আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে পাবনার মানসিক হাসপাতাল

শফিউল আলম দুলাল, পাবনা

পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক বিশ্বমানে উন্নীত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে দেশে আরো দুটি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেজন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দ্রুত প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৫৭ সালে পাবনার নিরিবিলি পরিবেশে ১১১ একর জমির ওপর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনার মানসিক হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানসিক রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরে পর্যায়ক্রমে ৩৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এতেও রোগী ভর্তির চাপ থাকলে ১৫০ শয্যা পেয়িং বেড সংযুক্ত করে ৫০০ বেডে উন্নীত করা হয়। কিন্তু দেশে সিংহভাগ গরিব রোগী থাকায় নন-পেয়িং বেড পরিপূর্ণ থাকলেও পেয়িং বেড সর্বদাই কিছু খালি থাকে। ফলে নন-পেয়িং বেড আরো বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময় সেবাগ্রহীতা সাধারণ জনগণের দাবি থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।

হাসপাতালটি স্থাপনের পর থেকে তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। এমনকি বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য কোনো অবকাঠামো না থাকায় ১৯৫৭ সালে স্থাপিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের জন্য অবৈতনিক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেখানেই বর্তমানে বহির্বিভাগের কাজ চালানো হচ্ছে। ইমারত পুরনো হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ছাদ দিয়ে। দূরদূরান্ত থেকে আগত রোগীদের তাদের সঙ্গে আগত আত্মীয়স্বজনদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। প্রকৃতির ডাকে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

আন্তঃবিভাগের অবকাঠামোগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় সেগুলোর ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। ফলে বৃষ্টি হলে বিপাকে পড়তে হয় রোগীদের। অবস্থায় গত অর্থবছরে কয়েকটি ওয়ার্ড কিছুটা সংস্কার হলেও বাকি ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিষয়গুলো বিভিন্ন সময়ে জাতীয় স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিকবার প্রকাশ হয়েছে। স্থানীয়ভাবে হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালকরা বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছেন।

দেশে মানসিক রোগী বৃদ্ধি তাদের সুষ্ঠু মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য পাবনার মানসিক হাসপাতালকে অত্যাধুনিক বিশ্বমানে উন্নীত এবং মানসিক রোগের আধিক্যের কারণে আরো দুটি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরিত করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি টিম গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশী-বিদেশী মানসিক রোগের বিষয়ে অভিজ্ঞ, দেশী-বিদেশী মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা থাকায় জমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলা নেই বলে জানানো হয়েছে। সভায় পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাবনার আধুনিক মানের হাসপাতালটিতে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবাসংশ্লিষ্ট সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, বৃত্তিমূলক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অটিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামুজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মি, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্লান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমিটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, এসসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়েসহ বিশ্বমানের অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক এটিএম মোর্শেদ জানান, ১৯ অক্টোবর বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের এবং খুলনা বিভাগের যেকোনো জেলায় চট্টগ্রাম বিভাগের যেকোনো জেলায় আরো দুটি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অচিরেই পাবনা মানসিক হাসপাতালটির কাজের জন্য উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শক দল হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। এর পরই পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। অতি দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন