অপরিশোধিত ইস্পাতের বৈশ্বিক উৎপাদনে মন্দা কাটছে না। চলতি বছরের অক্টোবরেও ধাতুটির উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এ সময় উৎপাদন হয়েছে ১৪ কোটি ৫৭ লাখ টন। এ নিয়ে তিন বছরের মতো উৎপাদন কমেছে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএসএ) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক চীনে টানা পাঁচ মাসের মতো অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন কমেছে। এটি বৈশ্বিক উৎপাদন হ্রাসে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। যদিও সেপ্টেম্বরের তুলনায় বৈশ্বিক উৎপাদন দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ওই মাসে উৎপাদন ১৭ মাসের সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অক্টোবরে চীন ৭ কোটি ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ২২ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন উৎপাদন।
সাধারণত শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদনের ৫০ শতাংশই আসে চীন থেকে। তবে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এর ব্যত্যয় ঘটেছে। বৈশ্বিক অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনে অক্টোবরে চীনের হিস্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ১৪ শতাংশে।
জার্মানির একটি ইস্পাত কারখানা-সংশ্লিষ্ট সূত্র এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসকে জানায়, বিশ্ববাজারে নেতৃস্থানীয় দেশ চীন। তাদের উৎপাদন হ্রাস স্বাভাবিকভাবেই বৈশ্বিক উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। চীনে উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদক ভারত। অক্টোবরে দেশটিতে ধাতুটির উৎপাদন বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ টনে।
এদিকে জাপানের উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ এবং সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১ শতাংশ বেড়ে ৮২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ লাখ টন, যা ২০২০ সালের অক্টোবরের তুলনায় ২১ এবং এ বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
ডব্লিউএসএর হিসাব অনুযায়ী, গত মাসে রাশিয়ায় ৬১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ১ শতাংশ কমে ৫৮ লাখ টনে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপজুড়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়। এক বছরের ব্যবধানে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও এক মাসের ব্যবধানে ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে উৎপাদন। অক্টোবরে জার্মানি ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদক। এ সময় দেশটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদন করে। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ৭ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে উদ্বৃত্ত ইস্পাত নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইউরোপের বাজার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর ও চিপ সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে কমেছে গাড়ি নির্মাণ। এতে গাড়ি নির্মাণের অন্যতম উপকরণ ইস্পাতের চাহিদা লক্ষণীয় মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে।
অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদনের দিক থেকে এবারো সম্মিলিতভাবে শীর্ষে ছিল এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চল। তবে উৎপাদন হ্রাসেও অঞ্চলটিই প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। অক্টোবরে এ অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোয় ১০ কোটি ৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
