ব্যাংকে চেক ক্লিয়ারিং বন্ধে ভুক্তভোগী ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা

রোজাকেন্দ্রিক পণ্যের দাম কমলেও ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

লকডাউন রমজানের কারণে এক সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম। তবে রমজান শুরুর পর বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটির কারণে অর্থ লেনদেন সমস্যায় বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম আবার বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোতে বন্ধ রয়েছে চেক ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা। ফলে লকডাউনে ব্যাংক চালু রাখার সুফল পায়নি ভোগ্যপণ্যসংশ্লিষ্ট পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ লেনদেন পণ্য ক্রয়ের পর চেকের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ১৩ এপ্রিল থেকে কয়েক দিন ধরে ব্যাংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে চেক ক্লিয়ারিং হয়নি। কারণে অনেক ব্যবসায়ী প্রতিশ্রুত অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পণ্যের সরবরাহও নিশ্চিত করতে পারেননি। প্রতিশ্রুত চেক পাস না হওয়ায় নতুন করে পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় ভোগ্যপণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণে ভোগ্যপণ্য বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রোজার আগেই ছোলা, খেজুরসহ বেশকিছু পণ্যের দাম কমতির দিকে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলের দাম।

দেশে ভোগ্যপণের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া কানাডা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের দাম কয়েক দিনে নতুন করে দাম বেড়ে গেছে। এর মধ্যে মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৬২ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা, মাঝারি মসুর ডাল ৮৫ থেকে বেড়ে ৯০ টাকা, দেশীয় মসুর ডাল ১০০ থেকে বেড়ে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহে মসুর ডালের দাম নিম্নমুখী ছিল। অন্যদিকে মুগ ডালের দামও কেজিপ্রতি - টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৮০-১১২ টাকা (মানভেদে) দরে। তবে রোজা শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে পাইকারি পর্যায়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় ছোলার দাম কেজিপ্রতি - টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৫-৭০ টাকা দরে (সর্বোচ্চ) চিনির দাম কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

মেসার্স হাজি ইসহাক সওদাগর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. সেকান্দর বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংক লেনদেনের সময়সীমা সীমিত হওয়ায় এমনিতে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে চেক ক্লিয়ারিং না হওয়া ভোগ্যপণ্যের লেনদেনে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। লকডাউনের কারণের পূর্বের ক্রয়-বিক্রয়ের দায় পরিশোধের চাপ থাকলেও ব্যাংকগুলো ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ করছে না। এতে বেশকিছু পণ্যের সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়, যার কারণে এসব পণ্যের দাম কমে যাওয়ার পরিবর্তে উল্টো বেড়ে গেছে।

লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের কার্যক্রম সীমিত ঘোষণা করেছে সরকার। তবে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত খোলা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কারণে রোজায় চাহিদা থাকায় সকাল থেকেই খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছদগঞ্জ এলাকায় পুরোদমে বিকিকিনি হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে যেকোনো ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল থাকায় ব্যাংক লেনদেনে জটিলতা তৈরি হলে পণ্যের দামের ওপর এর প্রভাব পড়ে। এমনিতে লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকার প্রাথমিক ঘোষণার পর পণ্যবাজারে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সরকারের সীমিত পরিসরে ব্যাংক লেনদেন চালু রাখার ঘোষণা এলে ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্ন লেনদেনে আশ্বস্ত হয়। কিন্তু ক্লিয়ারিং চেক পাস করতে জটিলতার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতাদের।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার ঘোষিত নিত্যপণ্যের দামের চেয়েও কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কয়েক বছরের তুলনায় বেশি দামে কিছু কিছু পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ব্যাংক লেনদেন নিয়ে জটিলতার কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এটি সাময়িক। ব্যাংকের লেনদেন জটিলতা কেটে গেলে দাম আবারো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোতে চেক ক্লিয়ারিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চেক লেনদেন নিষ্পত্তির কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউজ (ব্যাচ) কাজ করছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী সাধারণ গ্রাহকরা। মূলত ১৩ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে গ্রাহদের চেক ক্লিয়ারিং বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ গ্রাহকরা লকডাউন শুরুর আগে পরে অর্থ লেনদেন নিয়ে ভোগান্তির কবলে পড়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন