হার নিশ্চিত জেনেও সহজে হাল ছাড়ছেন না ট্রাম্প

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের ২৬৪টি বৃহস্পতিবারেই পেয়ে যান তিনি। প্রয়োজন আর মাত্র ছয়টি ইলেক্টোরাল ভোট। নেভাদায় এগিয়ে থেকে প্রেসিডেন্সির সুবাস আগেই পাচ্ছিলেন তিনি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নর্থ ক্যারোলাইনা ছাড়া ফলাফলের অপেক্ষায় থাকা সব অঙ্গরাজ্যেই বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। ওদিকে নির্বাচনে হেরে গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরাজয় মেনে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, সে সম্ভাবনা খুব কম। বরং যেখানে সম্ভব সেখানেই বাইডেনের ওভাল অফিসে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিনি যে বাধা সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন, সে বিষয় অনেকটা নিশ্চিত।

এদিকে জর্জিয়ায় দুই পক্ষের ব্যবধান খুবই সামান্য হওয়ায় গতকাল সেখানে আবারো ভোট গণনার উদ্যোগ নিয়েছে অঙ্গরাজ্যটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, পেনসিলভানিয়ায়ও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যবধান খুব একটা বেশি নয়। তবে নেভাদায় এরই মধ্যে মোটামুটি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন। ছয় ইলেক্টোরাল ভোটের অঙ্গরাজ্যটিতে জয় পেয়ে গেলেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। সেক্ষেত্রে অলৌকিক কোনো ঘটনার বলে বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোয় বিজয়ী হলেও ওভাল অফিসে বসার ছাড়পত্র পাচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিশ্চিত বিজয়ের মুহূর্তে স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতকাল রাতে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী আজ সকালে) মার্কিন জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা জো বাইডেনের।

সংগত কারণেই বাইডেন শিবির জয় উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নেভাদা, জর্জিয়া বা পেনসিলভানিয়া তিন অঙ্গরাজ্যের যেকোনো একটিতে বিজয় মানেই হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন বাইডেন। অন্যদিকে নির্বাচনে পরাজয়  নিশ্চিত হলেও হাল ছাড়ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আচরণই বলছে, বাইডেনের হোয়াইট হাউজ প্রবেশ মোটেও নির্বিঘ্ন হতে যাচ্ছে না। 

এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শিবির আদালতে কয়েকটি মামলা ঠুকে দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো বাইডেনের মসনদে যেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে নাএমনটা ধরে নিলেও বাইডেনের পথে প্রক্রিয়াগত আরো বাধা সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রিপাবলিকান সঙ্গীসাথীরা।

প্রথা অনুযায়ী আগামী জুন মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা ইলেক্টোরাল ভোট গণনার জন্য একটি যৌথ অধিবেশনে বসবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অধিবেশনে বড় ঝামেলা হওয়ার শঙ্কা করছে কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস।

সংস্থাটি জানিয়েছে, যখন ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে, তখন নির্দিষ্ট কোনো অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেস সদস্য সেই ফলের বিরুদ্ধে আপত্তি জানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিনেট প্রতিনিধি পরিষদউভয় কক্ষেই একজন করে আইনপ্রণেতাকে লিখিতভাবে আপত্তি জানাতে হবে। শর্ত পূরণ হলে যৌথ অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হবে এবং দুই কক্ষের নিজ নিজ চেম্বারে দুই ঘণ্টাব্যাপী পৃথক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আপত্তিটি আমলে নেয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করবে উভয় কক্ষই। এরপর তারা আবার যৌথ অধিবেশনে বসবেন নিজ নিজ কক্ষের ভোটের ফলাফল জানাবেন। কোনো ইলেক্টোরাল ভোট বাতিলের ক্ষেত্রে আপত্তিটিতে অবশ্যই উভয় কক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে।

বাইডেনের ওভাল অফিস গ্রহণে বাধাদানের সুযোগ ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ছাড়বেন না, তার সম্ভাবনা কম। তবে প্রক্রিয়া কেবল সময়ক্ষেপণ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিনেট প্রতিনিধি পরিষদ কখনই কোনো আপত্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারবে না।

এদিকে ট্রাম্প তার শিবিরের করা মামলাগুলোও বাইডেনের পথে খুব একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ব্যাটেলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোর ভোটগণনা ঠেকাতে রিপাবলিকানরা কয়েকটি মামলা করলেও ট্রাম্পের লিগ্যাল টিম আদতে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতিই দেখাতে পারেনি। সুতরাং এসব মামলা শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

যেমনটি টেকেনি মিশিগান রাজ্যে। সেখানে ভোট গণনা বন্ধের জন্য মামলা করেছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। কিন্তু আপিল আদালত সে মামলা খারিজ করে দিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্প শিবির অনেক দেরি করে, একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গণনা বন্ধের আবেদন করেছে বলে যুক্তি দিয়েছেন রাজ্যের ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্ট আপিল আদালতের বিচারক সিন্থিয়া স্টিফেনস।

এছাড়া, মামলায় ভুল কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে (মিশিগান রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট জসলিন বেনসন) জানিয়ে বিচারক বলেন, স্থানীয় ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় ওই কর্মকর্তার কোনো হাত নেই, যদিও তিনি রাজ্যের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা।

জসলিন বেনসনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প শিবিরের অভিযোগ, তিনি দুই দলের পর্যবেক্ষক চ্যালেঞ্জকারীদের ভোটিং প্রক্রিয়া দেখতে না দিয়েই মেইল ব্যালট গণনা করতে দিয়েছেন। এভাবে তিনি মিশিগানের ভোটারদের সুষ্ঠু বৈধ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছেন।

তবে বেনসন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শিবির বলছে, আরো রিপাবলিকান ভোট পর্যবেক্ষককে গণনা প্রক্রিয়া দেখতে না দেয়া পর্যন্ত ভোট গণনা বন্ধ থাকা উচিত।

এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগও জো বাইডেনকেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরে নিয়েছে। কারণে গতকাল থেকেই তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো জোরদার করে তোলা হয়েছে। যদিও মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি।

পলিটিকো, ওয়াশিংটন পোস্ট, ফক্স নিউজ, বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন