ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিকসহ ৪ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি: বণিক বার্তা

বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ পেয়েছেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিকসহ চারজন। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

বাংলা সাহিত্যের প্রসার ও লেখকদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে গত এক যুগ ধরে লেখক ও সাহিত্যিকদের সম্মাননা দিয়ে আসছে ব্র্যাক ব্যাংক ও দৈনিক সমকাল। ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহিত্যের চর্চার মধ্য দিয়ে বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করায় এবার  ভাষা সৈনিক, লেখক ও গবেষক আহমদ রফিককে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। কবিতা ও কথা সাহিত্য শ্রেণিতে ‘‌অনিদ্রার কারুকাজ’ গ্রন্থের জন্য পুরস্কৃত করা হয় কবি ময়ুখ চৌধুরীকে। প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ শ্রেণিতে পুরষ্কার পেয়েছেন প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ বেগম আকতার কামাল। তার রচিত ‘‌কবিতার নান্দনিকতা’ গ্রন্থের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়। আর ‘‌অরিগামির গোলকধাঁধায়’ গ্রন্থের জন্য তরুণ সাহিত্যিক শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন লেখক মাহরীন ফেরদৌস।

আয়োজকরা জানান, তিন শ্রেণিতে মোট ৫২৬টি বই পুরস্কারের জন্য জমা পড়েছিল। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কবি আবিদ আনোয়ার, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের সমন্বয়ে গঠিত জুরি বোর্ড ২০২২ সালে প্রকাশিত এ সেরা তিনটি বই নির্বাচন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যখন সারা পৃথিবী উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। এরপরে আর কত উন্নতি হবে, আমরা জানি না। পৃথিবী যত উন্নত হচ্ছে, তত মানুষের সঙ্গে মানুষের, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির, মানুষের সঙ্গে তার সংহতির বিচ্ছিন্নতা ঘটছে। সাহিত্য এ বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সাহিত্য সংযুক্ত করে ও সংহতি বৃদ্ধি করে।

তিনি বলেন, সাহিত্যে আনন্দ কেবলই তার নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে, তা নয়। সাহিত্য আরো একটা গভীর কাজ করে, তা হলো মানুষের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো। পৃথিবী জুড়ে আজকের এই উন্নতির মধ্যে যে হতাশা, সেখানে আমরা আত্মহত্যা দেখি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিমাণ মানুষ আত্মহত্যা করেছে, এরকম আমি আগে কখনো দেখিনি। চতুর্দিকে আমরা শুধু অরাজকতা দেখছি। সাহিত্যের মূল কাজ হলো সংযুক্ত করা। সেজন্য সাহিত্য এত গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যের কাছে আমাদের যেতে হবে। বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে সাহিত্যই আমাদের অদম্য শক্তি।

এই অধ্যাপক আরো বলেন, যতদিন মানুষ মানুষ থাকবে, যতদিন মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব, অনুভূতি, কল্পনা ও চিন্তার শক্তি থাকবে, ততদিন সাহিত্য থাকবে। সাহিত্য যখন থাকবে না, তখন মানুষও থাকবে না। সেদিনের ভয়ঙ্কর অবস্থাকে আমরা কল্পনা করতে পারি না।

দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খানের সভাপতিত্বে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ খান, ব্রাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেনসহ জুরি বোর্ডের সদস্যরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন