আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে এফআরসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরীক্ষক কোম্পানির যোগসাজশে আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির বিষয়টি বেশ পুরনো। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক খাতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তে আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এবার আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) এরই মধ্যে ১৭টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষকের কার্যক্রম তদন্ত করে দেখতে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) চিঠি দিয়েছে এফআরসি। আইসিএবির কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এফআরসি সূত্রে জানা গেছে, এসব নিরীক্ষক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারো কারো বিরুদ্ধে সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি নিরীক্ষা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ নিরীক্ষার ক্ষেত্রে মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। কেউবা আবার ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেমের (ডিবিএস) বাইরেও নিরীক্ষা করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে আরো অধিকতর তদন্তের জন্য পেশাদার নিরীক্ষকদের লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আইসিএবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেসব নিরীক্ষক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে মতিন অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার কে আব্দুল মতিন, আনিসুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার মো. আনিসুর রহমান, হুদা হোসাইন অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার মো. আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ আতা করিম অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার এএসএম আতাউল করিম, অমল অ্যান্ড লীনা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার অমল কৃষ্ণ দাস, কে দেব অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার অঞ্জন কুমার দেব, রহমান মোস্তাফিজ হক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার ইকরামুল হক, শফিক মিজান রহমান অ্যান্ড অগাস্টিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার একেএম মিজানুর রহমান, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার চৈতী বসাক, জোহা জামান কবির রশিদ অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার মো. ইকবাল হোসাইন, এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, মোস্তফা কামাল অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, রহমান ঠাকুর অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, মান্নান অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, হাবিব সারোয়ার ভূঁইয়া অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, হাফিজ আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং এমএন ইসলাম অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। আইসিএবির কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ডিপার্টমেন্ট (কিউএডি) আলোচ্য নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে কিনা, এসব প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষক কর্তৃক যেসব নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান অনুসারে হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখবে।

বিষয়ে এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাঈদ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) এক লাখের বেশি কোম্পানি নিবন্ধিত থাকলেও প্রতি বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে ৪০ হাজার নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা পড়ে। আইসিএবির তৈরি করা ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিবিএস) চালু করার পর এখানে এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ হাজার প্রতিবেদন নিরীক্ষার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মানে হচ্ছে ডিবিএস চালুর পরও কোম্পানিগুলো জাল আর্থিক প্রতিবেদন এনবিআরের কাছে জমা দিচ্ছে। আমরা এসব জাল আর্থিক প্রতিবেদন কারা স্বাক্ষর করেছে, সেটি জানার চেষ্টা করছি। এজন্যই আইসিএবিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরই মধ্যে সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের দুই ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করার দায়ে এফআরসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার রামেন্দ্র নাথ বসাকের নিরীক্ষা চর্চার সনদ (সিওপি) পাঁচ বছরের জন্য স্থগিত করেছে আইসিএবি। একইভাবে এবিএস চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকের সিওপি পাঁচ বছরের জন্য স্থগিত করেছে আইসিএবি। কপারটেক ইস্যুতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আহমেদ অ্যান্ড আখতার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের অংশীদার কাঞ্চি লাল দাসের সিওপি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আইসিএবি। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে পাঠানো বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিএবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু বণিক বার্তাকে বলেন, এফআরসির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষক সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিযোগ আসে। আমাদের কিউএডি বিভাগ সেগুলো যাচাই-বাছাই তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। আমরা প্রতিবেদন এফআরসিকে পাঠিয়ে দিই। পরবর্তী সময়ে তারা যদি বিষয়ে আইসিএবিকে কোনো ব্যবস্থা নিতে বলে, তখন আমরা সে অনুসারে পদক্ষেপ নিই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন