বায়োমেট্রিক ডাটা সংগ্রহ কতটুকু শঙ্কার

বণিক বার্তা ডেস্ক

দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ সুন্দর করতে প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সব উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে প্রযুক্তি বাজারে। কয়েক দশক আগেও যেসব প্রযুক্তি দেখানো হতো কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রে, তার বেশির ভাগই আজ স্থান করে নিয়েছে দৈনন্দিন জীবনে। এই যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং সুবিধা ছাড়া এখনকার স্মার্টফোন চিন্তাও করা যায় না। অথচ কয়েক বছর আগেও দৃশ্যটা এমন ছিল না। আঙুলের স্পর্শে আনলক করা যাবে সেলফোন, করা যাবে নিরাপদ লেনদেনএমন দৃশ্য কল্পনা করাটাই ছিল রোমাঞ্চকর।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে অনেকটাই সহজ হয়েছে জীবনযাত্রা। ফিঙ্গারপ্রিন্টের পাশাপাশি ফেস আইডি ব্যবহার করেও সহজেই করা যাচ্ছে অনেক কাজ। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডির মাধ্যমে সংগৃহীত হচ্ছে ব্যক্তিগত বায়োমেট্রিক তথ্য, যা জমা হচ্ছে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে উদ্বেগের কোনো বিষয় আছে কিনা, আর কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি সবার মধ্যে স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। বলা বাহুল্য, লক্ষ্যে তারা বেশ সফল। পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ঝামেলা এড়ানো যায় বলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেস আইডি ইত্যাদির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময় বাঁচানোর কথা বলে লাঞ্চ পেমেন্টের জন্য ফেসিয়াল স্ক্যানিং চালু করা হয়। তবে তথ্য গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞ অভিভাবকদের বিরোধিতার মুখে এটি বাতিল করতে বাধ্য হয় কয়েকটি বিদ্যালয়। সময় বাঁচানোর বিনিময়ে শিশুদের বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে রাজি নন তারা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মার্কিন টিকিট বিপণন প্রতিষ্ঠান এএক্সএস একটি বড় কনসার্টে প্রবেশের জন্য টিকিটের বিকল্প হিসেবে অ্যামাজন ওয়ান পাম প্রিন্ট স্ক্যানার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সংগীতজ্ঞদের তাত্ক্ষণিক বিরোধিতার মুখে পড়ে সিদ্ধান্তটি।

লাইভ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এমন ঘটনা এটিই একমাত্র নয়। ২০১৯ সালে বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান লাইভনেশন এইজি কনসার্টে প্রবেশের জন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলে তীব্র বিরোধিতার মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়।

লাইভ অনুষ্ঠানে বায়োমেট্রিক স্ক্যানিংয়ের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে যখন পেশাদার ক্রীড়া আয়োজনগুলো মুখ থুবড়ে পড়ল, তখন আয়োজকরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে দৃশ্যমান টিকিটের বদলে মুখচ্ছবি ব্যবহার করলে সংক্রমণ থেকে বাঁচা যাবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলে ভিন্ন কথা। ক্রীড়ার মতো বড় লাইভ অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবেই হাজারো দর্শকের ভিড় হয়। সেখানে শুধু দৃশ্যমান টিকিট স্পর্শ না করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যাবেএটা নিতান্তই অতিকথন। এটা সত্য, করোনাভাইরাস মানবজাতিকে গভীর সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ভাইরাস থেকে সুরক্ষার নামে বায়োমেট্রিক তথ্য হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাতেই হচ্ছে।

জনসাধারণকে বায়োমেট্রিক নজরদারির মধ্যে আনতে সামনে আনা হচ্ছে জননিরাপত্তার বিষয়টি। সম্প্রতি মার্কিন আইনপ্রণেতারা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন। এতে মদ্যপ অবস্থায় যেন গাড়ি চালানো না যায়, নতুন গাড়িগুলোয় এমন একটি প্যাসিভ টেকনোলজি সংযোজন করতে বলা হয় গাড়ি নির্মাতাদের। উদ্যোগ হিসেবে এটি অত্যন্ত ভালো হলেও উদ্বেগ জাগাচ্ছে প্যাসিভ টেকনোলজি বিষয়টি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এক্ষেত্রে চোখ স্ক্যান করার ডিভাইস বা ব্রিদ অ্যানালাইজার থেকে শুরু করে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে।

করোনা মহামারী আতঙ্কে যেকোনো কিছুর সংস্পর্শ এড়াতে চেয়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। ফলে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে যায় সরকার লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। তবে এভাবে চলতে থাকলে নাগরিক স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বায়োমেট্রিক তথ্য কোন সার্ভারে রাখা আছে, কতটা সুরক্ষিত অবস্থায় আছে, এসব তথ্য গোপনে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে কিনা, দিলে কার কাছে দেয়া হচ্ছে, তা জানা নেই। তাই যতটা সম্ভব কম বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার পরামর্শ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।        টেক ক্রাঞ্চ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন