নর্দার্ন জুটের উৎপাদন ১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাট খাতের কোম্পানি নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রম আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের এ তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব ব্যাংককে নর্দার্ন জুটের সব হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এ কারণে কোম্পানিটি কর্মীদের মজুরি ও সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় কোম্পানিটির পর্ষদ ১ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে রফতানির বিপরীতে পাওয়া অর্থ তুলতে না পারার কারণে চলতি মাসের ২২ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নর্দার্ন জুটের পর্ষদ। সে সময় কোম্পানিটি জানায়, ব্যাংকে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও হিসাব জব্দ করার কারণে তারা কাঁচা পাট কিনতে পারছে না এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ ও শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশের অর্থ বিতরণ করতে পারছে না। তাই কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে ২৪ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটি হাইকোর্টের আদেশের ওপর রিট পিটিশন ফাইল জমা দেয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উচ্চ আদালত কোম্পানিটির কাছে আরো কিছু নথিপত্র চান। নর্দার্ন জুট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিয়েছে। কোম্পানিটি এখন আশা করছে, আগামী ১ মার্চ তাদের রিট পিটিশনের বিষয়ে আদালতে শুনানি হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ ১ মার্চ পর্যন্ত উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, অবসায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের সবগুলো ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই নর্দার্ন জুটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। নর্দার্ন জুট ও পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। তাছাড়া নর্দার্ন জুটের পরিচালক অমিতাভ অধিকারী সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত-সমালোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের আত্মীয়। মূলত উজ্জ্বল কুমার নন্দীর মাধ্যমে নর্দার্ন জুট ও পিপলস লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রশান্ত কুমার হালদারের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নর্দার্ন জুটের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৩ টাকা ২৯ পয়সা, যেখানে আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১৭ টাকা ১৫ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা ৩৩ পয়সা, ২০১৮ হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৫৭ টাকা ৪ পয়সা।

এর আগে লোকসানের কারণে ২০১৮ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি পাট খাতের স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটি। এ কারণে কোম্পানিটিকে থেকেজেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ হিসাব বছরে ২০ শতাংশ হারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল নর্দার্ন জুট। তার আগে ২০১৬ হিসাব বছরে ৫ শতাংশ ও ২০১৫ হিসাব বছরে ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল শেয়ারটির সর্বশেষ দর ছিল ৩৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। আর সমাপনী দর ছিল ৩৮২ টাকা ৭০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৩৫১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে।

১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নর্দার্ন জুটের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২১ লাখ ৪২ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৭৮ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন