চিরসবুজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি দুজনই বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন।
কিন্তু তাদের আধিপত্যে ভাগ বসাতে চাইছেন কিছু উদীয়মান সুপারস্টার।
এরই মধ্যে তারা বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের শক্তিশালী আবির্ভাবের জানানও দিয়েছেন।
ফ্রান্স ও প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) জার্সিতে উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে এরই মধ্যে নিজেকে আগামীর মহাতারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
আর
অতি সম্প্রতি এলিট ক্লাবে নাম লিখিয়েছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের নরওয়েজিয়ান টিনএজ আর্লিং ব্রাউট হালান্ড।
এই
শীতেই অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল সলজবুর্গ থেকে জার্মান জায়ান্ট বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে নাম লেখানো হালান্ড বুন্দেসলিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ উভয় প্রতিযোগিতায় ছুটছেন উল্কার গতিতে।
বলা হচ্ছে, মেসি ও রোনালদোর জায়গায় পরের দশকে ইউরোপের ফুটবলে রাজত্ব করবেন এ দুজন।
ব্যালন ডি’অর কিংবা ফিফা পুরস্কারে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করছেন মেসি ও রোনালদো।
১২
বছরের মধ্যে ১১ বারই ব্যালন ডি’অর জিতেছেন এ দুজন।
সামনে এ দুজনের জায়গা নিতে যিনি সবচেয়ে ফেভারিট তিনি এমবাপ্পে।
এ
ফরাসি সেনসেশন ভবিষ্যতে অসংখ্য ব্যালন ডি’অর মুকুট জিততে পারেন বলে মনে করছেন ফুটবল পণ্ডিতরা।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এরই মধ্যে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ পদক জয়ের গৌরব দেখিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এমবাপ্পে।
ক্লাব পর্যায়ে পিএসজির হয়ে একাধিক লিগ শিরোপা জিতলেও উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এখনো অধরা।
প্যারিস জায়ান্টদের হয়ে এ মুকুট জিততে মরিয়া তিনি।
যদিও গতিময় খেলোয়াড়টিকে ফ্রান্স থেকে বের করে নিয়ে আসতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপের একাধিক ক্লাব।
এর
মধ্যে অন্যতম রিয়াল মাদ্রিদ, ক্লাবটি সব সময়ই বড় তারকাদের আকৃষ্ট করে।
ভবিষ্যতে হয়তো এমবাপ্পের জাদুতে মোহিত হবে স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুর সমর্থকরা।
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিশনে শেষ ষোলোয় ডর্টমুন্ডের সামনে পড়েছে পিএসজি।
তাতে এমবাপ্পে ও হালান্ডও মুখোমুখি অবস্থানে।
বরুশিয়ার মাঠ সিগনাল ইদুনা পার্কে প্রথম লেগে ১-২ গোলে হেরে বসেছে পিএসজি।
তারুণ্যনির্ভর ডর্টমুন্ডের এ জয়ে দুটি গোলই করেন ১৯ বছর বয়সী হালান্ড, যিনি এর আগে বুন্দেসলিগায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম পাঁচ ম্যাচে ৮ গোলের রেকর্ড গড়েন।
সব
মিলিয়ে, বুন্দেসলিগা জায়ান্টদের হয়ে সাত ম্যাচে করলেন ১১ গোল।
এর
আগে সলজবুর্গে ১২ মাসের অধ্যায়ে ২৭ ম্যাচে করেছেন ২৯ গোল।
ডর্টমুন্ডের আক্রমণভাগে তিনি অন্যতম সহযোগী হিসেবে পেয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল ইংলিশ ফরোয়ার্ড জাডোন সানচোকে, যিনি গোল তৈরিতে ও করতে সমানভাবে পারঙ্গম।
২০১৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সী ম্যানসিটি থেকে ডর্টমুন্ডে এসেই সরাসরি একাদশে ঢুকে পড়েন সানচো।
আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছেন দারুণভাবে।
সেই থেকে ৮০ ম্যাচ খেলে ৪০টি গোল তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি নিজে করেছেন ৩৬টি।
ফুটবলে আগামীর মহাতারকা হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত হয়, সানচো তাদের মধ্যে অন্যতম।
গুঞ্জন রয়েছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছেন সানচো।
লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড উভয়ই নিজেদের তাঁবুতে পেতে চায় এ তারকাকে।
ডর্টমুন্ড থেকে তাকে ছিনিয়ে আনতে ১০০ থেকে ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড ফি লাগতে পারে।
লিভারপুলে নাম লেখালে তিনি সতীর্থ হিসেবে পাবেন ইংলিশ ডিফেন্ডার ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডকে, যিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুলব্যাক হিসেবে এরই মধ্যে খ্যাতি লাভ করেছেন।
অল
রেডদের হয়ে এরই মধ্যে ১২১ ম্যাচ খেলা আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পাশাপাশি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা থেকে মাত্র ১২ পয়েন্ট দূরে।
সানচোর মতোই গোল তৈরিতে তার খ্যাতি রয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৩২টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন, নিজেও করেছেন ছয় গোল।
শিগগিরই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের পর্তুগিজ সেনসেশন হোয়াও ফেলিক্সের মুখোমুখি হবেন আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড।
এই
ফেলিক্সও বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সম্ভাবনাময় তারকা, যিনি বেনফিকায় ৪২ ম্যাচে ২০ গোল করে আলোচনায় আসেন।
গত
গ্রীষ্মের দলবদলে তাকে ১১৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিশাল ফিতে কিনে নেয় মাদ্রিদ জায়ান্টরা।
যদিও পর্তুগালের ফর্ম স্পেনে বয়ে আনতে পারেননি এখনো, ২৪ ম্যাচে করেছেন মাত্র চার গোল।
কিন্তু তিনি জ্বলবেন তারা হয়ে, এমন আশা করাই যায়।
রিয়াল মাদ্রিদে জিনেদিন জিদানের মূল একাদশে জায়গা করে নিতে সমর্থ হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
যদিও ফেলিক্সের মতো তিনিও গোল অতটা পাননি।
এখন পর্যন্ত ৫৫ ম্যাচে করেছেন ছয় গোল।
একই কথা অবশ্য বলা যাচ্ছে না বার্সার তরুণ তুর্কি আনসি ফাতুর ক্ষেত্রে।
মেসির আড়ালে খেলা এ উদীয়মান সুপারস্টারের সূচনা রোমাঞ্চকরই।
১৬
বছর বয়সে নিজের প্রথম তিন ম্যাচে দুই গোল করে হইচই ফেলে দেন।
এখন পর্যন্ত কাতালানদের জয়ে ২১ ম্যাচ খেলে করেছেন পাঁচ গোল।
যখন মেসির চূড়ান্ত বিদায় ঘটবে, তখন বার্সেলোনা ‘রেডিমেড’ হিসেবে পেয়ে যাবে ‘স্প্যানিশ’ ফাতিকে।
ইউরোপের কোচরা তার মতো খেলোয়াড়কে নিয়ে ঈর্ষা করতেই পারেন।
ডেইলি মেইল