সাদা তিল ছড়ানো নরম রুটির মধ্যে মাখনে ভাজা মাংসের ঘ্রাণটা নাকে লাগলেই অনেকের নেশা ধরে যায়। রুটির ভেতরে মাংসের সঙ্গে কচকচে তাজা ভেষজ আর নোনা চিজের স্বাদে হারিয়ে যাবেন কিছুক্ষণ। কথা হচ্ছে বার্গার নিয়ে। আমাদের দেশে বার্গারের ইতিহাস পুরনো না হলেও দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ফাস্ট ফুড। আন্তর্জাতিক ফুড চেইন প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশীয় কিছু ফাস্ট ফুড শপেও এখন বার্গার বিক্রি হচ্ছে।
বার্গারের মধ্যেও আছে নানা দাম ও স্বাদের পার্থক্য। সব ধরনের বার্গার দেখতে একই রকম হলেও ভিন্ন ভিন্ন রন্ধন পদ্ধতির কারণে স্বাদে রয়েছে বৈচিত্র্য। দেশে দ্রুতগতিতে বার্গার জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় কেএফসি, পিত্জা হাট ও বার্গার কিংয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বার্গার কুইন বাংলাদেশ, দ্য ফুড নেটওয়ার্ক, মি. বার্গার, হাংরি আইস, গ্যাম্বলার্স, বার্গার অ্যান্ড কোংসহ শত শত দেশীয় প্রতিষ্ঠান বার্গারে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বে বার্গারের জগতে প্রথমেই যে দেশটির নাম আসে, সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বার্গার কেনে। বিশ্বের নামি-দামি বার্গার প্রতিষ্ঠানগুলোও এ দেশ থেকেই গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, সাবওয়ে, পিত্জা হাট, স্টারবাক্স, বার্গার কিং, ডেইরি কুইন উল্লেখযোগ্য। তবে এসব বার্গারে গরু, মুরগিসহ বিভিন্ন পশুর মাংস থাকায় এটি স্বাস্থ্যের বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, একটি বার্গারে থাকে প্রায় ৫০০ ক্যালরি, ২৫ গ্রাম চর্বি, ৪০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১০ গ্রাম চিনি আর ১ হাজার মিলিগ্রাম সোডিয়াম। এ উপাদানগুলো একজন মানুষ খেলে হঠাৎ করেই অসুস্থ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এক কামড় বার্গার খাওয়ার ১৫ মিনিট পরই শরীরে শর্করার ধকল শুরু হয়। এতে ইনসুলিন নিঃসরণ হওয়ায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। স্যাচুরেটেড চর্বিতে ভরপুর খাবার হওয়ায় ধমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। এতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, যা পরবর্তী সময়ে হূদরোগের কারণ হতে পারে। এছাড়া বার্গারে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়ামও রক্ত সঞ্চালনকারী শিরা ও ধমনির ক্ষতি করে।
তবে এসব ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মাংসের বিকল্প কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। এটি প্রাণীর মাংস না হয়েও মাংসের স্বাদ এনে দেবে। কয়েক বছর ধরে ল্যাবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকে নকল বা অনুকরণীয় মাংস তৈরি করা হচ্ছে। কেউ গরু ও মুরগির মংস না খেয়েই মাংসের স্বাদ পেতে পারেন। গার্ডিন ও মর্নিংস্টারের মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা অনেক আগে থেকেই নিরামিষভোজীদের জন্য উদ্ভিদভিত্তিক মাংস বিক্রি করে আসছিল। নতুন এ উদ্ভিদভিত্তিক মাংস বাজারে বিপ্লব ঘটাবে বলেই আশা ছিল, হয়েছেও তাই। এছাড়া এটি এমন খাবারে বিক্রি শুরু হয়েছে, যা নিরামিষভোজীরা খাওয়ার চিন্তাও করে না। এজন্য বলা হয়, এটা সবার জন্যই নিরাপদ মাংস হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ কারণে বার্গার হয়ে উঠছে নিরাপদ ফাস্ট ফুড!
২০১৬ সালেই বেয়োন্ড বার্গার ও ইম্পসিবল বার্গার বাজারে আসে। চাল, মটরশুঁটি, টোফু ও সিটানজাতীয় মাংসের পরিবর্তে এ দুই বার্গারের নির্মাতারা উদ্ভিদ প্রোটিন ও নারকেল দিয়ে প্রাণীর মাংসের মতো পদার্থ তৈরি করেন। মাংসের ফ্লেভার থাকায় স্বাদেও ছিল সেটি মাংসের মতোই। ফলে কিছুদিনের মধ্যে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বার্গার কিং, হোয়াইট ক্যাসল, ডেল ট্যাকো, ডানকিনসহ পৃথিবী বিখ্যাত ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁগুলো নিজেদের মতো করে বেয়োন্ড ও ইম্পসিবল বার্গার চালু করে। এর পরই এর বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
বেটার দ্যান ডায়েটিং ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা বনি তুব ডিক্স বলেন, আমি কয়েক বছর থেকেই মাংস খাই না। সম্প্রতি এক রেস্তোরাঁয় একটা ইম্পসিবল বার্গার খেয়েছি এবং এটা সত্যিকার অর্থেই সুস্বাদু ছিল।