বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

লেনদেনে একটির বেশি ব্যাংক হিসাব নয়

সাইফ সুজন

আইন অনুযায়ী দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করে সাধারণ তহবিল থাকার কথা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বেতন-ফিসহ অন্য সব উৎসের অর্থ তহবিলে জমা করা বাধ্যতামূলক। অর্থ ব্যয়ের বিধানও রাখা হয়েছে শুধু ওই একটি তহবিলের মাধ্যমেই। যদিও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আইনি নির্দেশনা মানছে না বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটি কার্যালয় স্মারক পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব লেনদেন কার্যক্রম একটি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে রাখার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে তা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ইউজিসির চিঠিতে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ মে কার্যালয় স্মারকটি ইস্যু করেন। সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজিস্ট্রারকে কার্যালয় স্মারকটি পাঠানো হয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওমর ফারুখ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একটিমাত্র সাধারণ তহবিলের মাধ্যমে সব ধরনের আয় ব্যয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক তহবিলের মাধ্যমে তাদের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যার ফলে আইনে বর্ণিত নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটছে। এছাড়া হিসাব যাদের স্বাক্ষরে পরিচালনা হওয়ার কথা, সেটিও অনুসরণ করা হচ্ছে না। বিষয়টি আর্থিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে কমিশনের অনুমোদনক্রমে কার্যালয় স্মারকটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ আইন স্মারকের ভিত্তিতে তাদের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

স্মারকে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৪৪() ধারায় প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ তহবিলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত বেতন, ফি অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা ব্যয় করার বিধান রয়েছে। কিন্তু কমিশন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় তা অনুসরণ করছে না। অবস্থায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল একটিমাত্র ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালনা এবং তহবিলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত বেতন, সব ধরনের ফি অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা ব্যয় নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এছাড়া হিসাব পরিচালনায় স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটছে বলে কার্যালয় স্মারকে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৪৪() ধারায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ট্রেজারারের যৌথ স্বাক্ষরে সাধারণ তহবিল পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে না। তাই আচার্য নিযুক্ত ট্রেজারার বোর্ড অব ট্রাস্টিজ মনোনীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ২৯ ধারার অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পূর্ণকালীন একজন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সাধারণ তহবিল পরিচালনা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হলো।

এতে আরো বলা হয়েছে, স্মারকের যেকোনো ব্যতিক্রম আইনত অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

দেশে বর্তমানে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৮টি। এর মধ্যে কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কার্যক্রম পরিচালনাকারী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই আর্থিক কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একটি তহবিলের মাধ্যমে সব ফি-বেতন জমা নেয়ার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে একাধিক হিসাব ব্যবহার করছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নগদে ফি সংগ্রহকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া আইনে আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করে কমিশন সরকারকে জানানোর নির্দেশনা থাকলেও সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক অনীহা দেখা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আর্থিকসহ সব ধরনের শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন ধরনের পরিদর্শন অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইউজিসি। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক . বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে, আইনে সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আর আইনে বর্ণিত নির্দেশনা মানার বিষয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিষয়েও আইনের আলোকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন