে জেলার চাষীরা বেশির ভাগ জমি থেকে মরিচ উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মরিচচাষীরা খেতের পরিচর্যা গাছ থেকে মরিচ তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান বাজারে মরিচের দাম বেশি হওয়ার কারণে চাষীরা আরো উৎসাহী হয়ে বাজারে মরিচ বিক্রি করছেন।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বছরই মরিচের বাম্পার ফলন হয়। এবারো কৃষক কাঁচামরিচের দাম ভালো পেয়েছেন। ফলে এখানকার মরিচচাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। মরিচচাষীরা জানান, এবার একই সঙ্গে ভালো ফলন দাম পেয়ে খুশি তারা।

বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বাবু জানান, কাঁচামরিচ বগুড়াতেই চাষ হয়ে থাকে। তার পরও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে কাঁচামরিচের মূল্যবৃদ্ধি যায় না। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে চলেছেন।

বগুড়া রাজাবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মনতেজার রহমান জানান, এলসির মাধ্যমে ভারতীয় মরিচ এসেছে বগুড়ায়। এর মধ্যে এক ধরনের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। আর ভালো মানের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া বগুড়া সদর উপজেলায় চাষ করা কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।

শুক্রবার বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা ময়েন মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে দাম বেশি। প্রতি কেজি মরিচ এখন বিক্রি করা হচ্ছে খুচরা হিসেবে ২৪০ টাকা কেজি।

বগুড়া রাজাবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যে পরিমাণ মরিচ উৎপাদন হতো সেটি এবার হয়নি। বন্যার কারণে দেরি হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে মরিচের খেত নষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে মরিচ আমদানি করার ক্ষেত্রে ১০০ টাকার স্থলে আমরা পাচ্ছি ৬৮ টাকার। যে কারণে মরিচ আমদানি করেও দাম বেশি পড়ছে। তাই বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন জানান, কৃষিপণ্যের জন্য বগুড়ার মাটি আদর্শ। জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একদিকে ভালো ফলনের জন্য মাটি ভালো, অন্যদিকে উচ্চফলনশীল জাত চাষের কারণে ফলন বেড়ে যায়। বগুড়ায় সবচেয়ে রবি মৌসুমে মরিচ চাষ বেশি হয়। এছাড়া খরিপ মৌসুমে যে পরিমাণ মরিচ চাষ হয়ে থাকে তা দিয়ে স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ হওয়ার পর বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। খরিপ মৌসুমে কাঁচামরিচ হিসেবেই চাষ করা হয়। জেলায় এবার খরিপ- মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৪ টন করে ধরা হলে ফলন দাঁড়ায় হাজার ১০০ টন। কম খরচে বেশি লাভের আশায় চাষীরা শুকানোর পরিবর্তে কাঁচামরিচ আকারে বাজারে বিক্রি করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন