২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাস

পোশাক-চামড়ায় বাড়লেও রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে পাটে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশে তৈরি রফতানি হওয়া শীর্ষ তিন পণ্য পোশাক, পাট পাটজাত এবং চামড়া চামড়াজাত পণ্য। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানির ৮৬ দশমিক শতাংশজুড়েই ছিল তিন পণ্য। আধিপত্য বজায় আছে চলমান অর্থবছরেও। তবে পরিবর্তন এসেছে রফতানির গতিতে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাস শেষে পোশাকের রফতানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চামড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানিও বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে পাট পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে, যার হার ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অধীনস্থ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যার সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে গতকাল। দেখা যাচ্ছে, আলোচ্য পাঁচ মাস বা জুলাই থেকে নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির মোট অর্থমূল্য ছিল হাজার ৯৭৯ কোটি লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। হিসেবে মোট রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে শীর্ষ তিন পণ্যের মধ্যে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল হাজার ৫৮৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় হাজার ২৮৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের। হিসেবে রফতানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মোট রফতানির ৮০ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। ফলে মোট রফতানিতে হওয়া প্রবৃদ্ধির বড় ভূমিকায় ছিল পোশাক।

চামড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানি চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে হয়েছে ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পণ্য। হিসেবে চামড়া চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।

এদিকে পোশাক এবং চামড়া চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বাড়লেও কমেছে বাংলাদেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট পাটজাত পণ্যের। পণ্যের রফতানি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বরে ছিল ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৫৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের। হিসেবে পণ্যটি রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা কমেছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে তৈরি পণ্যগুলো রফতানির প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো। কভিড মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে দেশগুলোর বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো সক্রিয় হওয়ার পর চাহিদার উল্লম্ফনও দেখা গিয়েছিল, যার প্রতিফলন হিসেবে মোট রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রবৃদ্ধি টেকসই হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ এরই মধ্যে কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন আঘাত হেনেছে। যার প্রভাবে পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদায় ভাটার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে রফতানির বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা।

রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন হিসেবে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছিল। যদিও ক্রেতারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করেছেন রফতানিকারকদের। তার পরও ক্রয়াদেশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের পরিপ্রেক্ষিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি এখনো বেশ ইতিবাচক। কিন্তু এখন কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের কারণে রফতানির গতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমান প্রবৃদ্ধি কতটুকু টেকসই হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

প্রধান পণ্য পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে খুচরা বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ আসছে। যদিও আমরা অনেক রফতানি করছি। কিন্তু উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়ে মুনাফা কমেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প ভঙ্গুরতা বেড়েছে। পরিস্থিতিতে রফতানি উল্লম্ফন টেকসই করার দিকে নজর দিতে শুরু করেছিলেন রফতানিকারকরা। গুণগত সক্ষমতা গড়ে তোলাসহ মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়েও ভাবতে শুরু করেছেন তারা। তবে কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রফতানিকারকরা।

এদিকে, ইপিবির মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, গত নভেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি হার ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ। নভেম্বরে পণ্য রফতানি হয়েছে ৪০৪ কোটি ১৩ লাখ ডলারের। গত বছরের নভেম্বরে রফতানি হয় ৩০৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস শেষ হয় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়েই। জুলাইয়ে রফতানির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১১ শতাংশ। আগস্টে যা ইতিবাচক ধারায় ফেরে। ওই মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩৭ দশমিক ৯৯, অক্টোবরে যা আরো বেড়ে হয় ৬০ শতাংশ আর নভেম্বরে প্রবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন