সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়ন, পর্যালোচনা ও করণীয়

ড. শামসুল আলম

সংবিধানে ১৫(ঘ) ধারার বাধ্যবাধকতাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শুরু হয় খাদ্য ও নগদ অর্থ সাহায্য রিলিফ হিসেবে প্রদানের মাধ্যমে। সত্তর দশকে মূলত রিলিফ কাঠামোর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আটকে ছিল। সত্তর দশকের শেষে সীমিত পরিসরে ও আশির দশকে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, অর্থ প্রদানের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করে। এরপর নব্বই দশকের পুরোটাই ছিল ব্যাপক আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান ব্যবস্থা থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচির সূচনা, যা এখনো বিদ্যমান। নব্বই দশকের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ কর্মসূচিগুলো দরিদ্র সাধারণের জন্য নেয়া হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যসহায়তা (ভিজিএফ), কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতা বাড়ানো ও ক্ষুদ্র ঋণ। 

নব্বই দশকের প্রথম দিকে খাদ্যে পল্লী রেশন ব্যবস্থা ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়। এ দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম সময়ে দুস্থ জনগোষ্ঠী যেন সরকারের সহায়তা পায়, সে জন্য কার্ড যা ভিজিএফ কার্ড নামে পরিচিত, এক উদ্ভাবনী পন্থার প্রচলন করা হয়। ১৯৯৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার সময় দেশব্যাপী খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো দেশে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে বয়স্ক, শারীরিকভাবে অক্ষম ও দুস্থ মহিলাদের জন্য মাসিক ভাতার প্রচলন করা হয়।

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে অতীত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে যুক্ত করে দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করা হয়। নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে কতগুলো কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তায় যুক্ত হয়। এগুলো আগে নেয়া কর্মসূচিগুলোর ধারাবাহিকতার পরিবর্তিত কর্মসূচি যেমন কর্মসংস্থানমূলক দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (আইজিভিজিডি), খাদ্যনিরাপত্তা ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন (এফএসভিজিডি), অতিদরিদ্র চিহ্নিতকরণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি (টিইউপি), সরকারের ভৌত সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সুযোগ (রিইওপিএ), আরইআরএমপিসহ আরো অনেক কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং এনজিও দ্বারা বাস্তবায়ন করা শুরু হয়। এ সময়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত কাঠামোর মধ্যে এনে সমাজে দারিদ্র্য ও অসমতা দূরীকরণে সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়নের প্রেক্ষাপট

এ সরকার দেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে এবং জীবনমানের উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এ অঙ্গীকার বিধৃত হয়েছে জাতীয় সংবিধান, রূপকল্প ২০২১, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলে। এসব দলিলে বর্ণিত প্রতিশ্রুতিগুলোর অভীষ্ট লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য হ্রাসে এরই মধ্যে অর্জিত অগ্রগতিকে ভিত্তি করে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও তার টেকসই সমাধান। পাশাপাশি, দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের ঝুঁকি কমানোর মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রযাত্রাকে যাতে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা যায় এ ভাবনাকে সামনে রেখেই সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে, যাতে গণদারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে বের হয়ে আসতে পারে। 

অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ১৪০টির বেশি কর্মসূচি ছিল, যা বিভিন্ন খাত, ভৌগোলিক অঞ্চল এবং ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপে দেখা গেছে যে দরিদ্র ও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির চাহিদা, আওতা ও পরিধি সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। কিন্তু তার পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো সামাজিক নিরাপত্তা সেবার কার্যক্রমের আওতায় আসতে পারেনি।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর খণ্ড খণ্ডভাবে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়ন করার কারণে এগুলোর বাজেট বরাদ্দ আকারে বেশ ছোট ছিল। স্বাভাবিকভাবে, সুবিধাভোগী প্রতি গড় সুবিধাপ্রাপ্তির পরিমাণও ছিল কম। সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়লেও সুবিধাভোগী নির্বাচনে ত্রুটি থাকার কারণে এ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা প্রয়োজন অনুভূত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে ২৪.৫ শতাংশ পরিবার বলেছে যে ৩০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তত যেকোনো একটি থেকে তারা উপকৃত হয়েছে। এসব পরিবারের মধ্যে ৮২ শতাংশ দরিদ্র ও দরিদ্র ঝুঁকিগ্রস্ত শ্রেণীভুক্ত এবং প্রায় ১৮ শতাংশ ছিল সচ্ছল শ্রেণীভুক্ত। 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ০-৪ বছর বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্তি খুবই কম। অধিকন্তু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ নামমাত্র সামাজিক ভাতা সুবিধা পেত। বিদ্যালয়গামী শিশুদের অন্তর্ভুক্তি সর্বোচ্চ হলেও তারা যে ভাতা পায় তা পরিমাণে খুবই কম। মাথাপিছু টাকার অংক কম এমন সমস্যা বাংলাদেশের সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দেখা যায়। 

এজন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রস্তাব করা হয় যে বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান বিপদাপন্নতার ব্যাপক বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি সুসংহত ও সমন্বিত ‘সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র’ তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১১ সালে ঢাকায় জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ও ঘোষণা থেকে বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল তৈরির প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়।

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২ সালে মন্ত্রিসভা বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’ প্রণয়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়, যা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বিষয়ক ‘কেন্দ্রীয় পরিবীক্ষণ কমিটি’র (বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি) তত্ত্বাবধনে প্রণীত হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের খসড়া প্রণয়নের ভিত্তি হিসেবে একটি রূপরেখা ও ১০টি গবেষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়। কৌশলপত্রের রূপ ও বিষয়বস্তু নির্ধারণে এবং খসড়া প্রণয়নে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কর্তৃক ১৫টি অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা, আলোচনা সভা ও সংলাপ আয়োজন করা হয়। 

বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা ২০১৫ সালের জুনে এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের অনুমোদন প্রদান করে এবং ওই বছরের নভেম্বর মাসে এই কৌশলপত্রটি জাতীয়ভাবে অবমুক্ত করা হয়। সবার মতামত গ্রহণ করে বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলটি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় এবং দেশজ প্রয়োজন বিবেচনায় প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উত্তরণ ঘটবে, এটিকেও গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে, ১০ বছর মেয়াদি (২০১৫-২০২৫) এই কৌশলপত্রটির বাস্তবায়নে মূল্যায়ণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য:  সব যোগ্য বাংলাদেশীর জন্য এমন একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা দরিদ্র ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করবে এবং বৃহত্তর মানব উন্নয়ন, কাজের সুযোগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রথম পাঁচ বছরের জন্য কৌশলপত্রটির লক্ষ্য হলো আরো দক্ষতার সঙ্গে ও কার্যকরভাবে সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করা, সেবা প্রদান ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণ এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন দ্বারা সমাজের চরম দারিদ্র্য ও সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকরভাবে জীবনচক্রের বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে তা হলো: বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থার জায়গায় একটি সমন্বিত উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা, যা ত্রুটিমুক্ত হবে। মূল সামাজিক নিরাপত্তা স্কিমগুলো যেন সমাজের অতিদরিদ্র, প্রান্তিক ও অতিদুস্থ জনগণের জন্য সহজলভ্য হয়; দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিগুলো বর্ধিত করা, যেমন ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ এ ধরনের কর্মসূচি; অতিদরিদ্র দুস্থ মহিলা, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং শিশুদের আয়মূলক কর্মসূচি নিশ্চিত করা; সামাজিক বীমা ব্যবস্থা চালু করা, যাতে জনগণ তাদের সামাজিক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করতে পারে; শহর এলাকায় দুস্থদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি করা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা। 

মানব জীবনচক্রের ঝুঁকি: জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত মূল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কেন গ্রহণ করা হলো এটি বর্ণিত চিত্র লক্ষ করলে বোঝা যাবে। 

কৌশলগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর প্রায় ৬৫ শতাংশ জীবনচক্র সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। 

জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত মূল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংস্কার: শিশুদের (০-৪ বছর) জন্য কর্মসূচি: দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত পরিবারের চার বছরের নিচের শিশুদের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে শিশুদের জন্য অনুদান প্রতি পরিবারে অনধিক দুটি শিশু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, যাতে জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা নীতির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে। অন্যদিকে, দরিদ্র ও ঝুঁকিগ্রস্ত পরিবারের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গামী বয়সী শিশুদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া শিশুরা একই সঙ্গে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য যোগ্য হবে। যেমন প্রতিবন্ধী সুবিধা, বিদ্যালয়ে খাদ্য সুবিধা, এতিমদের জন্য কর্মসূচি এবং আইনি সুরক্ষা, যাতে পরিত্যক্ত শিশুরা দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পায়।

কর্ম-উপযোগী (১৫-৫৯ বয়সী) নাগরিকদের জন্য কর্মসূচি: তরুণদের শিক্ষা সমাপ্ত ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করার জন্য শিক্ষা ও সক্ষমতাবিষয়ক কর্মসূচিগুলোকে শক্তিশালী করা, যেমন স্বনির্ভর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ন্যাশনাল সার্ভিস ইত্যাদি। অন্যদিকে, দরিদ্র বেকারদের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি শক্তিশালীকরণ ও বাস্তবায়ন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্যতম উপাদান ন্যাশনাল সোস্যাল ইন্স্যুরেন্স স্কিম—এর অংশ হিসেবে বেকার, অসুস্থতা, মাতৃত্ব ও দুর্ঘটনা বীমা চালুর জন্য আইন প্রণয়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

কর্ম-উপযোগী (১৫-৫৯ বয়সী) নারীদের জন্য কর্মসূচি: ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের (বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, দুস্থ, একক মাতা এবং বেকার একক নারীর) জন্য আর্থিক সহয়তা প্রদান এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ সহজতর করা। এছাড়া, কর্মে নিয়োজিত ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের বিশেষ সমস্যা বিবেচনায় রেখে কৌশলপত্রটি ‘ঝুঁকিগ্রস্ত নারীদের সুবিধা কর্মসূচি’ সংস্কার করে এর আওতায় একীভূত আয় হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘মেটারনেল হেলথ ভাউচার স্কিম’ কর্মসূচি সম্প্রসারিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। শ্রমবাজারে নারীদের প্রবেশ সহজতর করতে বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণয়ন ও নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। 

বয়স্কদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা: তিন স্তরবিশিষ্ট পেনশন ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম স্তরে সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের ব্যবস্থা আগের মতোই চলবে। দ্বিতীয় স্তরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বেসরকারি খাতের সঙ্গে যথাযথভাবে আলোচনা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি পেনশন কর্মসূচি চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী সময়ে এর একটি নকশা প্রণয়ন করবে। তৃতীয় স্তরে স্বেচ্ছাধীন পেনশন স্কিম: ব্যক্তি খাত দ্বারা পরিচালিত এমন একটি ব্যবস্থা (বিশেষত চাকরিভিত্তিক) যাতে নাগরিকগণ তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ইচ্ছা করলে বার্ধক্যে অতিরিক্ত সহায়তা পেতে পারেন। এ স্কিম পেশাভিত্তিক বিবেচনা করে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসূচি: ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী সব প্রতিবন্ধী শিশুদের ‘শিশু প্রতিবন্ধী সুবিধা’ প্রদান করা এবং ১৯-৫৯ বছর বয়সী তীব্র প্রতিবন্ধিত্বের শিকার সব প্রাপ্তবয়স্ককে প্রতিবন্ধী সুবিধা প্রদান। ষাটোর্ধ্ব প্রতিবন্ধীরা নাগরিক পেনশনের আওতাভুক্ত হবেন। এছাড়া ন্যাশনাল সোস্যাল ইন্স্যুরেন্স স্কিম পরিচালিত প্রতিবন্ধী পেনশন স্কিম। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত স্কিমগুলোর সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। প্রতিবন্ধী ভাতা সাধারণ ভাতার অন্তত আড়াই গুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

বিশেষ উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচি: কৌশলপত্রে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো হলো ক্ষুদ্র কর্মসূচিগুলোকে একীভূত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষুদ্র কর্মসূচি চলমান থাকবে, তবে সে বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়নপূর্বক মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পেশ করবে। দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যেসব কর্মসূচি আছে সেগুলোকে একটি স্কিমের অধীনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সুবিধা কর্মসূচি’ হিসেবে একীভূত ও পরিচালিত করার কথা বলা আছে। এছাড়া সামাজিকভাবে বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর (যেমন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, দলিত, হিজড়া, চা-বাগান শ্রমিক, এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি) জন্য বিশেষ কর্মসূচি চলবে এবং প্রচলন করতে হবে। 

সামাজিক নিরাপত্তা সেবা প্রদানে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অধিকতর ভালো মানের সেবা প্রদানের জন্য ক্রমান্বয়ে দুটি ধাপে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০১৫-২০২৫ সময়কালে প্রারম্ভিক একত্রীকরণ ও সমন্বয় পর্যায়ে, বর্তমানে যেসব মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, তাদের পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক ক্লাস্টারে বিন্যাস করা হবে। প্রতিটি ক্লাস্টারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে একটি সমন্বয়ক মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব কর্মসূচিগুলোর নকশা প্রণয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্তপ্রাপ্ত হবে। ক্লাস্টারের থিমের সঙ্গে বলিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে এমন একটি মন্ত্রণালয়ই ক্লাস্টার সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করবে। 

সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের বাস্তবায়ন অগ্রগতি

প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতি 

জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন, বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদকে যথাসময়ে অবহিতকরণের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত ‘কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এ কমিটির ১২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩৫টি মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পয়েন্ট ও বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং তারা সর্বক্ষণ সচিবদের সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন।

এছাড়া সদস্য, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগকে সভাপতি করে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে সম্পর্কিত সব গবেষণা, কৌশলপত্র, প্রস্তাব পর্যালোচনা ও অনুমোদন করে। 

সচিব, সমন্বয় ও সংস্কার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাপতিত্বে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়ন কর্মপন্থা ২০১৫-২০২১ প্রথম পর্যায় তৈরি করা হয়েছিল, যা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করে। এ কর্মপন্থায় ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের সংস্কারের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির আদলে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা সামাজিক নিরাপত্তা কমিটি তৈরি ও কমিটির পুনর্গঠন করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। 

জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোকে পাঁচটি বিষয়ভিত্তিক ক্লাস্টার গঠনের যে রূপরেখা অনুযায়ী একটি পরিপত্র জারি ও ক্লাস্টারগুলো নিয়মিত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠান করছে।

জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদানের জন্য ইউএনডিপির সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ যৌথভাবে ‘সোস্যাল সিকিউরিটি পলিসি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামে একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 

একইভাবে জাতিসংঘ শিশু তহবিল, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক ও কর্মসূচি সংস্কারে কারিগরি সহায়তা প্রদানে এগিয়ে এসেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সরাসরি সামাজিক নিরাপত্তায় শিশুর পুষ্টি উন্নয়নে বাজেট সহায়তা হিসেবে ১৩০ মিলিয়ন ইউরো ও বিশ্বব্যাংক একই খাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 

ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারি ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের (জিটুপি) অ্যাকাউন্টে পৌঁছার জন্য উপযোগিতা গবেষণা ও ভাতা প্রদানের নকশা প্রণয়ন এবং পাইলট সম্পন্ন হওয়ার পর, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সব সামাজিক ভাতা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণ করতে হবে। এতে সময় অপচয় কম হবে, দুর্নীতিমুক্ত ভাতা প্রদান সম্ভব হবে। 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংস্কারে অগ্রগতি 

শিশু ভাতা কর্মসূচির নকশা প্রণয়ন, পাইলট ও বাস্তবায়নে জাতিসংঘ শিশু তহবিল আগামীর শিশু নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছে। অন্যদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এবং বিশ্বব্যাংক যত্ন নামে একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে পাইলট করছে। যত্ন প্রকল্পটি বিবিএসের গৃহ উপাত্ত নিয়ে পিএমটি পদ্ধতিও পরীক্ষা করছে। 

প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃত্তিকে সর্বজনীন করা হয়েছে এবং এতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন শিশু উপকৃত হচ্ছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সংশোধিত বৃত্তি অনুমোদিত হয়েছে। 

এতিম শিশুদের আওতা ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৪টি দারিদ্র্য আওতাভুক্ত উপজেলায় বিদ্যালয়ে খাবার পাইলট চালু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ স্কুল মিল পলিসি অনুমোদন করেছে। ২০২৩ থেকে সারা দেশে সব সরকারি বিদ্যালয়ে শিশুদের দুপুরের খাবার দেয়া সরকারি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুণগত মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা (মহিলা ও পুরুষ) বাড়ানো হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বাড়াতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নতুন ২৭টি টিটিসি ও ৫টি আইএমটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে ৭৭টি টিটিসি ও ৬টি আইএমটি কাজ করছে। প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শক্তিশালী করতে চায়নার গুউংজু ইন্ডাস্ট্রি ও ট্রেড টেকনিক্যাল কলেজ ও সিঙ্গাপুরের নান্ইয়াং পলিটেকনিক্যাল কলেজের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে। 

মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। কর্মবয়সীদের কর্মসূচি শক্তিশালী করতে এর পরিধি বাড়ানো হয়েছে। বেকারত্ব, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা ও মাতৃত্বকালীন বীমা সম্পর্কিত সম্ভাব্যতা যাচাই গবেষণার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। বেকারত্ব ও দুর্ঘটনা নিয়ে আরো একটি গবেষণা জাতিসংঘ শ্রম সংস্থা করতে যাচ্ছে। সামাজিক বীমা সম্পর্কিত পাইলট নকশা নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু করা হবে।

দুস্থ মহিলাদের ভাতা কর্মসূচিতে ভিজিডির আওতায় ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার বাড়িয়ে ১০ লালে উন্নীত করা হয়েছে। 

বিধবা, স্বামী নিগৃহীত, দুস্থ মহিলাদের ভাতা ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘স্বপ্ন প্রকল্প’ পাইলট শেষে বর্তমানে ছয়টি জেলায় দুস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী হতে কাজের বিনিময়ে অর্থ ও প্রশিক্ষণ প্রদান ও প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 

দেশের সব পৌরসভায় কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ৩০০ জন দরিদ্র মাকে এ ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। 

বয়স্ক ভাতা ও পরিধি ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বয়স্কদের ডিজিটাল ডাটা বেজ ও ডিজিটাল ভাতা প্রদান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বর্তমানে বাস্তবায়ন করছে। বয়স্ক ভাতাভোগীদের সংখ্যা ৩১ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত ও ভাতা ১০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী নির্ণয়ের জন্য একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্প্রতি সব প্রতিবন্ধীর সামাজিক ভাতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদের এমআইএস তৈরি করা হয়েছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা তহবিলে আরো ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হূদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ২০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অধীনে তাদের বিশেষ ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের ভাতা ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। চা শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ১০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। 

খাদ্য সাহায্য কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার সঙ্গে খাদ্য মজুদনীতির সঙ্গেও সমন্বয় করতে হবে বলে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কর্মসূচির সমন্বয় করতে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের ডাটাবেজ হালনাগাদ করছে। সব মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহতদের ভাতা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৩০টি সামাজিক কর্মসূচি চালু আছে, যা আগের প্রায় ১৫০টি কর্মসূচি থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে দৃঢ় হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের ক্রমাগত বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে বর্তমান গণতান্ত্রিক জনবান্ধব সরকার দেশের আপামর নাগরিক বিশেষ করে দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠী, শিশু, মহিলা, শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য প্রতি বছর বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে।


ড. শামসুল আলম: সদস্য (সিনিয়র সচিব) সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ

বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন