নিউট্রিশনসমৃদ্ধ টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবন

বছরজুড়েই মিলবে অধিক ফলন

আসাদুল্লাহ্ সরকার, দিনাজপুর

ছবি : নিজস্ব আলোকচিত্রী

উচ্চ ঘনমাত্রার নিউট্রিশনসমৃদ্ধ টমেটোর নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) গবেষকরা। চারা গাছে বিশেষ ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ জাতের টমেটো অধিক ফলনশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফিল্ড থেকে কৃষক পর্যায়ে এ জাতের টমেটো চাষে সফলতা মিলেছে। নতুন জাতের টমেটোর নাম এখনো নির্ধারণ করা না হলেও প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

হাবিপ্রবির গবেষকদের দাবি, এ টমেটো স্বাস্থ্যসম্মত, সহজে সংরক্ষণযোগ্য এবং বছরজুড়ে ফলন পাওয়া যাবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে।

গবেষক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক। এছাড়া রয়েছেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. রায়হানুল হক, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আকিবা সুলতানা, ফিরোজ হোসেন, পলাশ আহমেদসহ আরো ২০ শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে প্রভাষক মো. রায়হানুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ব্যাকটেরিয়া সলিউশন বা কালচার প্রয়োগ করে চাষ করার কারণে এ জাতের টমেটোর ফলন দুই-তিন গুণ বেশি হবে। টমেটো গাছের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। গাছের কাণ্ড এবং পাতায় ফেনোলিক কম্পাউন্ড বা যৌগের ঘনমাত্রা বেড়ে যায়। গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং শক্তিমত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত টমেটোর জলীয় অংশের পরিমাণও কমে যায়। বহুগুণ বেড়ে যাবে সলিড মেটেরিয়াল বা আশের পরিমাণ।’

নতুন জাতের টমেটো চাষ করেছেন চিরিরবন্দর উপজেলার সুকদেবপুর গ্রামের কৃষক মো. নুরুল ইসলাম শাহ। সরজমিনে দেখা যায়, তিনি যে পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করেছেন এগুলো দেখতে মাঝারি আকারের। গাছে কাঁচা ও পাকা টমেটো ধরে আছে। সাধারণত টমেটোর বোঁটা নরম হয়ে যায়, কিন্তু এ গাছের টমেটোর বোঁটা যথেষ্ট শক্ত। অন্যান্য জাতের টমেটোতে পোকা আক্রমণ করে। তবে নতুন জাতের টমেটোতে পোকা কাটা বা আক্রমণের কোনো চিহ্ন নেই।

কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, জমিতে চাষকৃত বিভিন্ন জাতের টমেটো সবুজ বা অর্ধেক সবুজ এবং অর্ধেক লাল অবস্থায় তোলা হয়। পরে তা বাজারজাত করা হয়। নতুন জাতের টমেটো গাছেই পুরোপুরি লাল বর্ণ ধারণ করে।

গ্রীষ্ম প্রচণ্ড তাপমাত্রা এবং শীতের প্রকোপে প্রতি বছর টমেটো খেতে ব্যাপক হারে পোকার আক্রমণ হয়। গাছ এবং টমেটো রক্ষা করতে কৃষককে দিনে দুবার অধিকমাত্রায় ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। পোকার আক্রমণে অনেক গাছ মরে যায়। তবে নতুন জাতের টমেটো গাছে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। পোকা আক্রমণ করতে পারে না।

গবেষক দলের প্রধান ড. আজিজুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত টমেটো মানবশরীরের অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম। টমেটোর ভেতরে অধিক মাত্রায়  লাইকোপিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতি মানুষকে হিটস্ট্রোকসহ সব ধরনের স্ট্রেস থেকে সুরক্ষা করবে।’

ড. আজিজুল হক জানান, ২০১৮ সালে গবেষণা কাজ শুরু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে আধা লিটার থেকে ১ লিটার পানিতে ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে তা ২০০-২৫০টি টমেটো গাছে সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গবেষণা ফিল্ডে এ প্রক্রিয়ায় টমেটো উৎপাদনে প্রাথমিক সাফল্য আসে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ পদ্ধতি ক্রমাগতভাবে উন্নত করা হয়েছে। সে সঙ্গে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেসব প্রাকৃতিক এবং প্যাথলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলো সমাধান করা হয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফিল্ড থেকে পাশের নশিপুর গ্রামে ২০ শতক এবং সদর উপজেলায় ৩০ শতক জমিতে চাষ করা হয়। এছাড়া চিরিরবন্দর উপজেলার একজন কৃষকের ৫০ শতকসহ এক একর জমিতে চাষ করে সফলতা আসে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন