মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯

সহিংস আচরণের শিকার ৮৮.৮% শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক

৫-১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুশ্রমে জড়িত। নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী। আবার ১৫ বছরের আগেই বিয়ে হচ্ছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কিশোরীর। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ পাচ্ছে না ৫৩ শতাংশ শিশু। সিজারিয়ানে (অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসব) জন্মগ্রহণ করছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু। আর পিতা-মাতার সহিংস আচরণের শিকার ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু। এছাড়া ইন্টারনেটের বাইরে এখনো ৬২ শতাংশ ও কম্পিউটার নেই ৯৪ শতাংশ পরিবারে।মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে জরিপের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জরিপটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এতে কারিগরি সহায়তা করে ইউনিসেফ। দেশের ৬৪টি জেলার ৬১ হাজার ২৪১টি পরিবারের সদস্যদের করা প্রশ্নের উত্তর থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিবিএসের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম ও ইউনিসেফের অফিসার ইনচার্জ অ্যালেন বালাডিন ডমসন।

প্রতিবেদনের প্রধান তথ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো বিদ্যুতের আওতায় এসেছে ৯২ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার, শিক্ষার হার (১৫-২৪) ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ, প্রায় ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারে এখন টেলিফোন কিংবা মোবাইল আছে। এছাড়া কম্পিউটার রয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারে, যা ২০১২-১৩ সালে ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ইন্টারনেট আছে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারে। বাংলাদেশে শিশু অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। ৩৬-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে শৈশবকালীন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তুলনামূলক কম। এ সংখ্যা গড়ে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১২-১৩ সালে যা ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময়ে স্কুলে উপস্থিতির হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৯ ভাগ। যদিও এখনো ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্ম নিবন্ধন অনুপাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বেড়েছে। শিশুদের সঙ্গে সহিংস আচরণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। ১-১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশই তাদের লালন-পালনকারী বা পিতা-মাতার কাছ থেকে সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে।

সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, এবারের সার্ভে থেকে পাওয়া নতুন উপাত্তগুলো মধ্যম আয়ের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শিশুদের উন্নতির জন্য সহায়ক হবে। শিশুদের উন্নত বিকাশে সার্ভে নানা অবদান রাখবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ সালের তুলনায় খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৪২ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। যদিও শীর্ণকায় শিশুর সংখ্যা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে স্বল্প ওজনের শিশু ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১২-১৩ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর বাইরে ১৩ দশমিক ১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। ড্রপ আউট ছেলেদের মধ্যে বেশি। প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু নিম্ন মাধ্যমিকের বাইরে রয়েছে।

৫-১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িত। স্কুলে যাওয়া শিশুদের (৪ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় না যাওয়া শিশুদের মধ্যে এ হার বেশি। শিক্ষা শেষ না করে ঝরে পড়ার হারে প্রতি পাঁচজনের একজনই ছেলে। একই সঙ্গে গ্রামে শিশুদের বিয়ে এখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতি হলেও শিশুদের পুষ্টির হার ভালো নয়। ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু একবার হলেও মায়ের দুধ পান করেছে। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন শিশুর সংখ্যা অনেক কম। এ হার মাত্র ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৫-১৭ বছর বয়সী ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী বিবাহিত। এছাড়া ২০-২৪ বছর বয়সী ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হচ্ছে।

গণমাধ্যমের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের মধ্যে খবরের কাগজ পড়া, রেডিও শোনা ও টেলিভিশন দেখার হার গত ছয় বছরে ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন