সুন্দরবনের করমজলে কুমিরের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস

৪৪ ডিমে ফুটেছে ৪ ছানা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বাগেরহাট

সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণি প্রজননকেন্দ্র করমজলের কুমির পিলপিলের ৪৪টি ডিমে মাত্র ৪টি ছানা ফুটেছে। গতকাল শনিবার সকালে নতুন ইনকিউবেটরে রাখা ১১টি ডিম থেকে মাত্র চারটি বাচ্চা জন্ম নেয়। ৪৪টি ডিম থেকে মাত্র ৪টি কুমির ছানা ফোটায় হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিদের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত বনকর্মীরা। তবে প্রাণি সম্বদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন বয়স বৃদ্ধি হওয়ার কারণে করমজলের মা কুমির দুটির ফার্টিলিটি (বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা) অনেক কমে গেছে। 

এর আগে এবছরের ১২ জুন দুপুরে প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে নিজের বাসায় ৪৪টি ডিম দেয় পিলপিল। ডিমগুলোর মধ্যে ২১টি ডিম পিলপিলের নিজে বাসায়, ১২টি পুরোতন ইনকিউবেটরে এবং ১১টি নতুন ইনকিউবেটরে রেখে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেন বনকর্মীরা। এর মধ্যে নতুন ইনকিউবেটরে রাখা ১১টি ডিমের মধ্যে ৪টি ডিমে বাচ্চা ফুটেছে। 

এছাড়াও এবছরের ২৯ মে অন্য কুমির জুলিয়েট ৫২টি ডিম দিয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ১৪টি ডিম জুলিয়েটের জুলেয়েটের বাসায়, ২৬টি পুরোতন ইনকিউবেটরে এবং ১২টি নতুন ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু জুলেয়েটের ৫২টি ডিমে কোন বাচ্চা ফোটেনি বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির । 

আজাদ কবির বলেন করমজল দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এখান প্রজননের জন্য দুটি মা কুমির রয়েছে। আমরা খুব যত্নের সাথে এই কুমিরের প্রজননের চেষ্টা করি। কুমির ডিম পাড়ার পর থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু জুলেয়েট এবং পিলপিল দুটি কুমিরেরই অনেক বয়স হয়েছে। যার ফলে তাদের ডিমে ফার্টিলিটি হার খুবই কম। তিনি আরও বলেন, এখানে বর্তমানে পুরোনো যে ইনকিউবেটর রয়েছে সেগুলো অনেক সেকেলে। নতুন যে ইনকিউবেটরটি তৈরি করা হয়েছে তার ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২৪টি। এ ধরনের আরও দুএকটি ইনকিউবেটর তৈরি করা গেলে সফলতা আসলেও আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, কুমির খুবই সেন্সিটিভ প্রাণি। এর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে অনেককিছু মানতে হয়। আর মা কুমির পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার পর থেকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, কুমির গুলোর বয়স হওয়ার কারণে ফারটিলিটি কমে গেছে।আমরা চেষ্টা করছি মা কুমির দুটোকে পরিবর্তণ করে নতুন করে মা কুমির আনার। করমজলই বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। ২০০০ সালে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের শুরু হলে এখানে কুমির প্রথ, ডিম দেয় ২০০৫ সালে। এখন পর্যন্ত করমজলে বিভিন্ন সময় ২৯২টি কুমিরের ছানা জন্ম নিয়েছে। যার মধ্যে ১৯৫টি ছানা এখনও প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে। ৯৭টি কুমিরের ছানা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন